Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাচ্চু ভাই ছিলেন একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ান: বাপ্পা মজুমদার

বাপ্পা মজুমদার, সংগীতশিল্পী
১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৪০

আজ (১৮ অক্টোবর) বাংলা সঙ্গীত অঙ্গনের অসামান্য প্রতিভা, অসম্ভব শ্রোতাপ্রিয় শিল্পী, ব্যান্ডতারকা আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তাকে স্মরণ করে লিখেছেন আরেক প্রতিভাবান শিল্পী বাপ্পা মজুমদার।

আমি তখন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। গিটার বাজাই, গানও গাই। মানে সংগীতকে সঙ্গে করেই আমার দিনযাপন চলছে। ১৯৯২ সালের কথা বলছি।

সেবার বামবা’র (বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড এসোসিয়েশন) কনসার্ট হলো ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। বড় ভাইয়ের (পার্থ মজুমদার) একটা ব্যান্ড ছিল ‘ইনসাইট’ নামে। কনসার্টে আমি সেই ব্যান্ডের গেস্ট গিটারিস্ট হয়ে মঞ্চে উঠেছিলাম। ঐ একই মঞ্চে দেখেছিলাম এলআরবি-কে পরিবেশন করতে। যতদূর মনে পড়ে সেটাই ছিল বামবা’র কনসার্টে এলআরবি’র প্রথম অংশগ্রহন।

এলআরবি সেখানে ঘুম ভাঙা শহর, হকার, শেষ কথা (এস.আই.টুটুল) গেয়েছিল। এইভাবে এলআরবি-কে চিনলাম। বাচ্চু ভাইকে চিনলাম। কিন্তু বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে সেবার কোনও কথা হয়নি।

১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে হাসান আবিদুর রহমান জুয়েল ভাইয়ের একটা অ্যালবামের কাজের সঙ্গে যুক্ত হলাম। অ্যালবামটির ‘আমার আছে অন্ধকার’ নামের একটি গানের সুর করলাম আমি। আর সেই গানের সংগীতায়োজন করলেন বাচ্চু ভাই। গানটির যখন রেকর্ডিং হয়, তখন আমি স্টুডিওতে ছিলাম। বাচ্চু ভাইয়ের কাজ দেখে আমি মুগ্ধ। কাজ শেষ করে এসে তিনি আমাকে বললেন-‘কিরে কিঠ হয়েছে তো?’

বাচ্চু ভাইয়ের কথা শুনে আমি কেমন যেন আরও কাচুমাচু হয়ে গেলাম। আমি জবাব দিলাম-কি বলেন বাচ্চু ভাই। আমার খুব ভালো লাগছে যে আপনি আমার সুরে সংগীতায়োজন করলেন।

সেবারই আমাদের আনুষ্ঠানিক পরিচয়। এর আগে বাচ্চু ভাই আমাকে চিনতেন পার্থ’র ছোট ভাই বা বারীন মজুমদারের ছেলে হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে যখন আরও মেশার সুযোগ হয় তখন ধীরে ধীরে আরও বুঝতে পেরেছি বাচ্চু ভাই ছিলেন পরিপূর্ণ একজন মিউজিশিয়ান। তিনি সুরকার, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী এবং গিটারিস্ট। এশিয়ার মধ্যে তিনি ওয়ান অব দ্য গ্রেটেস্ট গিটারিস্ট-এটা আমি কোনো দ্বিধা ছাড়া বলতে চাই।

কিন্তু শুধু গিটারিস্ট হিসেবে নয়, আমি তাকে গীতিকার-সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও সমান গুরুত্ব দেই। কারণ আশি-নব্বই দশকে আরও অনেক গানের সঙ্গে বাচ্চু ভাইয়ের মানে এলআরবি’র গানও ছিল মানুষের মনের খোরাক। নিজের সুর ও সংগীতে তিনি সেমি ক্ল্যাসিক্যাল, হার্ডরক এমনকি ফোক সুরের প্রাধান্য রেখেছেন। এগুলো তো কমপ্লিট মিউজিশিয়ান না হলে সম্ভব না।

আমাদের ব্যান্ড করার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন বাচ্চু ভাইসহ তার সমসাময়িক মিউজিশিয়ানরা। ব্যান্ড সংগীত মানে পাশ্চাত্য সংগীত, যাকে একসময় অপসংস্কৃতি বলে নাক সিঁটকানো হতো। সেই পাশ্চাত্য সুর ও সংগীত বাচ্চু ভাইরা বাংলা ঢংয়ে পরিবেশন করেছেন। এমন ভূমিকার জন্যই তো আমরা বা আমাদের পরে অনেকেই ব্যান্ড করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

আমার মনে আছে, একবার এলআরবি’র ডাবল অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছিল। আমি তখন সেই গানগুলো শুনতাম আর বাসায় প্র্যাকটিস করতাম। গান এবং বাচ্চু ভাইয়ের গিটার- এই দুই ছিল আমার মতো আরও বহু কিশোর বা তরুণের ধ্যানজ্ঞান।

আর মানুষ হিসেবেও বাচ্চু ভাই ছিলেন অসাধারন। বিশেষ করে তরুণদের জন্য তার যে ভালোবাসা, তা ছিল অকল্পনীয়। তরুণদের জন্য জায়গা করে দেওয়া বা একটা ভালো পরিবেশ তৈরি করার জন্য যখন সুযোগ পেয়েছেন তখনই কাজ করেছেন।

একইসঙ্গে ছিলেন ভীষণ রকমের অভিমানি। শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মানের জন্য তার কণ্ঠ ছিল বরাবরই সোচ্চার।

বিজ্ঞাপন

আমার সঙ্গে যে বাচ্চু ভাইয়ের নিয়মিত দেখা হতো এমন না। স্টেজে গান করতে গেলে ব্যাক স্টেজই ছিল আমাদের আড্ডা ও খবর নেওয়ার একমাত্র জায়গা। বাচ্চু ভাই আমাকে দেখলেই খোঁজ-খবর নিতেন। বাড়ির লোকদের কথা জিজ্ঞেস করতেন।

তার আরেকটা বিষয় আমার খুব ভালো লাগত, এখনো লাগে। সেটি হলো-বাচ্চু ভাই তার মা’কে খুব ভালোবাসতেন। এরকম যে মা একদিকে আর পুরো পৃথিবী আরেকদিকে। এটি আমাদের সবার জন্য শিক্ষণীয় হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

২০১৮, ১৮ অক্টোবর। দিনটির প্রথম ফোনটাই ছিল বাচ্চু ভাইয়ের মৃত্যুর খবরের। খবর পেয়েই আমি গিয়েছিলাম তাকে শেষবারের মতো দেখতে। সাধারণত আমি যাইনা, কিন্তু বাচ্চু ভাইকে দেখতে গিয়েছিলাম। তাকে শেষবারের মতো স্পর্শ করেও এসেছি।

অনুলিখন: প্রতীক আকবর (পুনঃপ্রকাশিত)

সারাবাংলা/এএসজি

আইয়ুব বাচ্চু আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর