বৈভব থেকে অভাব, সহজাত ক্ষমতায় সাফল্যের চূড়ায় ফারহা খান
৯ জানুয়ারি ২০২১ ২১:১৪
ফারাহ খান- একাধারে যিনি একজন নৃত্য পরিকল্পনাকারী, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেত্রী ও টেলিভিশন উপস্থাপক। বলা যায় যে মাধ্যমেই হাত দিয়েছেন, তাতেই তিনি সফলতা পেয়েছেন। কিন্তু শুরুতে তার এই চলার একেবারেই মসৃণ ছিলনা। বৈভব থেকে অভাবে আশ্রয়হীন হয়ে দিন কেটেছে তার।
ফারহা খানের বাবা কামরান খান ছিলেন স্টান্টম্যান থেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক। সফল কেরিয়ারের পাশাপাশি স্ত্রী মেনকা এবং দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে তার ভরপুর সংসার। কিন্তু আচমকাই নেমে গেল তার কেরিয়ারগ্রাফ। একের পর এক ছবি ফ্লপ। সংসারের অনটন চরমে উঠল ‘অ্যায়সা ভি হোথা হ্যায়’ ছবির সময়ে। এই ছবিতে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়ে যান কামরান খান। শেষে অনটন থেকে চরমে ওঠে দাম্পত্য অশান্তি। মেয়ে ফারহা এবং ছেলে সাজিদকে নিয়ে স্বামীকে ছেলে চলে গেলেন মেনকা। তখন ফারহার বয়স মাত্র ১১ বছর।
দুই সন্তানকে নিয়ে তখন মেনকা কার্যত কপর্দকশূন্য। ঘুরে ঘুরে দিন কাটে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। অথচ, তাদেরই এক সময় অবস্থা এত ভাল ছিল, সাহায্য চাইতেন আত্মীয় পরিজনরা। ফারহা ও সাজিদের মা মেনকা ছিলেন হানি ও ডেইজি ইরানির বোন। হানি ইরানি ছিলেন জাভেদ আখতারের প্রথম পক্ষের স্ত্রী। তাদের বিয়ের পরে এই দম্পতির থাকার জন্য একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন ফারহা-র বাবা কামরান খান। অথচ তার পরিবারই এক সময় অভাবের জেরে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।
ফারহা-র জীবনের গতি পাল্টে যায় কলেজে পৌঁছে। পড়তেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। কিন্তু নির্দিষ্ট উপস্থিতি না থাকায় কলেজ থেকে নাম বাদ যায় তার। পরে তিনি স্নাতক হন করেসপন্ডেন্স কোর্সে।
পড়াশোনাকে ছাপিয়ে তখন ফারহা-র মন দখল করেছে নাচ। সে সময় মুক্তি পেয়েছিল মাইকেল জ্যাকসনের ‘থ্রিলার’। এই ভিডিও দেখার পর ফারহা ঠিক করে নেন তার কেরিয়ার হবে নাচ ঘিরেই।
কোনও দিন প্রথাগত নাচের প্রশিক্ষণ নেননি তিনি। সহজাত ক্ষমতায় ভিডিও দেখে নাচের ভঙ্গি অবিকল তুলে নিতেন। কিছু দিন পরে একটি নাচের দল শুরু করলেন তিনি।
হিন্দি ছবিতে কোরিয়োগ্রাফির সুযোগ এসেছিল কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই। মনমালিন্যের কারনে ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’-এর ইউনিট ছেড়ে বেরিয়ে যান বলিউডের অন্যতম সেরা কোরিওগ্রাফার সরোজ খান। সেই সুযোগ পৌঁছে যায় ফারহা খানের কাছে। আর এই প্রথম সুযোগকেই কাজে লাগান ফারহা। তার কাজ নজর কাড়ে পরিচালক প্রযোজকদের।
এরপর ‘কভি হাঁ কভি না’-র সেটে তার সঙ্গে আলাপ হয় বলিউড কিং শাহরুখ খানের। ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা মজবুত করতে ফারহাকে সাহায্য করেছিলেন শাহরুখ।
‘১৯৪২ এ লাভ স্টোরি’, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’, ‘ভিরাসত’, বর্ডার’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘ডুপ্লিকেট’, ‘দিল সে’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়, ‘পুকার’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘কোই মিল গ্যয়া’, ‘কাল হো না হো’, ‘চলতে চলতে’, ‘ওম শান্তি ওম’, ‘ওয়েলকাম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘দাবাং’, ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘ম্যাঁয় হুঁ না’-সহ একের পর এক ছবিতে নিজের সেরাটুকু উজাড় করে দেন ফারহা। ৮০টিরও বেশি হিট ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি এই কোরিওগ্রাফারের ঝুলিতে রয়েছে ৬টি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড।
ফারহা-র কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শাকিরার মতো আন্তর্জাতিক তারকাও। পাশাপাশি প্রযোজনা ও পরিচালনাতেও ফারহা উল্লেখযোগ্য নাম বলিউডের। তার হাত ধরেই ‘ওম শান্তি ওম’ ছবি দিয়ে বলিউডে পা রাখেন দীপিকা পাড়ুকোন।
ছোট পর্দাতেও সঞ্চালক হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন ফারহা। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে ফারাহ-র প্রথম ছবি ‘ম্যায়ঁ হুঁ না’-র সম্পাদক ছিলেন শিরীষ কুন্দ্রা। তাকে ফারহা বিয়ে করেন ২০০৪-এ। চার বছর পরে একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দেন ফারহা।
কটুভাষী হিসেবেও বদনাম আছে ফারহার। তিনি নাকি মেজাজ হারিয়ে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। একাধিক বার তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। খ্যাতি ও পরিচিতির শীর্ষে উঠেও অতীতকে ভুলতে পারেন না ফারহা। তিনি সঞ্চয় করতে ভালবাসেন। স্বীকারও করেন নিজের সঞ্চয়ী পরিচয়। ২০১৮ সালে ভারতের আয়কর অধিদপ্তরে পেশ করা হিসাব অনুযায়ী ফারহা খানের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৫২ কোটি টাকা।
আজ (৯ জানুয়ারি) তার জন্মদিন। ১৯৬৫ সালে জন্ম নেয়া এই তারকা ৫৫ বছর পুর্ণ করলেন। এমন দিনে তার অনুরাগীদের প্রত্যাশা… এভাবেই একের পর এক সাকল্যের পালক যুক্ত হোক তার মুকুটে।
ফারাহ খান বলিউড ইডাস্ট্রি বলিউড কোরিওগ্রাফার বলিউড পরিচালক শাহরুখ খান