Friday 04 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেমন গেলো ঢাকাই ছবির গোটা বছর


২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:১৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরেকটি বছর; ২০২০। তাবৎ বিশ্বের সব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির মতো ঢাকাই বাংলা ছবির তথা ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির জন্য বছরটি ছিল অভিশপ্ত। করোনাভাইরাসের কারণে ছবি মুক্তি, নির্মাণ ছিল অস্বাভাবিকভাবে কম। ৭ মাস সিনেমা হল ও শুটিং বন্ধ থাকলেও বন্ধ ছিল না সিনেমার সংগঠনগুলোর দ্বন্দ্ব। এত কিছুর মাঝেও আশার আলো ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ। সবমিলিয়ে কেমন গেল সিনেমার ২০২০ তা নিয়ে এ আয়োজন।

 

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কম ছবি!

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ছবি মুক্তি পেয়েছিল মাত্র ৯টি। আর স্বাধীনতার পর প্রথম তিন বছর ছবি মুক্তির সংখ্যা ছিল ৩০টি করে। ১৯৭৫ সালে এ সংখ্যা হয় ৩৪। এরপর থেকে কোনো বছরই এ সংখ্যা চল্লিশের নিচে নামেনি। এমনকি আশির দশকের পর একবছরে সবচেয়ে কম মুক্তি পায় গত বছর, সেখানেও সংখ্যা ছিল ৪২টি।

বিজ্ঞাপন

প্রযোজক সমিতির তালিকা অনুযায়ী বছরের শুরুতে ১০ জানুয়ারি মুক্তি পায় ‘জয়নগরের জমিদার’। এরপর ২৪ জানুয়ারি মুক্তি পায় আমদানি করা ভারতীয় ছবি ‘হুল্লোর’, ৭ ফেব্রুয়ারি ‘গণ্ডি’, ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বীর’, ২১ ফেব্রুয়ারি আমদানি করা ভারতীয় বাংলা ছবি ‘রবিবার’ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘হৃদয় জুড়ে’। ৬ মার্চ মুক্তি পায় তিনটি ছবি—‘শাহেন শাহ’, ‘চল যাই’ ও ‘হলুদ বনি’।

১৮ মার্চ থেকে করোনা মহামারির কারণে দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৭ মাস বন্ধ থাকার পর ১৬ অক্টোবর থেকে আবার চালু হয় সিনেমা হল। ওই দিন মুক্তি পায় ‘সাহসী হিরো আলম’ ছবিটি। পরের সপ্তাহে ২৩ অক্টোবর মুক্তি পায় ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’।

‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’-এর প্রায় দেড় মাস পর ১১ ডিসেম্বর মুক্তি পায় ‘বিশ্বসুন্দরী’। প্রযোজক সমিতির তালিকায় নাম না থাকলেও ওইদিন মুক্তি পায় ‘রূপসা নদীর বাঁকে’। ১৮ ডিসেম্বর মুক্তি পায় দু’টি ছবি— ‘একজন মহান পিতা’ ও ‘সুবর্ণ রেখা’।

সমিতির তালিকা অনুযায়ী বছরের শেষ সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে ‘তুই আমার রাজা আমি তোর রাণী’ এবং ‘গোর’ ছবি দুটি।

আলোচিত আছে, ব্যবসাসফল নেই!

২০২০ সালে আলোচিত ছবি মাত্র ৪টি—‘গণ্ডি’, ‘বীর’, ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ও ‘বিশ্বসুন্দরী’। এ ছবিগুলো সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল। এর বাইরে অ্যাপে মুক্তি দেওয়া ‘নবাব এলএলবি’ও নানা কারণে আলোচনায় ছিল।

যেহেতু ‘ইন্ডাস্ট্রি’ শব্দটার সঙ্গে বাণিজ্য ব্যাপার এসে যায়, সেহেতু ব্যবসাসফল ছবি কয়টি—প্রশ্ন এসে যায়। ‘প্রদর্শক সমিতি’ ও ‘বুকিং এজেন্ট সমিতি’র দেওয়া তথ্য মতে, ছবিগুলো এ করোনাকালের আগে ও পরে দর্শকদের সিনেমা হলে নিতে পারলেও যে পরিমাণ অর্থ আয় করেছে তা বাজেটের পুরোটা তুলে আনতে ব্যর্থ।

ঈদে ছিল না ছবি

প্রযোজক সমিতির বিশেষ অনুমতি ব্যতীত প্রতি সপ্তাহে দুটির বেশি ছবি মুক্তি দেওয়া যায় না। দুই ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নিয়ে সিনেমা দর্শকদের মাঝে থাকে আলাদা ধরণের উন্মাদনা। কিন্তু এবার করোনার কারণে ১৮ মার্চ থেকে সিনেমা হল বন্ধ ছিল। ঈদে হল খুলে দেওয়ার দাবি উঠলেও তাতে সাড়া দেয়নি সরকার। ফলে ঈদে মুক্তি প্রতিক্ষিত ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘শান’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিগুলো থেকে বঞ্চিত হয় দর্শকরা।

