Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সালমান শাহ এক অকৃত্রিম ভালোবাসার নাম

হৃদয় সাহা
৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:৫৭

বাংলা চলচ্চিত্রে তার আগমন হয়েছিল খুব রাজসিকভাবে। তিনি আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন, হঠাৎ করেই অতৃপ্ত বাসনায় পাড়ি জমিয়েছিলেন অদেখা ভুবনে। তিনি আর কেউ নন, তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের যুবরাজ অমর নায়ক সালমান শাহ।

সালমান শাহ, যাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক প্রজন্ম। সালমান শাহ মানেই তাদের কাছে বিশেষের চেয়েও বেশি কিছু। হবেই বা না কেন, একটা নতুন প্রজন্ম কে বাংলা চলচ্চিত্রে আকৃষ্ট করার সব গুণাবলিই ছিল তার কাছে। সিনেমার সংখ্যা মাত্র ২৭ টি,যার সিংহভাগ ই ব্যবসাসফল।

বিজ্ঞাপন

ক্যারিয়ারের মাত্র ৪ বছরেই তিন বছরেই সেরা ব্যবসাসফল ছবির নায়ক সে। কেয়ামত থেকে কেয়ামত দিয়ে যার শুভ সূচনা হয়েছিল তা ধীরে ধীরে বিকশিত হয় অন্তরে অন্তরে,বিক্ষোভ,স্বপ্নের ঠিকানা,সত্যের মৃত্যু নেই ছবিগুলো দিয়ে। সিনেমার পাশাপাশি তার অভিনীত নয়ন, ইতিকথা নাটকগুলোও খুব জনপ্রিয়। শুধু অভিনয়ে নয়, তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার সব আধুনিকতা ছিল তার মাঝে, তার দেহ সৌষ্ঠব, ফ্যাশন সেন্স, কথাবার্তা সবকিছুই ছিল আধুনিক, সময়ের চেয়ে এগিয়ে। সালমান শাহ যখন চলচ্চিত্রের মহীরুহ হয়ে উঠছিলেন, তখন ই তিনি পৃথিবীকে বিদায় জানালেন। যার মৃত্যুতে দর্শকদের মনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। প্রজন্মের প্রিয় তারকাকে হারানোর বেদনা যারা হারায় তারাই জানে। শুধু দর্শক নন,বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি যেন গতিপথ হারালো এক সুন্দর সম্ভাবনা।

নব্বইয়ে বেড়ে উঠা দর্শকদের মধ্যে সালমান শাহ এক অকৃত্রিম ভালোবাসার নাম। অবাক করা ব্যাপার হলো,শুধু সেই প্রজন্ম নয় পরবর্তী প্রজন্ম যারা সিনেমাহলে গিয়ে সালমান শাহ র ছবি দেখেনি, দেখেনি তার জনপ্রিয়তার উন্মাদনার প্রকোপ। তারাও সালমান শাহকে নিজেদের বিশেষ প্রিয় নায়ক বানিয়েছেন। তার কারণ সালমান শাহ নিজেই। ব্যক্তিগত ভাবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সালমান শাহ যখন মারা যান তখন আমি নিতান্ত ই শিশু। পরে যখন বুঝতে শুরু করলাম, সিনেমাও দেখি বড়জনদের সাথে। তখন ই তাদের মুখে মুখে শুনে বড় হয়েছি সালমান শাহ কে ঘিরে তাদের কষ্টমিশ্রিত ভালোবাসা।

