আপনিও চলে গেলেন ‘সারেং বউ’!
১৭ এপ্রিল ২০২১ ০৩:০৪
তার কোন পরিচয়টিকে আপনি ফেলে দিবেন? তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’, তিনি ‘সারেং বউ’, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সবার প্রিয় কবরী। শনিবার রাত ১২ টা ২০ মিনিটে করোনা তার প্রাণ কেড়ে নিল। তার হঠাৎ এ মৃত্যু চলচ্চিত্র অঙ্গনের কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের ফেসবুক হয়ে উঠেছে শোকবই। আফসোস করে বলছেন, ‘আপনিও চলে গেলেন সারেং বউ’!
ঢালিউডের বর্তমান শীর্ষ নায়ক শাকিব খান তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে দিয়েছেন এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস। তিনি লিখেন, কিংবদন্তি এই মানুষটির সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি। যখনই দেখা হতো আমাকে স্নেহ করতেন। তাঁর সময়কার বিভিন্ন স্মৃতি শেয়ার করতেন। কবরী আপার মৃত্যুতে প্রিয় অভিনেত্রী হারানোর পাশাপাশি একজন অভিভাবক হারানোর শোক অনুভব করছি। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন কবরী আপা…’
শীর্ষ নায়িকা মাহিয়া মাহি বাকরুদ্ধ। শুধু অনেকগুলো প্রশ্নবোধক চিহ্ন সহকারে লিখেন, ‘কেনো?’। পূর্ণিমাও তেমন কিছু লিখতে পারেননি। তিনি লিখেন, ‘কবরী আপা!’
জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও এ প্রজন্মের নায়িকা তানহা তাসনিয়া লিখেন, ‘কবরী আপা নেই’!
গীতিকার, সুরকার ও গায়ক লুৎফর হাসান কবরীকে নিয়ে বিশাল এক স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি সাংবাদিক থাকা অবস্থায় সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়কার স্মৃতিচারণ করেন—পত্রিকায় কাজ করতাম, সেই সতেরো বছর আগে। তিনি বললেন ‘তুমি কেমন লেখো, আমাকে দেখতে হবে’। আগের কিছু লেখা তাকে দেখালাম। তিনি বললেন ‘শব্দের জোর আছে, বলো কী জানতে চাও’। সে এক দীর্ঘ ইন্টার্ভিউ। ঈদ সংখ্যার লেখা। ছাপা হবার পর তাকে দিতে গেলাম। আমার সামনেই পড়লেন। বললেন ‘তোমার লেখা দারুণ’। এই আশির্বাদ আমি যত্নে রাখলাম।
বিনোদন সাংবাদিকতা ছেড়ে কর্পোরেট চাকরি করেন গীতিকার সোমেশ্বর অলি। তারও স্মৃতিতে উঠে আসেন কবরী—“পেশাগত প্রয়োজনের বাইরে কথা বলা বা যোগাযোগ রাখা হয় নি। ছিল নাকউঁচু মন, উড়নচণ্ডী স্বভাব। আহা, আজ বড় আফসোস হয়। কেন আরেকটু বেশি সঙ্গ নেইনি, কেন জ্বালাতন করিনি মানুষগুলোকে, কেন আরেকটু সমৃদ্ধ হইনি তাঁদের সান্নিধ্যে! কবরী সারোয়ার আর নেই। নেই মানে নেই। তাঁর সাথে আর কখনো কোনো ইস্যুতে কথা হবে না। তাঁর স্পষ্টাস্পষ্টি, আপাত কঠিন, যুক্তিপূর্ণ কথাগুলো আর শোনা হবে না। অন্তত কয়েকবার তাঁর খুব পাশেই ছিলাম, মনযোগ কেড়ে নেয়ার পরিবেশে, ছিলাম প্রশ্রয়ছায়ায়! কিংবদন্তির মৃত্যু নেই। কবরী মানে একটা ইতিহাস। আমরা তাঁর ক্ষুদ্র পাঠকমাত্র। আমাদের চোখভরা বিস্ময়… থাক, ‘স্মৃতিটুক থাক’, প্রিয় কবরী আপা…”
সিনেমাটোগ্রাফার রাশেদ জামান একটাই বাক্য লিখেন—আপনিও চলে গেলেন ‘সারেং বউ’!
চিত্রনায়ক কাজী মারুফ লিখেন, ‘শ্রদ্ধা। আল্লাহ্ আপনাকে জান্নাত নসীব করুন।’
সাইমন সাদিক ‘কবরী ম্যাডাম আর নেই’— এর বেশি কিছু লিখতে পারেননি। সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা লিখেন, ‘কত স্মৃতি, কত আদর, ভালবাসা, শাসন পেয়েছি আপনার কাছ থেকে। ঈশ্বর আপনার আত্মার মঙ্গল করুক আন্টি।’
‘বিদায় কিংবদন্তি’ লিখেন এ প্রজন্মের নায়িকা আইরিন। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আঁখি আলমগীর কবরীর সঙ্গে তার বিভিন্ন বয়সের ছবি শেয়ার করে লিখেন, ‘কবরী আন্টি , ওপারে ভালো থাকবেন।’
কালের কণ্ঠের সহকারী ফিচার সম্পাদক দাউদ হোসাইন রনি কবরীর সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে লিখেন, ‘কথা ছিল অন্যরকম’। নির্মাতা শিহাব শাহীন বলেন, ‘আপনার আত্মার শান্তি কামনা করছি। বিদায় সারাহ বেগম কবরী।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার লিখেন, ‘শোক জানানোর কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, আপা। আপনি এভাবে চলে যাবেন তা কল্পনাও করিনি। আর কে বড় বোনের মত রাগ করে ধমক দিয়ে কথা বলবে? আবার কে আদর মিশ্রিত স্নেহের কন্ঠে বলবে, ও তো আমার ভাই। তাই ওর উপর আমি রাগ করতেই পারি।’
সারাবাংলা/এজেডএস