বাংলাদেশে নতুন এক সংস্কৃতি চালু হয়েছে। বিখ্যাত কেউ মারা যাওয়ার আগেই তাকে মেরে ফেলা। বিশেষ করে কেউ যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকেন তখন এক শ্রেণীর মানুষ এ ধরনের গুজব ছড়াতে শুরু করে। এর সবশেষ শিকার হলেন কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ফারুক। অবশ্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টিকে গুজব হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফারুকের ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ বাবার মৃত্যুর খবরে বেশ বিরক্ত। তিনি গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়লেন সারাবাংলার কাছে। তিনি বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার পরে সারাবাংলা বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে একের পর এক ফোন আসছে। আব্বু নাকি মারা গেছে। আমরা বুঝতে পারছি না কারা যে এসব খবর ছড়ায়! কী লাভ তাদের?’
‘বাস্তবতা হচ্ছে আব্বুর অবস্থা গত ২৪ ঘণ্টায় অনেক উন্নতি হয়েছি। ডাক্তাররা জানিয়েছেন তিনি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে একটু সময় লাগবে।’
এর আগে শরৎ গত ৫ এপ্রিল জানিয়েছিলেন, ২১ মার্চ থেকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেধ হাসপাতালে ভর্তি ফারুক ২৩ মার্চ থেকে সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় রয়েছেন। কোন সাড়া দিচ্ছেন না। তবে বুধবার (৭ এপ্রিল) তিনি সারাবাংলাকে জানান, ফারুক সাড়া দিয়েছেন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে যান বরেণ্য অভিনেতা ও সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। পরীক্ষায় তার রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছিলেন তিনি। সিঙ্গাপুরে নিজের পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গত ২১ মার্চ তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
গত বছরের মধ্য নভেম্বরে সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ছিলেন।
গত কয়েক বছর যাবত অসুস্থ ফারুক। বেশ কয়েকবার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। সেখানে কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ লাইয়ের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসা নেন।
১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। তিনি লাঠিয়াল, সুজন সখী, নয়নমনি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, আলোর মিছিল, দিন যায় কথা থাকে, মিয়া ভাই-সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
‘লাঠিয়াল’-এ অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে ‘শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৬ সালে ‘আজীবন সম্মাননা’ অর্জন করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সফল ও সেরা নায়কদের একজন হিসেবে স্বীকৃত।
সবশেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ঢাকা-১৭’ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য হন।