Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চির অম্লান সুমিতা দেবী


৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৩৮

ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে হেনা ভট্টাচার্য, বিয়ে হয় অমূল্য লাহেড়ীর সঙ্গে। কিন্তু এই বিয়ে সুখের হয়নি। স্বামী ভারতে চলে যান। ভাগ্যের চাকা ঘুরে এলেন চলচ্চিত্রপাড়ায়। ফতেহ লোহানী ‘আসিয়া’য় চুক্তিবদ্ধ করান। নাম দেন সুমিতা দেবী।

‘আসিয়া’ প্রথম চুক্তিবদ্ধ ছবি হলেও প্রথমে মুক্তি পেয়েছিল ‘এ দেশ তোমার আমার’। আর ১৯৬০ সালে যখন ‘আসিয়া’ মুক্তি পায় ততদিনে মুক্তি পায় ‘আকাশ আর মাটি’ ও ‘মাটির পাহাড়’ ছবি দুটি।

বিজ্ঞাপন

এফডিসির সোনালী সময়ে নির্মিত ছবি ‘আসিয়া’। সমালোচক মহলে প্রশংসিত ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে ‘প্রেসিডেন্ট পদক’ পেয়েছিল। পান ‘ফার্স্ট লেডি’ খেতাব। বদলে যায় সুমিতা দেবীর ক্যারিয়ার।

একের পর এক বাংলা ও উর্দু ভাষার ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন। ‘কাঁচের দেয়াল’—এ উপহার দিয়েছেন ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয়। আর্ন্তজাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিটিতে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলেন ওনার অভিনয়।

এ দেশের প্রথম রঙ্গিন ছবি জহির রায়হানের ‘সঙ্গম’ থেকে ‘সোনার কাজল’, ‘বেহুলা’তে তার উপস্থিতি আজো মনে রাখার মত।

১৯৬৭ সালে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবির মাধ্যমে। এরপর আরও কিছু ছবি প্রযোজনা করেন।

নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার দীর্ঘ না হলেও এই দেশের নায়িকাদের অগ্রপথিক হিসেবে তিনি বিশেষভাবে সম্মানিত। ‘ওরা ১১ জন’, ‘সুজন সখী’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’সহ অনেক ছবিতেই ছিলেন পার্শ্ব চরিত্রে।

১৯৬১ সাল। অভিনয়ের ক্যারিয়ার, ব্যক্তিজীবন— দুটাতেই গুরত্বপূর্ণ বছর ছিল তার। জহির রায়হানের ‘কখনো আসেনি’—যা বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা ছবি হিসেবে স্বীকৃত। যুগের চেয়ে আধুনিক ধারার এ ছবি সব সময়ের দর্শকদের পছন্দের ছবি। একই বছরে বিয়ে করেন জহির রায়হানকে। ধর্মান্তরিত হয়ে নাম হয় নীলুফার বেগম। তবে চলচ্চিত্রের নাম ‘সুমিতা দেবী’ পরিবর্তন করেননি।

বিজ্ঞাপন

সুমিতা দেবীর বিয়ে ভাগ্য সুখের হয়নি। জহির রায়হান বিয়ে করেন সুচন্দাকে। সুমিতা দেবী এসবের কিছুই জানতেন না। যখন জানলেন তখন জহির রায়হানের বাড়িতে তড়িঘড়ি করে এসেছিলেন কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। ততদিনে কোল আলো করে এসেছে দুই সন্তান বিপুল আর অনল সঙ্গে প্রথম সংসারের সন্তান কল্লোল।

স্বামীর ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে পড়েছিলেন অথৈ জলে। তবুও সামলিয়েছেন নিজেকে, নায়িকার ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে পার্শ্ব চরিত্র নিতে হয়েছিল সিনেমাতে। কিছু বছর বাদে এসেছিল মুক্তিযুদ্ধ, নিজেকে জড়িয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক হিসেবে কলকাতায় নানান কার্যক্রমে যুক্ত থেকেছেন।

স্বাধীনতার পর এফডিসিতে  মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন। নায়ক সোহেল রানা, নূতনদের সিনেমায় এনেছেন তিনি।

২০০৪ সালের ৬ই জানুয়ারি দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে জীবনাবসান ঘটে এই কিংবদন্তির। বেঁচে থাকতে পান নি রাষ্ট্রীয় সম্মান,পাননি মরনোত্তর সম্মাননা। নায়িকাদের অগ্রপথিককে আজও দেয়া হয়নি একুশে পদক। যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন, নতুন প্রজন্মদের কাছে তিনি এখন অচেনা। সুমিতা দেবীর মূল্যায়ন করতে হবে দর্শকদেরই। তাকে যারা চিনেন জানেন তাদের কে এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে।

সুমিতা দেবী চির অম্লান হয়ে থাকুক…. দর্শকদের মনে।

জহির রায়হান সুমিতা দেবী

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর