অভিনয় জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র: হুমায়ুন ফরিদী
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:৪৯
তেল গেলে ফুরাইয়া বাত্তি যায় নিভিয়া, কি হবে আর কান্দিয়া! সৈয়দ আব্দুল হাদীর গাওয়া এই গানে ‘ত্যাগ’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। গানের মত উনার ও জীবন প্রদীপ নিভে গিয়েছিল আজকের এই দিনে।
২০১২ সাল, পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিন, চারদিকে বসন্ত পালন উৎসব৷ ঠিক তখনই এলো এই বিষাদময় খবর। বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী আর বেঁচে নেই। আকস্মিক এই খবরে দর্শকরা প্রথমে সহজভাবে মেনে নিতে পারেন নি, দর্শকদের মধ্যে নেমে এলো শোকের ছায়া। উনার মত এমন জাঁদরেল অভিনেতার এমন অকালমৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারেনি।
হুমায়ুন ফরিদী অভিনয় দিয়ে এইদেশের আপামর দর্শকদের প্রিয় হয়েছেন। ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নাট্যসভার সদস্য ছিলেন, সেখান থেকে মঞ্চ তারপর টিভি নাটক। দুই মাধ্যমেই তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
বিটিভিতে প্রচারিত ‘সংশপ্তক’-এ ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তার আগেই শেখ নিয়ামত আলীর ‘দহন’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। তানভীর মোকাম্মেলের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘হুলিয়া’-তেও ছিলেন।
দেশজুড়ে যে হুমায়ুন ফরিদীর যে সর্বশ্রেনীর মধ্যে জনপ্রিয়তা তার অনেকখানি প্রভাব ছিল বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের অভিনয়ের সুবাদে। ১৯৯১ সালে শহিদুল ইসলাম খোকনের ‘সন্ত্রাস’ ছবিতে খলনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়ে সাড়া ফেলে দেন। এরপরে একের পর এক ছবি হিট হওয়ার সুবাদে তিনি হয়ে উঠেন অন্যতম জনপ্রিয় তারকা। এতটাই গ্রহণযোগ্যতা পান যে ১৯৯৩ সালে নায়কদের ছাপিয়ে তিনিই ওই বছরের পত্রিকাগুলোতে ‘সেরা পুরুষ চলচ্চিত্র তারকা’ নির্বাচিত হন।
খোকন- রুবেল- ফরিদী এই ত্রয়ী ছিল দর্শকদের কাছে আকাঙ্ক্ষিত জুটি। যার প্রমাণ মিলে ‘উত্থান পতন’, ‘সতর্ক শয়তান’, ‘ঘাতক’, ‘দুঃসাহস’, ‘ভন্ড’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ছবিগুলো দিয়ে। তিনি একদিকে যেমন ‘আজকের হিটলার’, ‘আজকের হাঙ্গামা’, ‘নির্মম’, ‘ঘৃণা’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অনেক দিনের আশা’, ‘আনন্দ অশ্রু’ করেছেন তেমনি আরেকদিকে ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মাতৃত্ব’, ‘জয়যাত্রা’, ‘ব্যাচেলর’, ‘আহারে’ মত ছবি করেছেন।
প্রযোজনা করেছিলেন ‘পালাবি কোথায়’। যদিও ব্যবসায়িক বিবেচনায় সফল ছিল না ছবিটি।
তিনি শুধু যে খলচরিত্রে মুগ্ধ করেছেন তা নয়, অন্যসব বৈচিত্র্যময় চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন।
জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন একবারই—‘মাতৃত্ব’-এর জন্য। তখন খলচরিত্রের জন্য আলাদা বিভাগ না থাকায় বারবার বঞ্চিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে বিয়ের প্রায় ২২ বছর পর বিচ্ছেদ ঘটেছিল। এরপর থেকেই একাকীত্বে ভোগেন। প্রথম সংসারের মেয়ের বাসায় থাকতেন। অসুস্থ ছিলেন, রোগা হয়ে গিয়েছিলেন, শেষদিকের কাজগুলো দেখলেই বোঝা যেত। অবশেষে ২০১২ সালের আজকের এইদিনে তিনি পরপাড়ে পাড়ি জমান।
১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করা এই মানুষটি বালাইষাট পেরোবার আগেই পরপারে পাড়ি জমান। এই কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বের মৃত্যুদিনে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।
সারাবাংলা/এজেডএস