চলচ্চিত্র নয়, স্বপ্নের নাম ‘আদিম’
২১ মার্চ ২০১৮ ১২:১১ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ১৮:৪৬
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন ‘আদিম’। নানা করণেই চলচ্চিটি এক অসামান্য সাহস ও উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে।
এই যেমন সিনেমার স্বাভাবিক প্রযোজনা প্রথা ভেঙে দিয়েছে চলচ্চিত্রটি। সিনেমাটির পরিচালক যুবরাজ শামীম এক্ষেত্রে বেছে নিয়েছেন গণ-অর্থায়ন পদ্ধতি। সেটির প্রক্রিয়াতেও রয়েছে নতুনত্ব। সিনেমা নির্মাণের জন্য তিনি অবলম্বন করেছেন শেয়ার বিক্রির ধারণা। পাঁচ হাজার টাকা করে এখন পর্যন্ত ৬৫টি শেয়ার বিক্রি করেছেন তিনি। নিজেও ব্যবস্থা করেছেন পয়ষট্টি হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়েই সিনেমার নব্বই শতাংশ কাজ শেষ করেছেন শামীম।
‘প্রথমে ভেবেছিলাম সামর্থবান পরিচিতদের কাছ থেকে ঋণ সাহায্য পাবো। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাদের কেউ আমাকে সাহায্য করেনি। বরং যাদেরকে আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত বলি, তারাই আমার সিনেমার শেয়ার কিনেছে। সৌদি আরব, দুবাই থেকেও সাহায্য করেছেন দুই বাংলাদেশি ভাই। সবার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।’ বললেন আদিম সিনেমার পরিচালক যুবরাজ শামীম। শেয়ার ক্রেতাদের টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আদিম’ এর শুটিং এখন বন্ধ রয়েছে। মূল কাজগুলো শেষ করে ফেলেছেন পরিচালক যুবরাজ শামীম। এই কাজ করতে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাদের। বাকি রয়েছে কিছু ছোট ছোট দৃশ্যের শুটিং। প্রয়োজন আরও কিছু টাকার। তা না থাকায় বন্ধ রয়েছে সিনেমাটির কাজ।
‘আদিম’ একটি মানবতার গল্প। সারাদিনের নানা কাণ্ড ঘটিয়ে, পাশবিকতা কিংবা মানবিকতার চরম উদাহরণ তৈরি করে, দিনশেষে মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টার নামই ‘আদিম’।
জীবন যেখানে অমানবিক, জীবন যেখানে প্রতিক্ষণে প্রশ্ন তোলে, শুধু বেঁচে থাকার নাম যেখানে জীবন এমন কিছু স্থানকেই শুটিং লোকেশন হিসেবে বেছে নিয়েছেন পরিচালক। বস্তিতেই হয়েছে সিনেমার বেশিরভাগ শুটিং। অভিনয় করেছেন বাস্তব সব চরিত্র। সিনেমায় যিনি যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, বাস্তবেও আসলে তিনি তাই। চরিত্রগুলো খুঁজে বের করতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বস্তিতেই থেকেছেন পরিচালক যুবরাজ শামীম।
সেসব অভিজ্ঞতার কিছু কথা জানালেন শামীম, ‘দূর থেকে কাজগুলো অনেক সহজ মনে হলেও, পথটা খুবই বন্ধুর। বস্তির অভ্যন্তরীণ অনেক রকম চাপ ছিল শুটিংয়ের সময়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও অনেক সময় ঝামেলা করেছে। তাদের অনুমতি পত্র পাবার পর অনেকটা সহজ হয়ে আসে ব্যাপারগুলো।’
নায়ক নায়িকার ধারণা থেকে বের হয়ে সিনেমাটি কল্পনা করতে হবে দর্শকদের। পরিচালক জানালেন সিনেমার বড় অংশ জুড়ে আছেন এক ভিক্ষুক।
যান্ত্রিক মহানগরে প্রত্যেকটি মানুষের স্বপ্ন থাকে। কল্পনাপ্রিয় কোটি মানুষের ভিড়ে পরিচালক যুবরাজ শামীম একটু বেশিই স্বপ্নবাজ। অর্থের যোগান হলে আবার শুটিং শুরু করবেন, আপাতত এই তার লক্ষ্য। প্রচণ্ড প্রাণশক্তির শামিম মোটেও হতাশ নন ‘আদিম’ সিনেমার প্রতিকূলতা নিয়ে। স্বপ্ন এখন একটাই, ‘আদিম’ সিনেমাটি দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর। এই যাত্রায় অনেকবারই হোঁচট খেয়েছেন, কিন্তু দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবার। তাই সিনেমা ‘আদিম’ শুধুই আর চলচ্চিত্র নয়, একটি স্বপ্নের নাম।
সিনেমেকারের ব্যানারে নির্মত হচ্ছে ‘আদিম’। এর নির্বাহী প্রযোজক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন আমির হামযা ও অরণ্য আনন্দ।
সারাবাংলা/পিএ/টিএস