রণবীর সিং: নিজের গল্প যিনি নিজেই লিখেছেন
৬ জুলাই ২০২১ ১৫:০৬
২০১০ সাল। বলিউডে পা রেখেছিলেন রণবীর সিং। বর্তমানে বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতাদের কথা ভাবলে তার নাম সেই তালিকার বেশ উপরেই থাকে। এক সময় সহকারী পরিচালক হিসেবে পর্দার পিছনে কাজ করা রণবীর অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন যশ রাজ ফিল্মসের ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবির মাধ্যমে। সেই প্রথম রণবীর সিং ভবনানী নামটা থেকে ভবনানী গেল বাদ। বলিউড পেল রণবীর সিংকে। প্রথম ছবিতেই দিল্লির প্রাণোচ্ছ্বল ‘বিট্টু শর্মা’ হয়ে দর্শকের মন জয় করেন তিনি। এর পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ‘রামলীলা’, ‘দিল ধড়ক নে দো’, ‘বাজিরাও মস্তানি’, ‘গাল্লি বয়’, ‘পদ্মাবত’, একের পর এক সফল ছবি করেছেন তিনি। বলিউডের রঙিন পাতায় নিজের গল্প নিজেই লিখেছেন রণবীর।
আজ (৬ জুলাই) এই বলিউড তারকার জন্মদিন। ১৯৮৫ সালের এইদিনে ভারতের মুম্বাই শহরে এক সিন্ধি পরিবারে রণবীর সিং-এর জন্ম। তার বাবার নাম জগজিৎ সিং ভবনানী এবং মায়ের নাম অঞ্জু ভবনানী।
শৈশব থেকেই একজন অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন রণবীর। তাই স্কুলে নাটকে অংশগ্রহণ করতেন। পছন্দ করতেন বলিউডের মুভি দেখতে। এবং বলিউডের দ্বারা বেশ প্রভাবিত হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু বুঝতে পারেন যে, বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করা খুব সহজ কাজ নয়। তার মনে ধারণা জেগেছিল শুধুমাত্র বলিউড ব্যাকগ্রাউন্ড যাদের আছে, তাদের পরিবারের সদস্যরাই চলচ্চিত্র জগতের সুযোগ পায়। এর জন্য অভিনয় করার স্বপ্ন থেকে সরে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার অভিনয়ের উপর আত্মবিশ্বাস আবার ফিরে আসে। ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি নিয়েই ২০০৭ সালে মুম্বাইয়ে আসেন রণবীর। মুম্বাই এসে প্রথমে তিনি কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করতেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন- সকল ধরনের মুভির জন্য অডিশন শুরু করবে। এরপর বলিউড পরিচালকদের কাছে নিজের পোর্টফোলিও দিতে থাকেন তিনি। তার নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ছিল যে, একদিন তিনি অভিনয় জগতে প্রধান ভূমিকা পালন করবেন।
প্রথমে একটি মিউজিক ভিডিও এবং সাবান বিজ্ঞাপনের অফার পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই অফারটি ফিরিয়ে দেন রণবীর। কারণ তার প্রধান লক্ষ্য- ফিল্মে অভিনয়। পরিচালকদের কাছে পোর্টফোলিও দিয়েই যাচ্ছিলেন। কিন্তু কোথাও কোন সুযোগ পাচ্ছিলেন না। একটা সময় হতাশায় ভুগতে থাকেন রণবীর ।
২০১০ সাল ছিল তার জীবনের স্বপ্ন সফল হওয়ার সময়। কারণ এই সালে জানুয়ারি মাসে রণবীর সিংকে যশ রাজ ফিল্ম থেকে অডিশনের জন্য ডাকা হয়। অডিশনে দুটি দৃশ্য দেখেই আদিত্য চোপড়া তার অভিনয় দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান এবং আনুশকা শর্মার বিপরীতে রোমান্টিক কমেডি ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ সিনেমাটিতে কাজ করার সুযোগ দেন।
প্রথম ছবি ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ মুক্তির পর বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় এবং ভালো অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হন রণবীর। এই ছবিটি অভিনয় করে রণবীর শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা হিসাবে ফিল্মফেয়ারে পুরস্কার অর্জন করে। এই ছবির পর তার কাছে যশ রাজের প্রোডাকশন আরও একটি মুভির অফার আসে। মানীশ শর্মার পরিচালিত ‘লেডিস ভার্সেস রিকি বাহল’ সিনেমায় আরও একবার আনুশকা শর্মা এবং রণবীর সিংকে একসাথে জুটি বাঁধতে দেখা যায়। এই মুভিটি মোটামুটি ভাবে সাফল্যে অর্জন করে।
