বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিনেমা বিষয়ক গানের অনুষ্ঠান ‘ছায়াছন্দ’, গান ও তথ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘ছায়াবানী’ ও ‘চিত্রজগত’ এই তিনটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা হিসেবে বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকের কাছে নিজের নামটিকে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করেছিলেন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা হাসনা হেনা। বাংলাদেশের সিনেমা বিষয়ক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপস্থাপিকা তিনি।
নায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুর পর ১৯৯৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সালমান অভিনীত সিনেমার ২৯টি গান নিয়ে ‘ছায়াছন্দ’র বর্ণাঢ্য একটি অনুষ্ঠান প্রচার হয়। এই বিশেষ পর্বেরও উপস্থাপনা করেছিলেন হাসনা হেনা। তারই নান্দনিক উপস্থাপনার কারণে ‘ছায়াছন্দ’ সেই সময় বেশ সাড়া ফেলেছিলো। সেই সময় শাবনূর সরাসরি তার উপস্থাপনার প্রশংসা করেছিলেন।
১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ ‘ছায়াছন্দ’, পরবর্তীতে ৯৭ থেকে ৯৮ মাসিক অনুষ্ঠান ‘ছায়াবাণী’ (হাসনা হেনার পরিকল্পনা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনায়) এবং পরবর্তীতে হাসনা হেনা তার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘প্রাপ্তি টেলিফিল্ম’র ব্যানারে প্যাকেজের আওতায় পাক্ষিক ত্রিশ মিনিটের অনুষ্ঠান ‘চিত্রজগত’ নির্মাণ করেন। ২০০১ সাল পর্যন্ত তা বিটিভিতে প্রচার হয়। ২০০৫ সালে সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীরের সহযোগিতায় এটিএন বাংলায় ঈদ, ভালোবাসা দিবস-সহ আরো অন্যান্য বিশেষ দিবসে উপস্থাপনা শুরু করেন। সেই সময় ‘ছবির গল্প’ এবং ‘হিট সুপারহিট’ অনুষ্ঠানেরও উপস্থাপনা করেন তিনি। একই বছরে সময়ের মেধাবী ১১ জন সাংবাদিকদের নিয়ে ‘শুনছিলেন শিরোনাম’ অনুষ্ঠান করে আলোচনায় আসেন হাসনা হেনা।
২০০৬ সালে হাসনা হেনা পড়াশুনার জন্য সিডনী চলে যান। সেখানে তিনি ‘চ্যানেলে থার্টি ওয়ান’-এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন টানা প্রায় ছয় বছর। পাশাপাশি সেখানে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে বাংলাও শেখাতেন। পরিচালক এহতেশাম তারমাঝে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন’র ছায়া দেখেছিলেন বলে তাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণেরও আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ২০১০ ও ২০১৫ সালে বিটিভিতে নারী বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘নন্দিনী ও নন্দনতত্ত্ব’ অনুষ্ঠানেরও উপস্থাপনা করেন।
হাসনা হেনা বেশকিছুদিন আগে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরে খুলনা’তে নিজের এগ্রো ফার্ম নিয়েও ব্যস্ত আছেন। তবে বর্তমানে তিনি নিউজ টোয়েন্টি ফোর-এ ‘আমার কৃষি আমার খামার’ এবং ‘করোনাকালের আড্ডা’ অনুষ্ঠানের নিয়মিত উপস্থাপনা করছেন। বর্তমান ব্যস্ততা প্রসঙ্গে হাসনা হেনা বলেন, ‘শুরুতেই দর্শকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে এখনো দর্শক আমাকে মনে রেখেছেন। চলতে ফিরতে এখনো দর্শকের যে ভালোবাসা পাই- এটাই আসলে জীবনের বড় পাওয়া।’
উল্লেখ্য নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় হাসনা হেনা নজরুল সঙ্গীতে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন। মূলত মায়ের অনুপ্রেরণাতেই হাসনা হেনা’র আজকের হাসনা হেনা হয়ে উঠা।