Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিন চার মাস আগে থেকে মডেলিং বন্ধ রেখেছিলাম: সাদিয়া মাহি

আহমেদ জামান শিমুল
৮ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৫৭

শুক্রবার (৮ অক্টোবর) দেশের সকল সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে রাশিদ পলাশের পরিচালনায় ‘পদ্মাপুরাণ’। ছবিটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদিয়া আফরিন মাহি। নবীন এ অভিনয়শিল্পীর ‘পদ্মাপুরাণ’ যাত্রা কেমন ছিল শুনেছেন সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আহমেদ জামান শিমুল। 

 

আপনি তো রাশিদ পলাশের স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘কবর’-এ অভিনয় করেছিলেন। ওখান থেকে কি ‘পদ্মাপুরাণ’-এ সম্পৃকতা?

স্বল্পদৈর্ঘ্যটিতে অভিনয়ের সময় থেকেই আমি ‘পদ্মাপুরাণ’-এর গল্পটা মোটামুটি জানতাম। পরিচালক একদিন আমাকে বললেন, ‘আমার মনে হয় তুই চরিত্রটা পারবি’। স্বাভাবিকভাবে প্রথমে আমি একটু দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম—কেন আমাকে বলতেছে? বললেই তো হয় না, অনেক বিষয় আছে। চুল ফেলার ব্যাপারটা আগে জানতাম—তাই এটাও একটা ইস্যু ছিল, দ্বিধায় পড়ে যাওয়ার। আমি সময় নিই ভাবনার জন্য। পরে কাজটা করবো বলে জানাই।

এটা কোন সময়ের ঘটনা?

এটা ২০১৭ সালের শেষের দিকের ঘটনা। ২০১৮ সালের এপ্রিলে আমরা শুটিংয়ে গিয়েছিলাম। এটা তার ৪ থেকে ৫ মাস আগের ঘটনা।

এখানে তো পদ্মা পাড়ের একজন নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চরিত্রটি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।

এখানে আসলে নির্দিষ্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করিনি। গল্পটা মূলত পদ্মাপাড়ের— সেখানকার মানুষের জীবনযাপন নিয়ে। আমাকে দিয়ে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনযাপন তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্নভাবে বলতে দু-তিনটা চরিত্রে দেখবে।

চরিত্রগুলোতে অভিনয়ের জন্য আপনার প্রস্তুতি কেমন ছিল?

আমি তো অভিনয়ের মানুষ না। আমার ক্যারিয়ার শুরু হয় মডেলিং দিয়ে। ২০১৪ থেকে পেশাদার মডেল হিসেবে কাজ করছি। ওখান থেকে ‘কবর’-এ কাজ করা। এছাড়া আমি টুকটাক টিভিসি, ওভিসি করেছি। কিন্তু সিনেমায় অভিনয় সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। এটার জন্য স্বাভাবিকভাবে প্রস্তুতি তো থাকবেই। প্রথম সিনেমায় আমার জন্য এত বড় এবং ভার্সেটাইল চরিত্র—বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি তিন চার মাস আগে থেকে মডেলিং বন্ধ রেখেছিলাম। মডেলিং করার কারণে আমার দাঁড়ানো, কথাবার্তা সবকিছুর মধ্যে ওই ব্যাপারটা থেকে যায়। একটা সাধারণ গ্রামের মেয়ে যেভাবে দাঁড়ায়, একটা মডেল সেভাবে দাঁড়ায় না। আমার মধ্যে বিষয়গুলো থাকায় চরিত্রটার জন্য একটু সমস্যা হচ্ছিল। তাই আমি মডেলিংটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এরপর থেকে নিয়মিত পরিচালকের সঙ্গে বসেছি চিত্রনাট্য নিয়ে। রাজশাহীতে গিয়ে আমাদের একটা শিখন্ডি টিম ছিল, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এমনকি শুটিংয়ের সময় ওদের সঙ্গে থাকা, বসা— সবসময় কিছু না কিছু শেখার মধ্যে ছিলাম।

শম্পা রেজা, কায়েস চৌধুরী, সুমিত, প্রসূন আজাদ— সবাই আপনার সিনিয়র শিল্পী। তাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

সবাই অনেক উৎসাহ দিয়েছেন আমাকে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তাদের জন্য কাজটা করতে পেরেছি।

চুল ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে আপনি পরিচালককে বলেছিলেন, যদি না ফেলা যায়। পরে আবার ফেলেছেন। এ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে কীভাবে বের হয়েছেন?

ব্যাপারটা একদম শেষ মুহূর্তে ঘটেছিল। আর দ্বিধা-দ্বন্দ্বের ব্যাপারটা কী— আমি যখন যেটা করি সেটা শতভাগ করার চেষ্টা করি। মডেলিং ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করে আসছি— পছন্দ করি আরকি। যখন ছবিটা করার সিদ্ধান্ত নিই তখন তো জানি গল্পটা কী, চরিত্র কী। কিন্তু চুল তো! আর জানেনই মেয়েদের চুলের প্রতি আলাদা ভালোবাসা থাকে। ওই জায়গা থেকে একটু খারাপ লাগা কাজ করতেছিল। আমি জানি চুলটা ফেলতে হবে, তারপরও থাকে না পরিচালককে একটু বলি, দেখি! কী বলে। ওই জায়গা থেকে কনভিন্স করার চেষ্টা করা। দিনশেষে তো আমি জানি আমার এটা করতে হবে। আর একটা কমিটমেন্টের ব্যাপারও ছিল।

মডেলিংয়ের পোশাক আশাক, কথাবার্তা, হাঁটাচলা থেকে বের হতে হয়েছিল আপনাকে। এগুলো ছাড়া আর কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন কিনা?

চ্যালেঞ্জ তো অনেক ছিলই। যেমন, স্ক্রিপ্টে তো একটা ভাষায় সংলাপ ছিল, সেটা তো রপ্ত করতে হত। কিন্তু স্থানীয় ভাষা তো, দেখা যেত সেটে গিয়ে সেটা আবার সংশোধন করে শিখতে হয়েছিল। প্রথম লটে আমরা শুটিং করি রাজশাহীতে। ওখানে শিখন্ডীদের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছিল। ওদের বচনভঙ্গি, টোন, দাঁড়ানো, ওরা কীভাবে তালি দিচ্ছে — সবই শিখতে হয়েছে।

ওখানে আমি ৮ দিন ছিলাম। ওদের কাজ থেকে আসলে অনেক কিছু শিখেছি। হয়তো তালি দিতে ভুল করেছি। ওরা এসে বলতো, আমরা তো তালি এভাবে দিয় না, এভাবে দিই।

ছবির ট্রেলার, পোস্টার থেকে আমরা জানি এতে মাতৃত্বের ব্যাপার রয়েছে। আপনি সম্প্রতি মা হয়েছেন। মা হওয়ার আগে মায়ের চরিত্রে কাজ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং বটে। এ চ্যালেঞ্জ কীভাবে উত্তরেছেন? নারী হিসেবে মাতৃত্বের একটা সত্তা আগে থেকেই মেয়েদের মধ্যে থাকে—এখানে কি ব্যাপারটা কাজ করেছে?

দিনশেষে আমরা নারী তো। আমাদের মধ্যে মাতৃত্বের ব্যাপারটা থাকেই। কিছুটা হলেও আমরা অনুভূব করতে পারি। যদিও পুরোপুরি সম্ভব না মা হওয়ার আগে। সেটা এখন আমি বুঝি, সত্যিকারের মা হওয়ার অনুভূতি একদমই আলাদা। তারপরও একজন প্রেগনেন্ট নারী কীভাবে হাঁটাচলা করে, এ বিষয়গুলো আমাদের সেটে যারা মা হয়েছেন তারা দেখিয়ে দিয়েছিলন।

শুটিংয়ের সময়কার কোন অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যায় কি?

দ্বিতীয় লটে শুটিংয়ের সময় আমরা ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কবলে পড়েছিলাম। এছাড়া আমাদের শুটিং হতো চরের মধ্যে। বছরে তিন থেকে চার মাস চরটা থাকে। বাকি সময়ে পানির নিচে থাকে। প্রতিদিন ভোর ছয়টায় রওনা দিয়ে সকাল আটটার মধ্যে শুটিং শুরু করতাম। আবার ওই চরে এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে শুটিং করতে হত, যেহেতু এরপরে বর্ষা শুরু হয়ে যাবে। ফলে ওই সময় তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ সেলিয়াস ছিল। তার উপর চরের বালুতে তো গরম বেশি ছিল। রোজাও ছিল একইসময়ে। কোনো ওয়াশরুম ছিল না। ওয়াশরুমের জন্য দুঘণ্টা ট্রলারে করে যেত হতো বা বাইকে করে দেড় ঘণ্টা যেতে হত।

আপনি নিশ্চয়ই ছবিটির প্রেমে পড়েছেন, যার কারণে আপনি আপনার মেয়ের নামও রেখেছেন পদ্মা। সে ভালোবাসা দর্শকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবেন কি?

আমরা তো ভালোবাসা থেকেই সিনেমাটি করেছি। গতানুগতিক অনেক আয়োজন করে যেভাবে সিনেমা করে সেটা আমরা করতে পারিনি। নিজেরা নিজেরা চেষ্টা করেছি। প্রত্যেকটা মানুষ ভালোবেসে কাজটা করেছে। তাই আশা করছি সিনেমা দর্শকদের মনে থাকবে, মন কাড়বে।

সারাবাংলা/এজেডএস

পদ্মাপুরাণ সাদিয়া আফরিন মাহি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর