এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বরেণ্য নজরুল সংগীতশিল্পী জোসেফ কমল রড্রিক্স। রোববার (৩১ জানুয়ারি) আনুমানিক বিকেল তিনটা নাগাদ রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান।
সারাবাংলাকে মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘উনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। ডায়ালাইসিস চলছিল। এই ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতাল যাওয়া আসা করতে করতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর গ্রিনলাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই আজ দুপুর তিনটা নাগাদ মৃত্যু হয় তার।’
জানা গেছে, জোসেফ কমল রড্রিক্সের দুই সন্তান বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তারা দেশে ফিরলেই সৎকার সম্পন্ন করা হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন মাহমুদুল হাসান।
জোসেফ কমল রড্রিক্স ছিলেন একজন বহুমাত্রিক শিল্পী। ১৯৫২ সালে ১২ আগস্ট সূত্রাপুরের কালীগঞ্জে জন্ম । ৩য় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পারিবারিক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় সঙ্গীত জীবনে পা রাখেন। স্কুলজীবনে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে পদ্ধতিগত শিক্ষা শুরু। ওস্তাদ পিসি গোমেজের কাছে ব্যক্তিগতভাবে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নেন। এ সময় নিলুফার ইয়াসমিন, সাবিনা ইয়াসমিন এবং আরো অনেক ওস্তাদের কাছে গান শেখেন। পরবর্তীতে কলেজ অব মিউজিক এ সাটিফিকেট কোর্সে ভর্তি হন এবং ফজলে নিজামির কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও ওস্তাদ মনজুর হোসেনের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নেন। এছাড়াও ছায়ানটে পাঁচ বছর রবীন্দ্র, নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষাগ্রহণ করেন। এ সময় শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ নারায়ণ বসাক, শ্রদ্ধেয় সোহরাব হোসেন, শ্রদ্ধেয় লুৎফর রহমান, শ্রদ্ধেয় মাহমুদুর রহমান, শ্রদ্ধেয়া সানজিদা খাতুন, শ্রদ্ধেয় জাহিদুর রহমান প্রমুখ এর কাছে গান শেখেন।
শিল্পী জোসেফ কমল রড্রিক্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছেন। ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতারে এবং ১৯৭২ থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিত গান করেন। এছাড়াও প্রায় সবগুলো টিভি চ্যানেলে নজরুল, উচ্চাঙ্গ ও আধুনিক গান করেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি তালিকাভূক্ত। বিভিন্ন ধরনের গান পরিবেশন করলেও নিজেকে নজরুলসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে উপস্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। বর্তমানে নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন তিনি। এছাড়াও ঢাকা থিয়েটারের ফাউন্ডার মেম্বার, মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক তিনি।