১৪ বছর পর আবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খিজির হায়াতের ছবি
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৫৭
ফুটবল নিয়ে ২০১০ সালে নির্মিত ‘জাগো’র কারণে অধিক পরিচিত পরিচালক খিজির হায়াত খান। তবে তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ ছিল বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে নিয়ে নির্মিত। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরকে নিয়ে নির্মিত প্রথম ছবিও। সে ছবির ১৪ বছর পর তিনি ঘোষণা দিলেন ‘ওরা ৭ জন’ নামে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছবি নির্মাণের।
২০০৭ সালে যখন ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ নির্মাণ করেন তখন বয়সে অনেক তরুণ ছিলেন। অনভিজ্ঞতা ও নানাবিধ সমস্যার কারণে মন মতো অনেক কিছুই তখন করতে পারেননি। তাই তখন থেকে ইচ্ছে ছিলো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কমপক্ষে আরেকটি ছবি নির্মাণ করবেন।
খিজির হায়াতের এ ইচ্ছের পিছনে আরও বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে তার দুই মুক্তিযোদ্ধা মামা। তার ছোট মামা সাইফুল ইসলাম সাফু মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তিনি দেশের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের একজন। রাজাকাররা যখন সাফুদের নৌকায় অ্যামবুশ করে তখন তার সঙ্গে ছিলেন আরেক বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আলম খান খসরু। যিনি ‘ওরা ১১ জন’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন।
আরেক মামা রফিকুল ইসলামও মুক্তিযোদ্ধা। তার অন্যতম পরিচয় ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে নেতৃত্ব প্রদান। ‘জাগো’ নির্মাণের পর খিজির হায়াত খান মাস্টার্স করার জন্য রফিক মামার কানাডার বাসায় ছিলেন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প শুনেছেন তার মুখে।
‘ওরা ৭ জন’-এর কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ সবই খিজির হায়াত খানের লেখা। মামাদের গল্প ও নিজের পড়াশোনায় জানা বিভিন্ন কাহিনির সমন্বয়ে ছবির কাহিনি বিন্যাস করেছেন। তবে জানান, ছবির কাহিনি এগোবে মুক্তিযুদ্ধের ৫ নং সেক্টরের ৭ জন যোদ্ধার একটা মিশন নিয়ে।
‘মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের বীরগাঁথার গল্প বলবো আমরা। সাতজন মুক্তিযোদ্ধা একটা মিশনে যায়। গল্পটার শুরু ও শেষ যুদ্ধের ময়দানে। দুদিনের মিশনে যায়, সেটা সাতদিনের হয়ে যায়। মিশনটা জটিল হয়ে যায়। আমি আসলে দর্শকদের যুদ্ধটা মাঠ পর্যায়ে কেমন হয়েছিল, যুদ্ধের ময়দানে তাদের মধ্যে কী ধরনের মনস্তত্ব কাজ করতো, তা দেখানোর চেষ্টা করবো’— বলেন খিজির হায়াত খান।
ছবির নাম ‘ওরা ৭ জন’ হলেও এটি সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের গল্প নয় বলে জানালেন খিজির।
পরিচালনা ও প্রযোজনা মিলিয়ে ৩টি ছবি নির্মাণ করেছেন। এর মধ্যে ‘জাগো’ব্যতীত সব ছবিতেই তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছবিতেও তিনি একটি চরিত্রে অভিনয় করবেন। বাকি চরিত্রগুলোতে দেশের পরিচিত অভিনয়শিল্পীরা কাজ করবেন। আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শিল্পীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।
অভিনয় ও পরিচালনা পাশাপাশি করার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমি যদি মনিটরের পিছন থেকে পরিচালনা করি তাহলে আমার শিল্পীদের মনে হতে পারে আমি তাদের সঙ্গে নেই। কিন্তু আমি যখন তাদের সঙ্গে স্ক্রলিং করবো, কাঁদায় নামবো তখন তাদের মনে হবে আমি তাদের সঙ্গে আছি।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছবিগুলোর সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ওই সময়টাকে পর্দায় ধারণ করতে পারা এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম ঠিকঠাক দেখানো। এ ব্যাপারে খিজির বলেন, ‘আমাদের ছবির লোকেশন হচ্ছে সিলেটের জৈন্তাপুর ও তামাবিল। যে জায়গাগুলো এখনও ৭১ সালের মতো অনেকটা রয়ে গেছে। আর যুদ্ধাস্ত্র কিছু ডামি আমরা চীন ও জার্মানি থেকে আনিয়েছি। কিছু আমরা বানিয়ে নিচ্ছি।’
‘ওরা ৭ জন’ প্রযোজনা করছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। এ মাসের শেষ সপ্তাহে শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সারাবাংলা/এজেডএস