সাত মাস বন্ধ ছিল সিনেমা হল

৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ করোনাভাইরাস শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকারি ঘোষণার পরদিন থেকে সব সিনেমা হলও বন্ধের ঘোষণা দেয় প্রযোজক সমিতি। পরবর্তীতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সাত মাস পর ১৬ অক্টোবর থেকে হলগুলো আবার খুলে দেওয়া হয়। তবে শর্ত ছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক সিট খালি রাখতে হবে। করোনা আতঙ্কের কারণে ঢাকার সিনেপ্লেক্সগুলো ব্যতীত দেশের অধিকাংশ হলে দর্শক আসেনি এবং অনেক হল সাত মাস পর পুনরায় খুলেইনি।

১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা

৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রণোদনা চেয়ে চিঠি দেয় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। ১৫ জুলাই চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন মিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সহায়তাসহ চার দফা প্রস্তাব দেয় । এসব বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করে সমিতিগুলো। সবার দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৪ অক্টোবর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ১ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা দেন। এ টাকা স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে সিনেমা হল নির্মাণ, সংস্কার ও পুনরায় চালুর জন্য।

রেকর্ডসংখ্যক ছবিকে সরকারি অনুদান

২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়েছে ১৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্যসহ ২৫টি সিনেমাকে। যা আগের বছরগুলোর তুলনায় রেকর্ড। এ সংখ্যা অন্যান্য বছর ছিলো অনধিক ১০। করোনাভাইরাসের কারণে চলচ্চিত্র শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় নীতিমালা অনুযায়ী বিশেষ বিবেচনায় এবার অধিক সংখ্যক ছবিকে অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।

বিতর্কিত বক্তব্যে সমালোচিত অনন্ত জলিল

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারীদের ধর্ষণের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। এ নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন আলোচিত নায়ক, প্রযোজক অনন্ত জলিল। তিনি ভিডিও বার্তায় ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করেন অন্যতম কারণ হিসেবে। তার এ বক্তব্য প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ডাক দেওয়া হয় তাকে বয়কটের। তুমুল সমালোচনার মুখে ১০ অক্টোবর প্রকাশিত সে বক্তব্য ১১ অক্টোবর প্রত্যাহার করে নিয়ে নতুন ভিডিও আপলোড করতে বাধ্য হন অনন্ত।

এছাড়া তিনি ইউটিউব তারকা হিরো আলমকে নিয়ে ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ঘোষণা ফিরেয়ে নেন। কারণ হিসেবে বলেন, হিরো আলমের ‘জায়েদ খানকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য’ দেওয়া পছন্দ না হওয়া। জবাবে আলম ছবির সাইনিং বাবদ নেওয়া ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেন।

জায়েদ খান-প্রযোজক সমিতির দ্বন্দ্ব

১৫ জুলাই চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠন সম্মলিতভাবে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে জানায় যে শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর তারও তিন মাস আগে থেকে নিষিদ্ধ। কারণ হিসেবে ১৮ সংগঠন বলেন, ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালা কমিটি’ প্রণীত নীতিমালার সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছেন জায়েদ খান। এছাড়া জায়েদ বিভিন্ন শিল্পী-কুশলীকে নানাভাবে হয়রানি ও মিথ্যা মামলা দিয়েছেন এবং নানাভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন’। একই সঙ্গে জানানো হয়, ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে এফডিসিতে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বাজেটের সঠিক হিসেব দেননি জায়েদ।

ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রযোজক সমিতি জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিল করে। জায়েদ এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। তিনি জানান, বর্তমান কমিটির তিনজন সদস্যের নির্বাচনের ব্যাপারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা ছিল। তারা তা লুকিয়ে নির্বাচন করেছে। তাই এ কমিটি অবৈধ।

জায়েদ খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬ নভেম্বর মন্ত্রণালয় প্রযোজক সমিতির বর্তমান কমিটি বাতিল করে এবং একজন উপসচিবকে প্রশাসক হিসেবে বসায়। অবশ্য পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কমিটি বহাল হয়।

ওটিটিতে সিনেমা

করোনাকালে দেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের প্রসার ঘটেছে। আগের তুলনায় মানুষ অ্যাপভিত্তিক সিরিজ, সিনেমা বেশি দেখেছে। তবে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ‘নবাব এলএলবি’র সিনেমা হলে মুক্তি না দিয়ে সরাসরি অ্যাপে মুক্তির ঘটনা। এর বাইরে শিহাব শাহীন, রায়হান রাফিসহ অনেকেই অ্যাপের জন্য সিনেমা বানিয়েছেন। যেগুলো মুক্তির অপেক্ষায়।

অনন্য মামুনের গ্রেফতার

‘নবাব এলএলবি’তে পুলিশকে হেয় করা ও ভুলভাবে উপস্থাপনের দায়ে ছবিটির পরিচালক অনন্য মামুনকে ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাকে এবং ওই ছবির অভিনেতা শাহীন মৃধাকে পুলিশের করা পর্ণোগ্রাফির মামলায় কারাগারে পাঠান আদালত।

টপ নিউজ ঢাকাই ছবির গোটা বছর ঢালিউড সালতামামি ২০২০