‘অভিনেতা হতে চেয়েছি, হয়েছি গায়ক’
২৮ মার্চ ২০১৮ ১২:২০
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপনডেন্ট ।।
অঞ্জন দত্ত হতে চেয়েছিলেন বায়োস্কোপের মানুষ, অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে না পেরে মাঝখানে তাকে থামতে হয়েছিল। সিনেমায় বঞ্চিত হয়ে তিনি হাত পেতেছিলেন গানের কাছে। সেই গান তাকে ফিরিয়ে দেয়নি।
‘গান গেয়ে আমার নামডাক হয়েছে। গান গেয়ে মানুষের সবচেয়ে বেশি কাছে এসেছি, ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু সত্যি কথা হল, জীবনে যা হতে চেয়েছি, তা হতে পারিনি। সত্যি এ জীবনে আমি ভালো অভিনেতা হতে চেয়েছি। কিন্তু তা হতে পারিনি।’ গতকাল মঙ্গলবার সাজ্জাদ হুসাইনের লেখা নিজের জীবনীগ্রন্থ ‘অঞ্জনযাত্রা’র মোড়ক উন্মোচন করতে এসে এই স্মৃতিচারণ করেন অঞ্জন।
অঞ্জন দত্তের জীবনের বহু ঘটনার গল্পধর্মী বর্ণনা রয়েছে ‘অঞ্জনযাত্রা’ বইয়ে। অঞ্জনের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়ে বইটি লিখেছেন সাজ্জাদ। বইটি প্রকাশ করেছে ‘ছাপাখানার ভূত’। এসময় গান প্রসঙ্গে অঞ্জন দত্ত আরও বলেন, ‘গানই আমার পরিচয়। অভিনেতা হিসেবে সেভাবে পরিচিতি পাইনি। বড়মাপের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি, কিন্তু বড় অভিনেতা হতে পারিনি। গান না গাইলে আমি হয়তো হারিয়েই যেতাম।’
বাংলাদেশি পপ গায়ক লাকী আখন্দের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিলো অঞ্জন দত্তের। ঢাকায় গাইতে আসার সূত্রেই এই দুজনের বন্ধুত্বের শুরু। প্রয়াত বন্ধুর স্মৃতিচারণা করে অঞ্জন বলেন, ‘প্রথম যখন ঢাকায় আসি, তখন জাতীয় জাদুঘরের এক অনুষ্ঠানে দেখা হয় শিল্পী লাকী আখন্দের সঙ্গে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে পরিচয়, এরপর বন্ধুত্ব। সব সময় যোগাযোগ হতো। তিনি কলকাতায় গেলে আমাদের দেখা হতো। অসুস্থ হওয়ার সময় তার মোবাইল বন্ধ ছিল। তার মেয়ের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছি। অসাধারণ একজন শিল্পী ছিলেন।’
অঞ্জনের গানের অনেক চরিত্র নিয়েও আলোচনা হয় অনুষ্ঠানে। অঞ্জন জানান তার গানের অনেক চরিত্রকেই তিনি বাস্তব জীবনে চেনেন, আবার অনেকেই আছেন শুধুই কল্পনা। গানের অনুপ্রেরণা প্রসঙ্গে অঞ্জন জানান, তিনি নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা।
‘অঞ্জনযাত্রা’ বই নিয়েও হয় আলোচনা। অনুষ্ঠানে বইয়ের শুরুটা পড়ে শোনাতে গিয়ে কেঁদেও ফেলেন অঞ্জন। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, কাজের বাইরেও একটি মানুষ থাকে। তিনি যা করেন, এর বাইরে তার একটি জগৎ থাকে। এই বইয়ে সেই আমিকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, লেখক তার সততা দেখিয়ে আমাকে মুগ্ধ করেছেন বলে আমিও সব সত্য কথা বলে দিয়েছি। এই বই পড়ার পর হয়তো আমার সম্পর্কে মানুষের ভাবনাতে পরিবর্তন আসবে। এর আগে অনেকে আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। কিন্তু এই বইয়ের জন্য আমি যে সাক্ষাৎকার দিয়েছি, তা আর কোথাও দেইনি। কোনো সাক্ষাৎকার নিয়ে এত উচ্চাশা হয়নি, যেটা এই বইয়ে দিয়েছি। বইয়ের লেখক সাজ্জাদ যে প্রশ্ন করেছে, তা কেউ করেনি।’
বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ব্যক্ত করতে গিয়ে অঞ্জন বলেন, ‘আমার ভক্তদের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মানুষ বাংলাদেশের। পৃথিবীর সবদেশে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।’
ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত
সারাবাংলা/টিএস/পিএ