বিজ্ঞাপন

এখনো মনে আছে, একবার বিটিভিতে ঈদে প্রথম দেখি ‘আনন্দ অশ্রু’, এটাই আমার দেখা যতদুর মনে পড়ে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম ছবি। এই ছবি নিয়ে আমার বড় দিদিদের উচ্ছ্বাস,আমারো তখন ই তার প্রতি আলাদা ভালো লাগা কাজ করল, কাছাকাছি সময়েই একুশে টিভিতে দিল কেয়ামত থেকে কেয়ামত। প্রতিবার ই সালমান শাহ র যেই ছবিই টিভিতে দিত, দেখতাম বড়দের উচ্ছ্বাস। সেই উচ্ছ্বাসের ঢেউয়ের আঁচ লাগতো আমার, এমনভাবে আমাদের প্রজন্ম কিংবা আমাদের চেয়ে যারা ছোট তাদের মধ্যেও। ইউটিউবে খুঁজে খুঁজে তার অভিনীত অদেখা ছবিগুলো অনেকেই দেখে ফেলেছে আমার মত, এমনকি নাটকগুলোও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে তার কাজগুলো নিয়ে আলোচনা ই বলে দেয় তিনি কতটা সমকালীন এখনও।

গান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জনপ্রিয়তার জন্য। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, প্রায় সাতাশটা ছবিতেই একটা গান হলেও জনপ্রিয় হয়েছে, এটা একেবারেই ব্যতিক্রম ঘটনা। জনপ্রিয় গান, সিনেমার সুনির্বাচনের সুবাদে তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম প্রিয় হয়ে উঠেছেন, দেখেছে তার অভিনয়, আধুনিকতা সম্পন্ন স্মার্ট একজন ছেলে। এমন নায়ক পরবর্তীতে হয়তো আসেনি বলেই তিনি চিরকালের একজন হয়ে গেছেন, তিনি সবার জন্য সাম্প্রতিক, সবার জন্য আইকন হয়ে গেছেন। আজ যে শিশু ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে সেও পারিবারিকভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে সালমান শাহর প্রতি, তবে তা ক্ষণিকের জন্য নয়, পরেও এই ভালোলাগা থাকবে চিরন্তন। পরে যারাই নায়ক হয়ে এসেছে তাদের কাছেও তিনি প্রিয় নায়ক।

তার মৃত্যু রহস্যময়, এমনকি তিনি যেদিন মারা যান, শোনা যায় সারা বাংলাদেশে প্রায় ২১ জন মেয়ে এই খবর শুনে আত্মহত্যা করে। তার এই মৃত্যুও পরবর্তী প্রজন্মেও আঘাত হেনেছে মনে। সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাঁকে খুন করা হয়েছিলো টা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। মৃত্যুর এতদিন পরেও তাঁর অধিকাংশ ভক্ত মনে করেন তিনি খুন হয়েছিলেন।

মাত্র ৪ বছরের ক্যারিয়ারেই তিনি যে ঝড় তুলেছিলেন বাংলাদেশের সিনেমায় সে ঝড় হয়তো থেমে গেছে অনেক আগেই।দিন দিন বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমার অবনতি ঘটেছে। সালমান শাহ থাকলে বাংলা সিনেমা কোথায় যেত কে জানে? অনেক কিছু হতে পারতো। কিন্তু হয়নি কিছুই। সালমান শাহ’র ভক্তদের সারাজীবনই এই আক্ষেপ বয়ে বেড়াতে হবে।

বেঁচে থাকলে সালমান শাহ্‌ আজ কোথায় থাকতেন? কেমন থাকতেন? মারা যাওয়ার সময় তার যে ইমেজ ছিল তা কি তিনি ধরে রাখতে পারতেন? নাকি দর্শকদের হৃদয়ে যে জায়গাতে ছিলেন সেখান থেকে পতন ঘটতো তার? নাকি সে নিজেকে প্রতিষ্টিত করতেন সেরা নায়ক হিসেবে?

অনেক প্রশ্ন? এসব প্রশ্নের উত্তর নাহয় অজানাই থাক।

বাংলা চলচ্চিত্রে অনেক নায়ক এসেছেন, জনপ্রিয় হয়েছেন,ভবিষ্যতেও আসবেন,এর মাঝেও তিনি অনন্য ছিলেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চিরকালীন আছেন এবং থাকবেন।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সালমান শাহ্‌ স্মৃতি সংসদ

লেখক: চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার

সারাবাংলা/এজেডএস

২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী সালমান শাহ্‌

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর