‘আমি সব জায়গায় সবসময় একজন শিল্পী’
২১ মে ২০২১ ১৯:৫৮
আল পাচিনো— অভিনয়ের মহাসমুদ্র বললে একটুও বাড়িয়ে বলা হবে না। একটা মাত্র চরিত্র একজন অভিনেতাকে হাজার বছর বাঁচিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আল পাচিনোর ঝুলিতে এমন সব জাদুময় অনেক চরিত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে— ‘গডফাদার’ ট্রিলজির ‘মাইকেল’, ‘দ্য ডেভিলস অ্যাডভোকেট’-এর ‘জন মিল্টন’, ‘ডন ব্রাস্কো’-এর ‘লেফটি’, ‘স্কারফেস’-এর ‘টনি মান্টোনা’ বা ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’-এর ‘শাইলক’।
স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার আসাদ জামান ‘দ্য টকস’ অবলম্বনে শক্তিমান অভিনেতা আল পাচিনোর সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন সারাবাংলার পাঠকদের জন্য।
মি. আল পাচিনো, অভিনয় জীবনের এই দীর্ঘ সাফল্যের ভার কিভাবে সামলান?
আমি জানি না। আদতে আমি এভাবে ভাবিই না। ব্যাপারটা অনেকটা পেইন্টিং এর মত। একজন শিল্পী যত বড় বা যত বিখ্যাত পেইন্টিং করুক না কেন, তার সেই কর্মের প্রতি তাকিয়ে থাকা তার কখনো শেষ হয় না। একজন পেইন্টার প্রতিবারই নতুন কিছু খুঁজে পায়। একজন অভিনেতার ক্ষেত্রেও তাই। তার সেরা কাজগুলোর দিকে তাকিয়ে সে বলতে পারবে না যে তার সব দেওয়া হয়ে গেছে আর দেওয়ার বাকি কিছু নেই। এই দীর্ঘ অভিনয় জীবনে আমি কেবল বিশ্রাম নিতে পারি কিন্তু এটা উচিত হবে না কেননা একজন অভিনেতা হিসাবে এখনো অনেক কিছুই দেওয়া বাকি রয়ে গেছে। যতটুকু সম্ভব এই বাকির খাতা ছোট করতে চাই!
আপনি বলতে চান এখনো নতুন অনেক কিছু দেয়ার বাকি আছে?
হ্যাঁ, নিশ্চয়। আমি যদি অনুভব করি এখানে আমার কিছু দেয়ার আছে, যোগ করার আছে আমি তা করতে চাই। শেক্সপিয়ার বলেছেন, ‘আমি যা ভিতরে অনুভব করি তাই আমার আয়নায় প্রতিফলিত হয়।’একজন অভিনেতা হিসাবে আমি আমার মেধাকে প্রতিনিয়ত আমার আয়নায় অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিফলিত করতে চাই। বিশ্বাস করুণ চারপাশে এখনো এমন হাজার কিছু রয়েছে যা আয়নায় ধরা পড়েনি। আমি এসবের মধ্য দিয়ে না গিয়ে কিছুতেই অবসর নিতে চাই না। ভাবতেই চাই না।
শিল্পী ক্রিস্টো বলেছেন যে শিল্পীরা অবসর নেন না, তারা কেবল মারা যান।
অনেকাংশে তাই। তবে এর খানিকটা ব্যতিক্রমও আছে। যেমন ধরুন ফিলিপ রোথের কথা; আমি তাঁর কালজয়ী উপন্যাস ‘দ্য হাম্বলিং’-এর উপর সিনেমা করেছি। তিনি কিন্তু সবকিছু থেকে অবসর নিয়েছেন স্বেচ্ছায়।
সব পরিচালকেরাই আপনাকে নিয়ে কাজ করতে চায় নিশ্চয়?
প্রথম গডফাদারের আগে কেউ আমাকে চায়নি। অবশ্য ফ্রান্সিস কাপালা আমাকে চেয়েছিল! তবে শুরুতে আমি তা বুঝতে পারিনি। সেই সময়টায় কোন স্টুডিও আমাকে চায়নি, পরিচালক চায়নি। যখন একজন পরিচালক আপনাকে নিয়ে আগ্রহ দেখাবে, তখন আপনি আপনার চরিত্র নিয়ে দারুণ সব চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন। আর এর মধ্যে দিয়ে দারুণ সব চরিত্র উঠে আসতে পারে। যেটা গডফাদারের ক্ষেত্রে ঘটেছে। ফ্রান্সিস কাপালা সে সময়ে আমাকে কেউ চাইছিলো না, তখন সে আমাকে নেয়। একবার ভাবুন তো আমি বা কাপালা ছাড়া বিষয়টা কেমন হত!
অভিনেতা হিসাবে প্রতিনিয়ত আপনাকে আমরা দেখেছি নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ নিতে। গতানুগতিক সফলতায় কখনো নিজেকে আটকে রাখেননি। আবার এই আপনি অনেক চ্যালেঞ্জিং একেবারে নতুন কিছুও ছেড়ে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আমি প্রথম ‘স্টার ওয়ার্স’-এর কথা বলতে চাই।
‘স্টার ওয়ার্স’ ছেড়ে দেয়া আমার প্রথম সবচেয়ে বড় ভুল।
ট্যারেন্স মালিকের স্ক্রিপ্টের ক্ষেত্রে কী বলবেন?
ট্যারেন্স মালিক চেয়েছিলেন আমি তার একটি সিনেমায় থাকি। বিশ্বাস করুন আমিও সবসময় চেয়েছি। আজ সেসব ভুলের জাদুঘরে জমা হয়ে আছে।
সেক্ষেত্রে কি বর্তমান আর অতীতের মাঝে অভিনয়ে ভিন্ন ধারণা পোষণ করেন?
হা, আমি সেভাবেই ভাবতে চাই। তা না হলে এই দীর্ঘ জীবন যাপন করার কথা না। প্রতিটা সময় এসে নিজের মত করে অভিনয়ে তার জায়গা করে নিয়েছে। আর তার মধ্যে একজন অভিনেতা হিসাবে আমাকে যেতে হয়েছে। আমি সেই সময়টা, সেই অভিনয়টা, সেই চরিত্রটা কতটা বুঝতে পারছি, আমার আয়নায় প্রতিফলিত করতে পারছি তার চ্যালেঞ্জ বহমান।
জীবনের বহমান এই চক্রটা উপভোগ করছেন?
আপনি যখন এভাবে ভাববেন তখন সামনে যে প্রশ্নটি আসবে—গ্লাসটি অর্ধেক ফাঁকা বা অর্ধেক পুর্ণ। এখন আপনি কতটুকু খুশি বা কতটুকু দুঃখী তা আপনার ভাবনার উপর নির্ভর করছে। কখনো কখনো আমি ভীষণ উপভোগ করি। কখনো বিরক্ত হই। একজন চিত্রশিল্পীর শিল্পকর্ম তার বয়সের উপর নির্ভর করে না তবে অভিনেতার কেন করবে? এই ব্যাপারটা আমি এড়াতে পারি না। আমি সব জায়গায় সবসময় একজন শিল্পী। আমার এক গার্লফ্রেন্ড এক সময় বাজি ধরেছিল আমি কোথাও কি এই শিল্পীর বাইরে গিয়ে অবস্থান করতে পারব কিনা? আমি হেসে বলেছিলাম, মনে হয় না পারব।
সারাবাংলা/এজেডএস