দুঃস্বপ্নের মতো এক মৃত্যুর তিন বছর আজ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৪৮
ঠিক তিনবছর আগের ঘটনা। ২০১৮ সালের সেই দিনটাও ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। লক্ষ লক্ষ ভক্তকে স্তম্ভিত করে সংবাদমাধ্যম জুড়ে প্রচার হতে থাকে বলিউড অভিনেত্রী শ্রীদেবীর আকস্মিক মৃত্যুর খবর। দুবাইতে এক আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়ে হোটেলের বাথটবে ডুবে মৃত্যু হয় তার। এই খবর শোনার পর বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে উপমহাদেশের সকল সিনেপ্রেমীরাও।
শ্রীদেবীর হঠাৎ এই চলে যাওয়া যেন আজও দুঃস্বপ্নের মতোই থেকে গিয়েছে হিন্দি চলচ্চিত্রের ভক্তদের কাছে। শ্রীদেবীর জন্ম ১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের তামিলনাড়ুতে। তার মায়ের নাম রাজেশ্বরী ইয়াংগার ও বাবার নাম আয়াপ্পাঁ ইয়াংগার। শ্রীদেবীর বাবা পেশায় ছিলেন আইনজীবী।
শ্রীদেবীর আসল নাম শ্রী আম্মা ইয়াংগার আয়াপ্পাঁ। মাত্র ৪ বছর বয়সে সিনেমায় পা রাখেন শ্রীদেবী। ১৯৬৯ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। ত্রিরুমুঘামের ভক্তিমূলক তামিল ছবি ‘তুনাইভান’ তার প্রথম চলচ্চিত্র। শিশুশিল্পী হিসাবে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পর, শ্রীদেবী ১৯৭৬ সালে তামিল ছবিতে প্রথম রজনীকান্ত ও কমল হাসানের সহ–অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন।
নায়িকা হিসেবে বলিউডে শ্রীদেবীর প্রথম ছবি ‘ষোলা সাওয়ান’। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া জনপ্রিয় ছবি ‘চালবাজ’-এর ‘না জানে কাহা সে আয়ি হ্যায়’ গানটির শুটিংয়ের সময় শ্রীদেবীর গায়ে ১০৩ ডিগ্রি জ্বর ছিল। জ্বর নিয়ে গানটির শুটিং শেষ করেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের কয়েকটি ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন শ্রীদেবী। ‘সাদমা’ (১৯৮৩), ‘চাঁদনি’ (১৯৮৯) ও ‘গারাজনা’ (১৯৯১) ছবির গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। হলিউডের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক স্টিভেন স্পিলবার্গের জনপ্রিয় ছবি ‘জুরাসিক পার্ক’-এ (১৯৯৩) অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু বলিউডের কয়েকটি ছবি নিয়ে তখন ব্যস্ত থাকায় সেই ইংরেজি ছবিতে আর অভিনয় করা হয়নি তার।
শ্রীদেবীর জীবনে অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় দুটি ছবি ‘নাগিনা’ ও ‘চাঁদনি’। যদিও দুটি ছবিতেই প্রথমে কাজ করার কথা ছিল অন্য নায়িকার। ‘নাগিনা’তে প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল জয়া প্রদার নাম আর ‘চাঁদনি’তে রেখার।
আশির দশকে নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে গভীর প্রেম ছিল শ্রীদেবীর। কথিত আছে, তারা মন্দিরে গিয়ে গোপনে বিয়েও করেছিলেন। তবে তাদের সেই সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এরপর চলচ্চিত্র নির্মাতা বনি কাপুরকে শ্রীদেবী বিয়ে করেন ১৯৯৬ সালে। তাদের দুই সন্তান জাহ্নবী কাপুর ও খুশি কাপুর।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম নারী সুপারস্টার হিসেবে পরিচিত এই অভিনেত্রী তামিল, তেলুগু, মালয়ালাম এবং হিন্দি ভাষায় তার ৫০ বছরের জীবনে ৩০০ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কামব্যাক ছবি ইংলিশ ভিংলিশ সবাইকে চমকে দেন বলিউডের চিরন্তন ‘চাঁদনি’। মৃত্যুর পরে ‘মম’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পান শ্রীদেবী। মায়ের পদচিহ্ন অনুসরণ করে বলিউডের পা রেখেছেন কন্যা জাহ্নবী। কিন্তু জাহ্নবীর একটাই আক্ষেপ— তার ডেব্যিউ ছবিও দেখে যেতে পারেননি শ্রীদেবী! অভিনেত্রীর মৃত্যুর সময় ‘ধড়ক’-এর শেষ পর্যায়ের শ্যুটিংয়ে মুম্বাই ছিলেন জাহ্নবী। শ্রীদেবীর বড়ো মেয়ের পাশাপাশি ছোট মেয়ে খুসিও শীঘ্রই রুপোলি সফর শুরু করবে।
মায়ের সঙ্গে জাহ্নবীর তুলনার শেষ নেই। তবে গত বছর হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাহ্নবী জানিয়েছেন, ‘কোনদিনই মায়ের কোন ছবির রিমেকে অভিনয় করব না। ওই ম্যাজিকটা পর্দায় তৈরি করা অসম্ভব।’
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রীদেবীর নিজের হাতে লেখা এক অদেখা চিঠি শেয়ার করে জাহ্নবী কাপুর তার মায়ের স্মরণে এই পোস্টের ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘মিস ইউ মা’। অন্যদিকে জাহ্নবীর জন্য এই ছোট্ট চিঠিতে শ্রীদেবী লিখেছিলেন, ‘আই লাভ ইউ আমার লাব্বু, তুমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সন্তান’।
জাহ্নবী কাপুর, তার বোন খুশি এবং বাবা বনি কাপুর শ্রীদেবীর স্মরণে মঙ্গলবার চেন্নাইয়ের বাড়িতে পুজো করেন। আজও প্রয়াত নায়িকার স্মরণে একাধিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করবেন জাহ্নবী, খুশিরা। প্রতিবছর শ্রীদেবীর চেন্নাইয়ের বাড়িতেই তার মৃত্যুবার্ষিকীর আচার পালন করে পরিবার।
শ্রীদেবীর মৃত্যুর তিনবছর অতিক্রান্ত। বলিউডের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের বিদায় এখনো মেনে নিতে পারছে না তার ভক্ত ও অনুরাগীরা।
ছবি ও তথ্য: ইন্টারনেট