হীরকজয়ন্তীতে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ২ দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন
২৮ জুলাই ২০২১ ১৪:৩৫
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়- এ দেশের বহুমাত্রিক একজন কিংবদন্তী শিল্পী। আজ ৭৫ পেরিয়ে ৭৬-এ পা রাখছেন তিনি। দেশবরেণ্য এই আবৃত্তি ও অভিনয়শিল্পী এবছর তার জীবনের ৭৫ বছর, অর্থাৎ হীরকজয়ন্তী পুর্ণ করছেন। এই বিশেষ দিনটি উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী নানান আয়োজনের মধ্যদিয়ে বিশেষভাবে উদযাপন করছে ‘বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদ ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় হীরকজয়ন্তী উদযাপন পরিষদ’। এমনটাই জানালেন বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদ’এর সদস্য সচিব রূপা চক্রবর্ত্তী। এ উপলক্ষ্যে ২৮ ও ২৯ জুলাই দুইদিনের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। করোনা মহামারী বিবেচনায় আয়োজনটি অনলাইনে উক্ত দুইদিন বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদের ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
প্রথম দিন ২৮ জুলাই বিকেল ৫টায় রয়েছে উদ্বোধনী আয়োজন। এসময় জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানাবেন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা। এদিন রাত ৮ টায় জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা থেকে আবৃত্তি করবেন দেশের বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পীরা।

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ২৯ জুলাই বিকেল ৫টায় রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বাংলাভাষী জনপ্রিয় ও নন্দিত আবৃত্তিশিল্পীদের পরিবেশনায় জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা আবৃত্তি।
এদিকে জন্মদিনকে ঘিরে নিজের কোন বিশেষ আয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, ঘরোয়াভাবেই রাজধানীতে নিজ বাসায় জন্মদিন উদযাপিত হবে। নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বেশ মজা করেই কিছু কথা পাঠকের জন্য শেয়ার করেছেন। জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি তো আসলে সবসময় নিজেকে ৩৩ বছরের একজন মানুষ মনেকরি। আজ ৩৪-এ পা রাখবো। কেউ কেউ খবর রটিয়ে বেড়াচ্ছে যে আমি ৭৬ এ পা রাখছি..হা হা হা..। যাইহোক, আমি আমার বাবা কালিকানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও মা স্নেহলতা দেবীর যৌথ ভালোবাসার ফসল। আর মানুষের ভালোবাসাই আমাকে আজ এতোদূর নিয়ে এসেছে। একজন শিল্পী হিসেবে আমি এখনো অতৃপ্ত। অর্থাৎ আমার মাঝে অতৃপ্তি রয়ে গেছে, সেটা আবৃত্তিতেও, অভিনয়েও। আমি আজীবন একজন শিক্ষার্থী। জন্মদিনে সবার কাছে আশীর্বাদ চাই যেন সুস্থ থাকি ভালো থাকি।’

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
এ দেশের আবৃত্তিকারদের মধ্যে তিনিই দেশের বাইরে সর্বপ্রথম কলকাতায় একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান করেন। ১৯৬৯ সালে লেনিন জন্মশতবার্ষিকীতে রঞ্জি ইনডোর স্টেডিয়ামে তিনি নজরুল-তনয় কাজী সব্যসাচীর সঙ্গে দ্বৈত ও একক আবৃত্তি করেন। তিনি ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, স্কটল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠকালীন শুরু হয় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ফলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাঠ স্থগিত রেখে দুইভাই একসাথে সংযুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭০-এর দশকে ঢাকা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে একাধিক একক আবৃত্তির অনুষ্ঠান করে জনপ্রিয়তা পান তিনি। আবৃত্তিকার হিসেবে তিনি শিল্পকলা পদক, গোলাম মুস্তফা পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক সম্মাননা অর্জন করেছেন। এরই পাশাপাশি ১৯৭০-এর দশক থেকেই টিভি নাটকে অভিনয় করছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। গুরু আলমগীর কবিরের সান্নিধ্যে এসে চলচ্চিত্রের প্রেমে পড়েন, অভিনয়ের প্রতি নিমগ্ন সাধনায় ব্রতী হন।
আশির দশকের মাঝামাঝি মোরশেদুল ইসলামের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি সূচনা-তে একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে সিনেমায় তার প্রথম আত্মপ্রকাশ। এরপর তারেক মাসুদের মাটির ময়না, রানওয়ে, হুমায়ুন আহমেদের ঘেঁটুপুত্র কমলা, নয় নম্বর বিপদসংকেত-সহ বেশ কয়েকটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং অসংখ্য টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। অসংখ্য তথ্যচিত্রেও কন্ঠদান করেছেন তিনি।

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান করেন। বাংলাদেশে বৃন্দ আবৃত্তির (কয়্যার) সূচনা করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, ফ্রান্স, বৃটেন, স্কটল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশে দর্শনীর বিনিময়ে ১৪টি একক আবৃত্তির অনুষ্ঠান করেছেন।
বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী এই মানুষটি বেশ কিছুদিন ধরে লেখালেখিও করছেন। ইতোমধ্যে তার আপনি, তুমি, তুই, আমি এবং কবি ও তুমি- শিরোনামে ৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এবং পূর্বাহ্ণ, মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ন ও মহাকাব্যিক কল্পকথা- শিরোনামে ৪টি বই প্রকাশের অপেক্ষায়। তার গ্রন্থগুলো ইতোমধ্যে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় দুই পুত্র ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় এবং কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের জনক। তার স্ত্রী আবৃত্তিকার ও সঙ্গীতশিল্পী মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়।
সারাবাংলা/এএসজি
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদ হীরকজয়ন্তীতে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়