‘অপমানিত’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ফিরিয়ে দিলেন পদ্মশ্রীর প্রস্তাব
২৫ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৩৩
ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ ফিরিয়ে দিলেন বাংলা গানের প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। জানা গেছে, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে তাকে এই সম্মাননার জন্য মনোনীত করা হয়েছিল, কিন্তু অত্যন্ত অপমানিত এবং অসম্মানিত বোধ করে তিনি ফিরিয়ে দিলেন ‘পদ্মশ্রী’।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) শেষ বিকেলে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সন্ধ্যা মুখোপ্যাধ্যায়কে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিংবদন্তি শিল্পী ইদানীং খুব অসুস্থ। দিনচারেক আগে টয়লেটে পড়ে গিয়েছিলেন। সামান্য সর্দিকাশিও হয়েছে। সব মিলিয়ে এই নব্বই বছরে এতটাই অসুস্থ যে, সচরাচর কোন ফোনই ধরছেন না। তবু দিল্লী থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরি ফোন বলায় কোনও রকমে ধরেন। তাকে হিন্দিতে বলা হয় আমরা আগামীকাল আপনাকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করতে চাই। আপনি কি নেবেন? তাহলে অন্যান্য পুরস্কার প্রাপকদের সঙ্গে আগামীকাল সকালের মধ্যে আপনার নামও ঘোষণা করা হবে?
ওই প্রতিবেদন আরও জানা গেছে, এমন একটি ফোন পেয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রথমে কিছুটা থমকে যান। এই ভঙ্গিতে যে পদ্ম খেতাব দেওয়া হতে পারে তিনি ভাবতেই পারেননি। তারপর তার মনে হয় এতবছর ধরে সংগীতের জন্য এতো কন্ট্রিবিউশনের পর ‘পদ্মশ্রী’? তার সমসাময়িকেরা যেখানে যোগ্য কারণেই কেউ ভারতরত্ন, কেউ পদ্মবিভূষণ বা পদ্মভূষণ, সেখানে তিনি কিনা ‘পদ্মশ্রী’?- যে সম্মানে মুম্বাই সঙ্গীত জগতের অনেকেই ভূষিত। তার আরও খারাপ লাগে শেষমুহূর্তে এমন প্রস্তাবনার ধরনে। বিশেষ করে সিনিয়রিটি এবং কন্ট্রিবিউশনের কোনও তোয়াক্কা না করে যে ভঙ্গিতে তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি সাথেসাথেই জানিয়ে দেন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সে প্রতিনিধিকে বলেন , ‘মেরা দিল নাহি চাহতা হায়। আর একটা কথা জেনে রাখুন- আমার শ্রোতারাই আমার পুরস্কার’।
ভারতীয় ওই সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অন্ত্যন্ত অভিমানী এবং রাগত ভঙ্গিতে শিল্পী বললেন, ‘এরা কী মনে করে বলুন তো আমার নব্বই বছরে এসে এভাবে অপমান করবে? শেষ মুহূর্তে এসে এভাবে প্রস্তাব দিচ্ছে পদ্ম পুরস্কারের। তাছাড়া আমি ভারতবর্ষে সেই বিরল গায়কদের একজন যে অসংখ্য বাণিজ্যিক ছবির গান শুধু গাইনি, অনেক ক্লাসিক্যাল রেকর্ডও করেছি। অ্যালবাম বের হয়েছে বিভিন্ন ধরণের গানের। আমি একজন ক্লাসিক্যাল শিল্পীও। উস্তাদ গুলাম আলি খানের কাছে গান শিখেছি। উস্তাদ আমির খানের কাছে তালিম নিয়েছি। একজন নামী ক্ল্যাসিক্যাল শিল্পীকে দেখান- যাকে এই ভাবে পদ্মশ্রী দিয়ে অসম্মান করা হয়েছে?’ গলা ধরে আসছিল শিল্পীর কথা বলতে বলতে। বোঝাই যাচ্ছিল তিনি অসুস্থ। ফোন রাখার আগে শুধু বললেন, ‘বাংলার মানুষ আশা করি বুঝবে কোন যন্ত্রণা থেকে পদ্ম খেতাব ফিরিয়ে দিলাম। সত্যি আমার এসব খেতাবের দরকার নেই। জীবনের প্রান্তে এসে ওদের এতগুলো বছরের বুক ভরা ভালোবাসাই আমার পুরস্কার।’
উল্লেখ্য, বাংলা ও হিন্দি গানের জগতের আরেক কিংবদন্তি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও ১৯৮৭ সালে ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন যেটা তিনি বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এমন কি ১৯৭০ সালেও একইভাবে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ‘পদ্মশ্রী’ ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা। শিল্পকলা, শিক্ষা, বাণিজ্য, সাহিত্য, বিজ্ঞান, খেলাধূলা, সমাজসেবা ও সরকারি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ভারত সরকার এই সম্মান প্রদান করেন। এই সম্মাননা সাধারণত ভারতের নাগরিকদেরই প্রদান করা হয়। ভারতীয় সম্মাননার মর্যাদাক্রম অনুসারে, পদ্মশ্রীর স্থান ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণ ও পদ্মভূষণের পরে। পদকের একদিকে পদ্মফুলের উপরে ও নিচে ‘পদ্ম’ ও ‘শ্রী’ শব্দদুটি খচিত আছে। অপর দিকে বার্নিসড ব্রোঞ্জের উপর বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারের চিত্র রয়েছে। সকল খোদাই লিপি সাদা সোনালি রঙে চিত্রিত। ২০২১ সাল অবধি মোট ৩২২৫ জন এই সম্মান পেয়েছেন।
সারাবাংলা/এএসজি