করোনাকালে জমজমাট বলিউড ওয়েব সিরিজ
৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:১৮
আর মাত্র কিছুটা সময়। এরপর বিদায় নেবে ২০২০ সাল। নতুন বছর ২০২১ সালকে নিয়ে এখন সকলের আশা–ভরসা নির্ভর করছে। ২০২০ সাল আসার পর থেকেই বছরটা কারোর পক্ষেই ভালো ছিল না। এ বছরই করোনা মহামারি মানুষের সুস্থ–স্বাভাবিক জীবনকে ছন্দহীন করে দেয়। কোভিড-১৯’র কালো থাবায় যখন সারাবিশ্ব লড়াই করছে, তখন একের পর এক নক্ষত্রপতন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষেরা একটা ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আরেকটি ধাক্কা এসে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে সবকিছু। বলিউডের সিনেপাড়া যেন তারই সাক্ষাৎ প্রতিফলন। কিন্তু এরমধ্যেও সুবাতাস বয়ে গেছে একটা ক্ষেত্রেই। সেটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম।
বিনোদন জগতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের প্রভাব বেশি করে পড়েছে বিগত কয়েক বছর ধরেও। তারমধ্যে ২০২০ সালে আসে করোনার প্রভাব। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সহ সমস্ত ক্ষেত্রেই ছন্দপতন। সিনেমা হল হাউসফুল করে বিনোদন নেওয়া তো আরই নয়। বন্ধ হয় সিনেমা হলে সিনেমা দেখা। স্বাভাবিক ভাবেই সব কার্যক্ষেত্রের মতোই অনলাইন হয়ে দাঁড়ায় সিনেমা দেখা ও বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। আর সেখানেই ওয়েব সিরিজ বিশাল জায়গা করে নেয়। এখনও হল খুললেও মানুষ তেমন ভাবে সিনেমা দেখছেন না। তাই আড়ায় ঘণ্টার ছবিও মানুষ দেখতে চাইছেন বাড়িতে বসে। বড় প্রোডাকশনের বড় বাজেটের ছবিও তাই ওটিটি’র শরণাপন্ন হচ্ছে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক প্রায় দীর্ঘ এই অন্ধকারময় বছরেও সবচেয়ে চর্চিত বলিউডের ওয়েব সিরিজগুলি কোনগুলি—
- পাতাল লোক
পাতাল লোকে গল্প হল এক পুলিশ অফিসার হাথিরাম চৌধুরির, যিনি এক জনপ্রিয় সাংবাদিক খুনে অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছেন। তদন্ত করতে গিয়ে হাথিরাম উপলব্ধি করেন যে, এই মামলায় যা তিনি দেখছেন, তার চেয়েও বেশিকিছু যুক্ত রয়েছে। এই শোয়ের প্রযোজক বলিউড অভিনেত্রী আনুষ্কা শর্মা, যিনি এই ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শক ও সিনেমা সমালোচকদের কাছ থেকে প্রচুর প্রশংসা পেয়েছেন।
- স্ক্যাম ১৯৯২
জাতীয় পুরষ্কারজয়ী পরিচালক হানসাল মেহতা পরিচালিত এই সিরিজটি, সাংবাদিক দেবাশীষ বসু ও সুচেতা দালালের লেখা বই ‘দ্য স্ক্যাম’ অবলম্বনে তৈরি। আশি থেকে নব্বই দশকের মুম্বাইতে একজন শেয়ারের দালাল হার্সাদ মেহতা কিভাবে স্টক মার্কেটকে উচ্চতার শিখর থেকে তলানিতে এনে দাঁড় করায়, তা নিয়েই মূল গল্প। সাধারণভাবে আর্থিক অনিয়মের ভিত্তিতে তৈরি প্রকল্পের সঙ্গে অভ্যস্ত নয় মানুষ। তাই সিরিজের প্রথম এপিসোডেই চমকে গেছেন দর্শকেরা। হার্সাদের চরিত্রে প্রতীক গান্ধী যথেষ্ট সাবলীল। এছাড়াও রয়েছেন এক ঝাঁক গুণী শিল্পীরা এবং দুর্দান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।
- পঞ্চায়েত
গ্রামীণ ভারতবর্ষের ছবি একাধিকবার বড়পর্দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বহু পরিচালক। কিন্তু সাদামাটা বিষয়টি নিয়ে ইন্টারেস্টিং একটা সিরিজ বানানো বেশ কঠিন। তবে সিদ্ধহস্তেই তা করে দেখিয়েছেন পরিচালক দীপক কুমার মিশ্র। শহুরে সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও অজ পাড়া-গাঁয়ে কিভাবে জীবনকে সেলিব্রেট করা যায়, সেই ফ্লেভারই আর পাঁচটা কাহিনি থেকে পৃথক করেছে ‘পঞ্চায়েত’কে। পিছিয়ে পড়া গ্রামের নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তা সমাধানের যে অভিনব পথ দেখিয়েছেন, তা দেখতে দারুণ মজা লাগে। দুশ্চিন্তা দূরে ঠেলে দর্শককে মাটির কাছাকাছি এনে দেন পঞ্চায়েত।
- অসুর
