এক বছর পর আবার মঞ্চে লোক নাট্যদলের ‘কঞ্জুস’
৩০ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:৩৩
এক বছর পর আবার মঞ্চে প্রদর্শিত হচ্ছে দেশের সর্বাধিক মঞ্চায়িত নাটক ‘কঞ্জুস’। অতিমারীকে পরাভূত করে আবার জেগেছে মঞ্চ। ইতোমধ্যে দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন নাট্যসংগঠন মঞ্চে ছুটির দিনগুলিতে নিয়মিতভাবে নাটক মঞ্চায়ন করছে। এবারে দেশের অন্যতম প্রধান নাট্যসংগঠন লোক নাট্যদল (বনানী) প্রায় এক বছর পর দলের নিয়মিত প্রযোজনা সাড়া জাগানো এই হাসির নাটক ‘কঞ্জুস’ মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে ।
‘লোক নাট্যদল’-এর প্রযোজনায় এই নাটকটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বাধিক মঞ্চায়িত একটি নাটক। সেই ১৯৮৭ সাল থেকে মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছে এই নাটকটি। মলিয়েরে ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে তারিক আনাম খান’র রূপান্তরে নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন কামরুন নূর চৌধুরী। প্রযোজনায় লোক নাট্যদল।
‘কঞ্জুস’ পুরনো ঢাকার বাসিন্দা একজন কৃপণ ব্যক্তি হায়দার আলী’র গল্প। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র হায়দার আলী’র বসবাস তার একমাত্র ছেলে কাযিম আলী ও একমাত্র মেয়ে লাইলী বেগমকে নিয়ে, সাথে থাকে দু’জন অত্যন্ত চতুর চাকর ‘লাল মিয়া’ ও ‘কালা মিয়া’ এবং একজন প্রধান চাকর ‘বদি মিয়া’।
বদি মিয়া আসলে একজন ছদ্মবেশধারী চাকর, প্রকৃত অর্থে হায়দারের একমাত্র মেয়ে লাইলীর প্রেমিক। হায়দার আলী লোভাতুর, রাগী, সর্বোপরী খুবই কৃপণ একজন ব্যক্তি যে কাউকে বিশ্বাস করেনা, এমনকি নিজের ছেলে-মেয়েকেও না। তার সমস্ত টাকা সে লুকিয়ে রাখে তার বাগানের মাটির নীচে। লুকিয়ে রাখার পরও হায়দার নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না, ফলে বারবার সে দেখে আসে তার লুকিয়ে রাখা টাকা কেউ নিয়ে গেল কিনা। শুধু কৃপণতা নয়, চিন্তা চেতনার দিক থেকেও হায়দার একজন সেকেলে, একগুঁয়ে, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের অধিকারী, যে তার তরুণ ছেলে কাযিমের বিয়ের জন্য এক বিধবা নারী এবং মেয়ের জন্য পঞ্চাশোর্ধ এক বিত্তশালী বিপত্নীক ব্যক্তিকে ঠিক করে—এভাবে মূলত নাটকটির গল্প এগিয়ে যায়।
‘কঞ্জুস’ নাটক সম্পর্কে নির্দেশক কামরুন নূর চৌধুরী জানালেন, হাস্যরসের মাধ্যমে মানুষের এবং সমাজের অসঙ্গতি, কার্পণ্য, ভন্ডামী, লোভ, স্বার্থপরতা প্রভৃতির প্রতি সূক্ষ এবং তীক্ষ আঘাত মলিয়েরের নাটকের অন্যতম বিশেষত্ব। তার নাটকে একেবারে প্রচলিত এবং প্রাত্যহিক জীবনের ভাষার ব্যবহার লক্ষ করা যায়। মলিয়েরি অভিনয়রীতির অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে গতি এবং গতির সাথে সংলাপ, শারীরিক অভিনয়, জেশ্চার পোশ্চার ও সঠিক সময়জ্ঞান। রূপান্তরের ক্ষেত্রেও তারিক আনাম খান প্রচলিত ভাষা ও কথ্যরীতির ব্যবহার করেছেন। তিনি পুরনো ঢাকার বাসিন্দা যারা ‘ঢাকাইয়া’ ভাষায় কথা বলেন, তাদের প্রাত্যহিক জীবনের ভাষা ও সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন।
তিনি আরও বলেন, কঞ্জুস বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সর্বাধিকবার মঞ্চায়িত নাটক। এই নাটকের কুশীলবরা দীর্ঘদিন ধরে এই নাটকে অভিনয় করেছেন। দীর্ঘ সময়ের মঞ্চায়ন অভিজ্ঞতা থেকে নাটকের ডিজাইন ও অভিনয় রীতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা একটি রুটিন কাজ, যা নাটককে আরো সমৃদ্ধ করে। সেই বিবেচনায় মঞ্চ পরিকল্পনা, পোশাক ও অভিনয় আঙ্গিকের পরিবর্তিত স্বাদ ও আমেজ দর্শকরা উপভোগ করতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। সর্বোপরি কঞ্জুস যেহেতু একটি হাসির নাটক, সেহেতু প্রাণবন্ত নাট্য আবহ তৈরীর সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি, নাটকটি দর্শকদের ভালো লাগবে। কেবল দর্শকদের ভালো লাগাতেই আমাদের শ্রম সার্থক হবে।
এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবদুল্লাহ আল হারুন, ইউজিন গোমেজ, সামসাদ বেগম, আনোয়ার কায়সার, মনিকা বিশ্বাস, তানজিনা রহমান, আবুতাহের লিটন আকাশ, বাসুদেব হালদার, মিনহাজুল হুদা দীপ, সাদেকুল ইসলাম, সোহেল মাসুদ প্রমুখ। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন কামরুন নূর চৌধুরী, আলোক পরিকল্পনায় জি এম সিরাজুল হোসেন, আবহ সঙ্গীতে অভিজিৎ চৌধুরী, নূর তাজমিন নীর, পিনাকী রঞ্জন সরকার এবং মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় আব্দুল আউয়াল খান ও সোহেল মাসুদ।
৫ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সন্ধে সাড়ে ৬টায় বেইলী রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে নাটকটি মন্ঞ্চস্হ হবে।