শাঁওলি মিত্র: বাংলা রঙ্গমঞ্চে একটা যুগের অবসান
১৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:০৪
রোববার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে নীরবেই চলে গেলেন বাংলা থিয়েটারের ‘নাথবতী অনাথবৎ’ খ্যাত শাঁওলি মিত্র। জীবনের মঞ্চ থেকে চুপিসাড়ে বিদায় নিলেন শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের এই কন্যা। খসে পড়ল বাংলা নাট্যজগতের আরও এক তারা। শেষ হল বাংলার রঙ্গমঞ্চের একটা যুগ। বাবা শম্ভু মিত্রের মতোই শাঁওলির শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে যেন ‘ফুল’ দিয়ে বিদায় জানানো না হয়। এমন কি তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরই যেন তার মিত্রের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আনা হয়। তার সেই ইচ্ছা পালন করেছেন প্রিয়জনেরা।

শাঁওলি মিত্র
বাংলা রঙ্গমঞ্চের দুই দাপুটে ব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের একমাত্র কন্যা শাঁওলি মিত্রের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। অভিনয় যেন তার রক্তে। খুব ছোট বয়স থেকেই সাবলীল মঞ্চাভিনয়ে। নাটক নিয়েই উচ্চশিক্ষা তার। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটক নিয়ে স্নাতোকত্তোর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথমের দিকে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরবর্তী সময়ে ‘পঞ্চম বৈদিক’ নামে নিজস্ব নাটকের দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। সেই শুরু, এরপর একে একে ‘নাথবতী অনাথবত্’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’, ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘কথা অমৃতসমান’-এর মতো বহুল জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন শাঁওলি মিত্র।
অভিনয় জীবনের শুরুতে তিনি কাজ করেছিলেন ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে। ‘যুক্তি, তক্কো আর গল্প’ ছবিতে তরুণী ‘বঙ্গবালা’ হয়ে ধরা দিয়েছিলেন তিনি। বুঝিয়ে ছিলেন রুপোলি পর্দাতেও কতটা ম্যাজিক্যাল তিনি। কিন্তু থিয়েটার নিবেদিতপ্রাণ শাঁওলি মিত্র সেইভাবে সিনেমার জগতে কাজ করেননি। কেন? এই প্রশ্নের উত্তরটা বোধহয় তিনি জানেন!

শাঁওলির শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে যেন ‘ফুল’ দিয়ে বিদায় জানানো না হয়
অভিনেত্রীর পাশাপাশি লেখিকা হিসাবেও যথেষ্ট নামডাক ছিল তার। ‘গণনাট্য, নবনাট্য, সৎনাট্য ও শম্ভু মিত্র’তে বাবার অভিনয় জীবনের কথা লিখেছেন তিনি। বঙ্গীয় আকাদেমির অভিধানের প্রসারে কাজ করেছেন তিনি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে করেছেন একাধিক মূল্যবান কাজ। ১৯৯১ সালে ‘নাথবতী অনাথবৎ’ বইটির জন্য আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন শাঁওলি মিত্র। দীর্ঘ কর্মজীবনে অজস্র স্বীকৃতি এসেছে তার ঝুলিতে। ২০০৩ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন, ২০০৯ সালে ভারত সরকার এই নাট্য ব্যক্তিত্বকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে। পশ্চিমবাংলার রাজ্য সরকার ২০১৩ সালে বঙ্গ বিভূষণ খেতাব দেয় তাকে।
(ভারতীয় গণমাধ্যম অবলম্বনে)
সারাবাংলা/এএসজি