সত্য, ত্রেতা, দাপড় ও কলি। পুরান ও হিন্দু শাস্ত্রমতে কলি যুগের আগমন সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র ভরে উঠবে হিংসা আর অপরাধে। আর কলির অবতার হিসেবে আবির্ভূত হবে বিষাক্ত কোনও ছায়ামূর্তির। কিংবা এই সমাজেরই কোনও চেনা মুখের আড়ালে লুকিয়ে সেই অসুর! কলিকালকে সার্থক করে তোলাই যার লক্ষ্য। এই অদ্ভুত অথচ অত্যন্ত আকর্ষণীয় চিত্রনাট্য নিয়েই তৈরি অনি সেনের ‘অসুর’। যার প্রতিটা পর্বে টানটান উত্তেজনা। গল্প বলার ধরন, লোকেশনের চয়েজ, সবই ওয়েব সিরিজকে আরও অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেছে। যদিও প্রথম সিজনের শেষটা আরও খানিকটা মজবুত হতেই পারত।
- বান্দিস ব্যান্ডিটস
প্রথমের দিকে খুব ধীরে গল্প এগোলেও দর্শকদের বোর হওয়ার অবকাশ নেই বিন্দুমাত্র। রোমান্টিক ড্রামাধর্মী এই সিরিজের পরিচালনা করেছেন আনন্দ তিওয়ারি। ধ্রুপদী গানের ছাত্র রাধে এবং পপ গায়িকা তামান্না দুই বিপরীত মেরুর মানুষ হয়েও কিভাবে তারা এক রাস্তায় হাঁটে তা নিয়েই গল্প। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋত্বিক ভৌমিক ও শ্রেয়া চৌধুরী। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে রয়েছেন নাসিরুদ্দিন শাহ। যেহেতু গানই সিরিজের মূল বিষয়বস্তু তাই বলাই বাহুল্য ভাল সঙ্গীত পরিচালনা হওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দায়িত্বভার সামলেছেন শংকর-এহেসান- লয়।
- আরিয়া
আরিয়া ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে সুস্মিতা সেনকে ফের অভিনয় জগতে ফিরে আসতে দেখা গিয়েছে। এটা তার ডিজিটাল মাধ্যমে প্রথম ছবিও বলা চলে। এই ওয়েব সিরিজে সুস্মিতা দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছেন। সুস্মিতা তথা আরিয়ার স্বামীকে কোনও এক মুখোশধারী ব্যক্তি খুন করে। এরপর সুস্মিতা তার স্বামীর মাদক সাম্রাজ্য সামলানোর পাশাপাশি ন্যায়ের পক্ষে বিচারও পেয়ে যান।
- স্পেশ্যাল অপস্
ইনটেলিজেন্স এজেন্সির জঙ্গি দমন মিশন। আপাত দৃষ্টিতে টপিকটি অত্যন্ত চেনা। আর সেখানেই ছিল পরিচালক নীরাজ পাণ্ডের আসল চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসবাদের রিয়েল আর রিল প্রেক্ষাপটকে অসাধারণভাবে জুড়ে দিয়েই বাজিমাত করেছেন তিনি। একাধিক সন্ত্রাসবাদের মাস্টার মাইন্ডের পিছনে ধাওয়া করেছে একটা টিম। বিদেশ-বিভুঁই ঘুরে চলছে জঙ্গিকে শনাক্ত করার কঠিন কাজ। শুধু গায়ের জোরে নয়, চতুর মস্তিষ্কের সঙ্গে লড়তে প্রয়োজন মগজাস্ত্র। স্পেশ্যাল অপসে রয়েছে তারই পারফেক্ট ব্যালেন্স। অকারণ অতিরিক্ত অ্যাকশন কিংবা মেলোড্রামার কোনও জায়গা নেই এখানে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গোটা সিরিজটা দেখে নিতে ইচ্ছে করবে।
- আশ্রম
প্রকাশ ঝা পরিচালিত এই ক্রাইম ড্রামা সিরিজটি দেখার সময় অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে দেখা প্রয়োজন। সমস্ত চরিত্রগুলি বোনার পিছনে রয়েছে গভীর চিন্তা-ভাবনা। কাশীপুরের ‘বাবা নিরালা’-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববি দেওল। ‘আশ্রম’-র প্রথম সিজনের সাফল্যের পর গত নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় সিজনও স্ট্রিমিং হচ্ছে। এখানে ববি ছাড়াও রয়েছেন চন্দন রায় কাপুর, অদিতি পোহানকার, ত্রিধা চৌধুরী-সহ আরো অনেকে।
- মির্জাপুর ১ ও ২
গত বছর সর্বাধিক প্রশংসিত ও জনপ্রিয় মির্জাপুরের সিক্যুয়েল মির্জাপুর ২ অক্টোবরে মুক্তি পায়। এই সিক্যুয়েলে অনুসরণ করা হয়েছে গুড্ডু (আলি ফজল) ও গোলুর (শ্বেতা ত্রিপাঠি) অশান্তময় জীবনকে। মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি।
- ব্রেদ ইনটু দ্য শ্যাডোস
অভিষেক বচ্চন অভিনীত সাইকোলজিকাল ক্রাইম থ্রিলার ‘ব্রেদ ইনটু দ্য শ্যাডোস’ মুক্তি পেয়েছে এই বছরই। সিরিজটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মায়াঙ্ক শর্মা। একজন বাবা তার পরিবারকে বাঁচাতে কতদূর যেতে পারেন সেটাই ফুটে উঠেছে এই সিরিজে। জুনিয়র বচ্চন তার চরিত্রে যথেষ্ট সাবলীল। অন্যদিকে ইন্সপেক্টর কবীর সাওয়ান্তের চরিত্রে অমিত সাধও দর্শকদের যথেষ্ট মন জিতেছেন। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন নিত্য মেনন।
অসুর আরিয়া আশ্রম করোনাকালে জমজমাট বলিউড ওয়েব সিরিজ পঞ্চায়েত পাতাল লোক বলিউড ওয়েব সিরিজ বলিউড সালতামামি ২০২০ বান্দিস ব্যান্ডিটস ব্রেদ ইনটু দ্য শ্যাডোস মির্জাপুর ১ ও ২ সালতাতামি ২০২০ স্ক্যাম ১৯৯২ স্পেশ্যাল অপস্