‘আমি আমার শিল্পসত্তা নিয়ে কখনোই বাণিজ্য করব না’
৩০ আগস্ট ২০২১ ১৪:১০
দু’বার অস্কারজয়ী অভিনেতা শন পেন। একই সঙ্গে চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, পরিচালক হিসেবে খ্যাত। এগুলোর বাইরে দারুণভাবে প্রশংসিত হ্যারিকেন ক্যাটরিনা, হাইতির ভূমিকম্পে ক্ষতিগস্ত মানুষের পাশে বলিষ্ঠভাবে দাঁড়ানোর জন্য। ‘দ্য টকস’ ম্যাগজিনের আগস্ট সংখ্যায় তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সারাবাংলার পাঠকদের জন্য তা অনুবাদ করেছেন চিত্রনাট্যকার ও স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা আসাদ জামান।
অভিনয় না পরিচালনা— কোনটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?
গল্প বলতে আমি ভীষণ পচ্ছন্দ করি। একজন অভিনেতা হিসাবে গল্প বলা যায়, কিন্তু পরিচালক হিসাবে গল্প বলা অন্যরকম উত্তেজনার। আমি কখনই একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি না। যদিও পরিচালনা বিষয়টা তাই। অত্যন্ত চাপযুক্ত। পরিচালনাকে আমি সৃজনশীল প্ররোচনা বলতে চাই না, বলতে চাই সিনেম্যাটিক আবেগ। এ মুহূর্তে পরিচালনার চাপটা আর নিতে চাই না।
আপনার বাবা লিও পেন— বিখ্যাত টেলিভিশন অভিনেতা, পরিচালক। হলিউড টেনকে সমর্থন করায় কালো তালিকাভুক্ত হন, এ ব্যাপারটা আপনি কিভাবে দেখেন?
আমরা দুজনেই গল্প বলতে পচ্ছন্দ করি। বাবার যে ধরণের সৌজন্যবোধ, আকর্ষণ ছিল তা আমি শ্রদ্ধা করি। জীবনের অনেক কিছুতে কাছাকাছি চলে এসেছি বলে মনে হয়, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছতে পারিনি। নিজেকে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে ৩৭টি মিশন চালোনো এবং দুইবার গুলি করে হত্যা করার অবস্থানে রাখতে পারছি না। আপনি আপনার জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, ঠিকঠাক করে নিজের কাজটা করতে পারচ্ছেন না—বাবা সহ্য করলেও আমি তার মত ব্যাপারটা আমি তার মত কিছুতেই সহ্য করতে পারতাম না। আমি ওই অবস্থায় বিপ্লব শুরু করতে চাইতাম আর বাবা এটাকে ক্রমবর্ধমান যন্ত্রণা হিসেবে দেখেছিলেন।
আপনার সন্তানরা আপনার পরিচালনায় কাজ করেছেন। এটা কি আপনার পরিচালনায় কোনো প্রকার প্রভাব ফেলেছে?
‘ফ্ল্যাগ ডে’র সেটে পরিচালক হিসাবে অন্য অভিনেতাদের যেভাবে আবেগ বা কষ্টের দৃশ্যে ঠেলে দিতাম, তাদের উৎসাহিত করতাম নানাভাবে, একজন বাবা হিসাবে আমার সন্তানদের ক্ষেত্রে ততটা উৎসাহ দেখাতাম না— এটা আমি স্বীকার করি। আমার সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্ক, তাদের নিজস্ব সৃজনশীল আবেগ রয়েছে। তাই আমি সন্তানদের নিয়ে এমন অনেক কিছু অনুমান করতে পারি যা অন্যান্যদের ক্ষেত্রে হয় না।
ব্যাখা করবেন কি?
অভিনীত চরিত্র নিয়ে একজন অভিনেতা হিসেবে বিচলিত হওয়া আমার একদমই পছন্দের না। আমার পছন্দের অভিনেতারা সবাই অভিনয় করতে ভালোবাসে, কারণ এতে করে তারা আবেগের সকল ধাপ প্রকাশ করতে পারে। আবেগের কঠিন জায়গায় প্রবেশ করতে আমি সবসময় ভয় পাই না। একজন অভিনেতা হিসাবে এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তা না করার চেষ্টা করি। একটি সিনেমা তৈরিতে চরিত্রের প্রতিটি দিন সম্পর্কে ভাবি, প্রতিটি দিন কী ঘটতে চলেছে বা কী ঘটতে পারে। একজন অভিনেতা হিসাবে আমার সন্তানদের কেউও এমন একটা অবস্থায় যেতে হবে, তার থেকে নিজেকে আবিস্কার করতে হবে। নিজেদের মৌলিক একটা অনুভূতির ভিতর দিয়ে বয়ে নিয়ে যেতে হবে। একজন অভিনেতা হিসাবে মৌলিক সত্ত্বা ভীষণ জরুরি।
সন্তানদের ফলাফলে আপনি কি খুশী?
আমি আমার শিল্পসত্তা নিয়ে কখনো বাণিজ্য করব না। চলচ্চিত্রের জন্য সত্যিকারের দুরন্ত স্নেহ আছে কারণ এর কেন্দ্রে আছে আমার প্রথম সন্তান, যে আমার জন্য ম্যাজিক। আমি বিশ্বাস করি আমি আমার মেয়ে ডিলানের জন্য প্লাস ওয়ান হিসাবে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের। এ সিনেমার জন্য ডিলানের সাথে রেড কার্পেটে হাঁটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা দিন। বাবা হিসাবে আমি ভীষণ গর্বিত, ভীষণ উত্তেজিত। ডিলান যে সমস্ত প্রশংসা পাচ্ছে তা তার প্রাপ্য। ডিলান মন মননে একজন শক্তিশালী নারী। চলচ্চিত্র মুক্তির আগে এক ধরণের উদ্বেগ রয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি খুশি—চলচ্চিত্রটি একসঙ্গে সিনেমা হলে একচেটিয়া মুক্তি পাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিটা কি দিন দিন বিরল হয়ে যাচ্ছে?
হ্যাঁ, দিন দিন ব্যাপারটা জটিল হয়ে যাচ্ছে। বড় পরিবেশকদের কারণে প্রায় সময় অনেক সিনেমার জন্য টিকে থাকার সংগ্রামটা ভয়ানক হয়ে উঠছে। আমরা এক পর্যায়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের কাছে অর্থায়ন চেয়েছিলাম, যদি ব্যাপারটা ঘটত তাহলে দিন তারিখ নিয়ে ভাবতে হত না, সংশয়ও থাকত না। কারণ ওয়ার্নার ব্রাদার্স তাদের ছবির জন্য আগে থেকেই এসব কিছু সেট করে রাখে। আর এই সেট করে রাখতে গিয়ে অনেক সিনেমা ছিটকে যায় ষ্টেশনের বাইরে। ব্যাপারটা ভীষণ লজ্জার।
সারাবাংলা/এজেডএস