‘অভিশপ্ত’ বছরে হারালাম যাদের
৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৫০
করোনার কারণে এ বছরটিকে অনেকেই আখ্যা দিয়েছেন অভিশপ্ত বছর নামে। এ বছর করোনার কারণে বিনোদন অঙ্গনের অনেকেই মারা গিয়েছেন। এর বাইরেও অনেকে চলে গেছেন। সব মিলিয়ে বছরটায় একটু বেশিসংখ্যক গুণীজন হারিয়েছে বিনোদন জগত। বছরশেষে দেখে নেই এই বছরে আমরা কোন কোন গুণীজনদের হারিয়েছি-
মঞ্চ অভিনেত্রী ইশরাত নিশাত
বাংলাদেশের থিয়েটার অঙ্গনের পরিচিত মুখ ছিলেন ইশরাত নিশাত। ১৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় গুলশানে বোনের বাসায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। প্রয়াত অভিনেত্রী নাজমা আনোয়ারের মেয়ে ইশরাত নিশাত ঢাকার মঞ্চ নাট্যাঙ্গনে ‘বিদ্রোহী কণ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
চলচ্চিত্র প্রযোজক কে এম জাহাঙ্গীর খান
‘নয়নমণি’, ‘শুভদা’, ‘কি যে করি’, ‘সওদাগর’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘আলিঙ্গন’, ‘তুফান’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘আলী বাবা ৪০ চোর’সহ আরও অনেক জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল সিনেমার প্রযোজক ছিলেন এ কে এম জাহাঙ্গীর খান। ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর পৌনে ১২টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সুরকার সেলিম আশরাফ
‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা…’—এই গানসহ অনেক জনপ্রিয় গানের সুরকার ছিলেন সেলিম আশরাফ। ২ মার্চ রাত তিনটায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, রক্ত ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তার ডায়ালাইসিস করাতে হতো। সবশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
চলচ্চিত্র পরিচালক মহিউদ্দিন ফারুক
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পনির্দেশক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও শিক্ষক মহিউদ্দিন ফারুক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ১৭ এপ্রিল দুপুরে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে তিনি নিজে থেকেই পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা থাকতেন। ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতেন। কিন্তু ১৭ এপ্রিল দুপুরে তাকে নিজ কক্ষে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিনেত্রী ফেরদৌসি আহমেদ লীনা
দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন একসময়ের সুপরিচিত অভিনেত্রী ফেরদৌসী আহমেদ লীনা। তার কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ডায়ালাইসিস চলত। অবশেষে ১৮ এপ্রিল মধ্যরাতে সব রোগ-ভোগের ঊর্ধ্বে চলে যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
চিত্রনায়িকা জবা চৌধুরী
১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জিঘাংসা’ ছবিতে অভিনয় করেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন জবা চৌধুরী। কিন্তু এ ছবির পর দ্বিতীয় ছবিতে আর দেখা যায়নি তাকে। ৪৫ বছর ধরে তাকে খুজে পায়নি সিনেপ্রেমীরা। ৩ মে তার মৃত্যুর খবরে জানা যায়, এতোদিন কোথায় ছিলেন।
সুরকার আজাদ রহমান
‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’, ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি’সহ বহু গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আজাদ রহমান। কোনোটির সুরকার তিনি, কোনোটির সংগীত পরিচালক। তিনি ১৬ মে বিকালে রাজধানী শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।
সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর
নিজের শহর রাজশাহীতে একটি ক্লিনিকে ৬ জুলাই সন্ধ্যা সাতটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এন্ড্রু কিশোর। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কণ্ঠশিল্পী দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে আসছিলেন। টানা ৯ মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়ে গত ১১ জুন তিনি একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছিলেন।
অভিনেতা আব্দুস সাত্তার
৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার সময় অভিনেতা সাত্তারের মৃত্যু হয়। ‘রঙিন রূপবান’ সিনেমায় অভিনয় করে সবার মন জয় করেছিলেন তিনি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে তিনবার তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।
সুরকার আলাউদ্দিন আলী
অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার আলাউদ্দীন আলী ৯ আগস্ট বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে মারা যান। তিনি ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। প্রথমে ২০১৫ সালের ৩ জুলাই তাকে ব্যাংকক নেওয়া হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায়, তার ফুসফুসে একটি টিউমার রয়েছে। এরপর তার অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসাও চলছিল। এর আগে বেশ কয়েক দফায় তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। বাংলাদেশ ও ব্যাংককে তার চিকিৎসা হয়েছে। সাভারে সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব প্যারালাইজড কেন্দ্রেও চিকিৎসা নিয়েছেন দীর্ঘদিন।
অভিনেতা কে এস ফিরোজ
৯ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কে এস ফিরোজ। নিউমোনিয়ায় তার ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছিল।
অভিনেতা সাদেক বাচ্চু
১৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৬৬ বছর বয়সী এ অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১৩ সালে তার হৃদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচারও করাতে হয়েছিল। ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিনেতা সাদেক বাচ্চুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনার উপসর্গ থাকায় চিকিৎসকদের পরামর্শে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায় সাদেক বাচ্চু কোভিড-১৯ পজিটিভ।
অভিনেতা আলী যাকের
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের ২৭ নভেম্বর সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । তার বয়স ছিল ৭৬ বছর। বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন আলী যাকের। সেই চিকিৎসার অংশ হিসেবে নিয়মিত থেরাপি চলছিল তার। তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন।
নাট্যকার মান্নান হীরা
বাসায় অসুস্থতা অনুভব করলে তাকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয় নাট্যকার মান্নান হীরাকে। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই ২৩ ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অভিনেতা সেলিম আহমেদ
২৩ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় মারা যান অভিনেতা, শিল্পনির্দেশক ও প্রচ্ছদশিল্পী সেলিম আহমেদ। ১৭ ডিসেম্বর হঠাৎ বুকে ব্যথা শুরু হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
অভিনেতা আবদুল কাদের
২৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা আবদুল কাদের। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। অসুস্থতার কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে নেওয়া হয় তাকে। সেখানকার হাসপাতালে পরীক্ষার পর ১৫ ডিসেম্বর তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তার অবস্থা সংকটাপন্ন, ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে না। পরে তাকে ঢাকায় আনা হয়। ২১ ডিসেম্বর তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
আজাদ রহমান আবদুল কাদের আব্দুস সাত্তার আলাউদ্দিন আলী আলী যাকের ইশরাত নিশাত এন্ড্রু কিশোর কে এম জাহাঙ্গীর খান কে এস ফিরোজ জবা চৌধুরী ফেরদৌসি আহমেদ লীনা মহিউদ্দিন ফারুক সাদেক বাচ্চু সেলিম আশরাফ