এরপর, ২০১৩ সালে রোমান্টিক সিনেমা ‘লুটেরা’ ছবিতে সোনাক্ষী সিনহা বিপরীতে দেখা যায়। ছবিটি বক্স অফিসে তেমন সাফল্যের মুখ না দেখলেও রণবীর সিংয়ের অভিনয় অত্যন্ত প্রশংসিত ছিল। একই বছর মুক্তি পায় বলিউডের সুপারস্টার পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানশালীর ‘গোলিয়োঁ কী রাসলীলা রাম-লীলা’। এই চবিতে তার বিপরীতে ছিলেন বলিউডের আরেক সুপারস্টার দীপিকা পাডুকোন। ছবিটি বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হিট হয়েছিল। রোমিও চরিত্রের উপর ভিত্তি করে গুজরাটের ছেলে রামের চরিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় মানুষের মন ছুঁয়ে গেছে। সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কৃত হন রনবীর সিং। বলা যায়, এই ছবি দিয়েই বলিউডের সেরা তারকাদের একজন হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেন রণবীর সিং। একই সাথে দীপিকা পাড়ুকোনকে বিয়ে করেন তিনি।
অভিনেতা রণবীর সিংকে পরবর্তী সিনেমা ‘গুন্ডে’ (২০১৪ সালে) প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এবং অর্জুন কাপুরের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিতে দেখা গেছে। এই ছবিটি বক্স অফিসে অসাধারণ সাফল্যে পেয়েছিল। কিন্তু তার পরবর্তী সিনেমা ‘কিল দিল’ বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি। ২০১৫ সালে জোয়া আখতারের ‘দিল ধড়কনে দো’ সিনেমাটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিল।
২০১৫ সালে রণবীরের সিংয়ের বড়ো বাজেটের মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমা ছিল সঞ্জয় লীলা বানশালীর ঐতিহাসিক ‘বাজীরাও মস্তানী’। এই সিনেমায় তাকে প্রথম বাজিরাওয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। আরও একবার দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গে জুটিতে দেখা যায় তাকে। এই সিনেমাটিকে বলা হয় ভারতীয় শ্রেষ্ঠ সিনেমারগুলির মধ্যে একটি। রণবীর এবং দীপিকার অভিনয় ছিল দুর্দান্ত। এই অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার-সহ বিভিন্ন পুরস্কার জিতেছেন এবং জয় করছেন হাজার হাজার মানুষের মন।
২০১৬ সালে রণবীর সিংকে আরও একবার যশরাজ প্রোডাকশন মুভি ‘বেফিকরে’-তে বানী কাপুরের বিপরীতে দেখা যায়। ২০১৮ সালে রণবীর সিংয়ের সবচেয়ে বিতর্কিত ছবি ছিল ‘পদ্মাবত’। আরও একবার সঞ্জয় লীলা বানশালী এবং দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গে কাজ করলেন। হাজার বিতর্ক থাকা সত্বেও ‘পদ্মাবত’ বক্স অফিসে ভারতের সর্বোচ্চ অর্জনকারীর তালিকায় পরিণত হয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় ১৯০ কোটি নির্মাণ ব্যয়ে নির্মিত ‘পদ্মাবত’ হলো এখনো পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভারতীয় চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে ‘পদ্মাবত’।
২০১৮ সালে ডিসেম্বরে রণবীর সিংয়ের মুক্তি প্রাপ্ত ছবি ‘সিম্বা’। প্রথম দিন থেকেই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে সিনেমাটি। তার বিপরীতে দেখা যায় সারা আলি খানকে। ২০১৯ সালে আরেকটি সিনেমা মুক্তি পায় রণবীর সিংয়ের। ছবির নাম ‘গালি বয়’। এই সিনেমায় আলিয়া আলিয়া ভাটের সঙ্গে জুটিতে দেখা গেছে তাকে।
খুব শীঘ্রই রণবীরকে দেখা যাবে কবীর খান পরিচালিত ‘৮৩’ ছবিতে। ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বলবে এই ছবি। তৎকালীন অধিনায়ক কপিল দেবের ভূমিকায় দেখা যাবে এই অভিনেতাকে।
সারাবাংলা/এএসজি
‘দিল ধড়ক নে দো’ ‘বাজিরাও মস্তানি’ ‘রামলীলা’ গাল্লি বয় রণবীর সিং