Thursday 28 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাভাইরাসে ‘প্রাণ যায় যায়’ ঢাকাই চলচ্চিত্রের


২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৩১

এই সময়ে দেশের শিল্প-সংস্কৃতির সবচেয়ে ‘অবহেলিত’ শাখাটি হলো চলচ্চিত্র। প্রায় দুই দশক ধরে ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকলেও ২০২০ সালে এসে করোনাভাইরাসের আঘাত যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কম সংখ্যক চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে এ বছর।

আগের বছরে চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ খেলা, নির্বাচনি ঘনঘটা, ছবির সংখ্যা অস্বাভাবিক কমে যাওয়া ইত্যাদি দিয়ে শেষ হয়েছিল ২০১৯ সাল। সবাই বুকে আশা বেঁধে ছিলেন ২০২০ নিয়ে। ভেবেছিলেন অভাগা সন্তানটির এবার ভাগ্য ফিরবে। কিন্তু কথায় আছে না—‘অভাগা যেদিকে তাকায় সেদিকে সাগর শুকিয়ে যায়’। এ দেশের সিনেমারও একই অবস্থা হয়েছে ২০২০ সালে এসে, প্রাণ যায় যায় অবস্থা। নিঃশ্বাসটুকু টিকে আছে, এই যা!

বিজ্ঞাপন

অনেকে হয়তো বলবেন এমন মুমূর্ষু অবস্থার জন্য ‘করোনাভাইরাস’ নামের হঠাৎ আসা এক ভয়াবহ ঝড় দায়ী। কিন্তু আদৌ কি ঝড় আসার আগের অবস্থা খুব ভালো ছিল? কোন খরা ছিল না ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে?

১২ শ থেকে ৩ শ সিনেমা হলের গল্প সচেতন মানুষ মাত্রই জানা। সে সিনেমা হল সংখ্যা বছরের শুরুতে চালু ছিল মাত্র ৭০! অফিসিয়ালি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। আর সিনেমা হল বন্ধ হয় ১৮ মার্চ। তার আগ পর্যন্ত ছবি মুক্তির সংখ্যা কত জানেন? মাত্র ৯, ৬ মার্চ পর্যন্ত! এ হিসেব বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির। এ ৯ এর বাইরে মুক্তি পেয়েছিল ‘কাঠবিড়ালি’।

বছরের প্রথম আড়াই মাসে শুক্রবার ছিল ১০টি। প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে দুটি করে ছবি মুক্তি দেওয়ার কথা। সে হিসেবে ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা ২০টি। ‘কাঠবিড়ালি’ যেহেতু সমিতির হিসেবে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল, সে হিসেবে ১০ সপ্তাহে ৯টি ছবি! এ চিত্রকে কি দিয়ে ডিফেন্ড করবেন আমাদের চলচ্চিত্রের কর্তাব্যক্তিরা।

বিজ্ঞাপন

করোনার কারণে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। সরকারের এ ঘোষণার পরপরই প্রযোজক সমিতি সিনেমা হল বন্ধের ঘোষণা দেয়। ১৮ মার্চ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৭ মাস বন্ধ থাকে সকল সিনেমা হল।

এ জায়গায়ও চলচ্চিত্রের কর্তাব্যক্তিদের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে দেখা যায়। সরকার ৩১ মে থেকে লকডাউন ও সাধারণ ছুটি তুলে নেয়। একই সঙ্গে সীমিত পরিসরে অফিস খোলার অনুমতি দেয়। তখন থেকে সাধারণ প্রযোজক ও হল মালিকরা সিনেমা হল খোলার জন্য প্রযোজক সমিতিকে বললেও এর নেতারা তা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

তবে প্রশংসনীয় কাজও করেছে চলচ্চিত্রের সমিতিগুলো। করোনাকালে সাধারণ শিল্পী ও কুশলীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পী সমিতি।

করোনাকাল শেষ কীভাবে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে চলবে, তা নিয়ে একের পর এক অনলাইনে সভা করেছে টেলিভিশনের সংগঠনগুলো। এরকম কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি সিনেমার সংগঠনগুলোর মধ্যে। এর মাঝে তারা দুর্নীতি ও ‘চলচ্চিত্র পরিবারে’র সিদ্ধান্ত অমান্যের দায়ে জায়েদ খান ও মিশা সওদাগরকে নিষিদ্ধ করে।

তবে লকডাউন তুলে দিলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতি বেশ কয়েকবার মিটিং করে। সম্মিলতভাবে ১৮ সংগঠন ১৫ জুলাই ৪ দফা দাবি পেশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তারও আগে ১০ মে প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পেশ করেছিল পরিচালক সমিতি। সবকিছু মিলিয়ে সরকারের তরফ থেকে হল সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা আসে।

সবাই যখন প্রণোদনা পেয়ে কীভাবে এ অর্থ কাজে লাগানো যাবে তা নিয়ে জল্পনায় ব্যস্ত, তখন জায়েদ খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬ নভেম্বর প্রযোজক সমিতির বর্তমান কমিটি বাতিলের ঘোষণা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে। যদিও পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে কমিটি পুনর্বহাল হয়েছে, তবুও এ অঙ্গনের সমিতিগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব পুনরায় স্পষ্ট হয়।

১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খুলে দেওয়ার পর হিরো আলম প্রযোজিত ও অভিনীত ‘সাহসী হিরো আলম’ মুক্তি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম হয়। পরের সপ্তাহে ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ দিয়ে এ সমালোচনা কিছুটা থামে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের সীমিত পরিসরে সিনেমা হল খোলার ঘোষণায় অনেক মালিকই তাদের হল খুলেননি। সবমিলিয়ে বছর শেষে প্রযোজক সমিতির হিসেবে ছবি মুক্তির সংখ্যা ১৬! যা স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কম।

এত এত হতাশার মাঝেও মানুষ আশায়। ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির সংশ্লিষ্টরা হয়ত ২০২১ সালে কর্মঠ ও বুদ্ধিমান সন্তানের মতো নিজের ভাগ্য নিজেই ফেরাবে কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে—সে আশা করা নিশ্চয় দুরাশা হবে না।

করোনাভাইরাস ঢাকাই চলচ্চিত্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর