প্রামাণ্যচিত্রে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
২৬ মার্চ ২০২১ ০০:০০
এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে খুবই অল্প পরিমাণে। আর প্রামাণ্যচিত্রও খুব একটা বেশি নির্মিত হয়নি। তারপরও এর মাঝে অল্প যে কয়টি নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিয়ে এ আয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নির্মিত হয়েছিল চারটি প্রামাণ্যচিত্র। এগুলো হচ্ছে জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘এ স্টেট ইজ বর্ন’, আলমগীর কবিরের ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ ও বাবুল চৌধুরীর ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’।
স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত প্রামাণ্যচিত্র হচ্ছে তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদের ‘মুক্তির গান’। এছাড়া সৈয়দ শামসুল হক নির্মাণ করেছিলেন সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ নিয়ে ‘বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ মুনশী আবদুর রউফ’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘১৯৭১’ ও ‘স্মৃতি একাত্তর’, আলমগীর কবিরের ‘ডায়েরিজ অব বাংলাদেশ’, ‘পগ্রোম ইন বাংলাদেশ’, লং মার্চ টুয়ার্ডস গ্লোডেন বাংলা’ ইত্যাদি।
স্টপ জোনোসাইড
জহির রায়হান নির্মাণ করেছিলেন ‘স্টপ জোনোসাইড’। নামেই বলে দিচ্ছে এর বিষয়বস্তু ছিল মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের এ দেশে চালানো গণহত্যা। এছাড়া তিনি এতে তুলে এনেছিলেন প্রাণ বাঁচার আশায় অসহায় মানুষের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণের বাস্তব ও মর্মস্পর্শী চিত্র। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে ঘুরে ঘুরে একের পর এক যুদ্ধের বাস্তব চিত্র তুলে আনেন। তার এ প্রামণ্যচিত্র প্রকাশিত হলে বিশ্ববাসী বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে বেশ সহায়তা করেছিল ‘স্টপ জোনাসাইড’।
এ স্টেট ইজ বর্ন
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জহির রায়হানের আরেক প্রামাণ্যচিত্র ‘এ স্টেট ইজ বর্ন’। এটিতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের পিছনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে এনেছিলেন।
লিবারেশন ফাইটার্স
‘লিবারেশন ফাইটার্স’ নির্মাণ করেছিলেন আলমগীর কবির। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এটি নির্মিত হয়েছিল।
ইনোসেন্ট মিলিয়নস
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিশুদের হত্যার উপর বাবুল চৌধুরীর নির্মাণ ছিল ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’।
মুক্তির গান
১৯৭১ সালের আমাদের মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের অভিপ্রায়ে আমেরিকান নির্মাতা লিয়ার লেভিন সাংস্কৃতিক কর্মীদের দল ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র সঙ্গ নেন। তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের দেশাত্মবোধক ও সংগ্রামী গান শুনাতেন। এতে উজ্জীবিত হতেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষরা। লিয়ার লেভিন ২০ ঘণ্টার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। পরে তিনি আমেরিকায় ফিরে যান। অর্থাভাবে তিনি প্রামাণ্যচিত্রটির কাজ শেষ করতে পারেননি। প্রায় বিশ বছর পর তার সঙ্গে নিউইয়র্কে যোগাযোগ হয় তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদের। তারা তার কাছ থেকে ফুটেজগুলো সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে মাসুদ দম্পতি ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সবমিলিয়ে নানাজনের আর্থিক ও অনন্যদের বিভিন্নরকম সহায়তায় নির্মিত হয় ‘মুক্তির গান’। যেটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে।
সারাবাংলা/এজেডএস