প্রযোজক একেএম জাহাঙ্গীরের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:০৫
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) চলচ্চিত্রের মুভি মোগলখ্যাত একেএম জাহাঙ্গীর খানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী । ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবার থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
এ কে এম জাহাঙ্গীর স্মরণে তার পিতার প্রতিষ্ঠিত কমলাপুর মুগদাপাড়া বাজার কবরস্থান জামে মসজিদে মসজিদে বাদ আসর ও গুলশানের সেন্ট্রাল জামে মসজিদে (সাবেক ভোলা মসজিদ) বাদ মাগরিব মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। তার কন্যা ডা. জাহানারা ফেরদৌস ঝুমু এবং পুত্র এ কে এম আলমগীর খান ও এ কে এম ইমরান খান সবাইকে বাবার দোয়া মাহফিলে অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। মুগদা মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে মা-বাবার কবরের মাঝেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মুভি মোগল এ কে এম জাহাঙ্গীর খান।
স্বাধীনতার পর যে কজন দাপুটে প্রযোজক বাংলাদেশে চলচ্চিত্রশিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছেন তাদের অন্যতম এ কে এম জাহাঙ্গীর খান। ১৯৭৮ সালে ‘চিত্রালী’ সম্পাদক প্রয়াত আহমদ জামান চৌধুরী তাকে ‘মুভি মোগল’ খেতাব দেন। তখন থেকে তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি ঢাকার চলচ্চিত্রজগতে এ নামেই পরিচিত হয়ে আসছেন।
এ কে এম জাহাঙ্গীর খান প্রথম আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় ‘নয়নমনি’ প্রযোজনা করেন। ছবিটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এরপর একে একে প্রযোজনা করেন ‘তুফান’, ‘বিজয়িনী সোনাভান’, ‘রূপের রাণী চোরের রাজা’, ‘রাজকন্যা’, ‘বাদল’, ‘কুদরত’, ‘আলতাবানু’, ‘সওদাগর’, ‘রাজ সিংহাসন’, ‘তিন বাহাদুর’, ‘পদ্মাবতী’, ‘সম্রাট’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘ডাকু মর্জিনা’, ‘সোনাই বন্ধু’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘রঙিন রাখালবন্ধু’, ‘শুভদা’, ‘রঙিন কাঞ্চন মালা’, ‘সাগর কন্যা’,‘শীষমহল’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘ডিসকো ড্যান্সার’, ‘বাবার আদেশ’, ‘আমার মা’সহ অসংখ্য সিনেমা।
এ ছবিগুলো প্রযোজনার আগে তিনি আলমগীর পিকচার্সের ব্যানারে পরিবেশনা করেন ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’, ‘এখানে আকাশ নীল’, ‘অপবাদ’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘কি যে করি’, ‘আলিঙ্গন’, ‘সেতু’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘মা’, ‘নোলক’ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এ কে এম জাহাঙ্গীর খানের অবদান অনেক। তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এসেছিলেন ১৯৭৩ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর। তবে তারও আগে থেকে সিনেমার পরিবেশক ছিলেন। বাবুল চৌধুরীর ‘সেতু’ সিনেমা দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন। মূলত ‘মা’ ছবি দিয়ে তার প্রযোজনা শুরু হয়।
১৯৮৬ সালে তার প্রযোজিত ও চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শুভদা’ ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ১৩টি সম্মাননা অর্জন করে অনন্য রেকর্ড গড়ে। ১৯৭৬ সালে প্রথম তিনি প্রযোজনা করেন ‘নয়নমণি’ ছবিটি। ৪৩টি ছবির প্রযোজক ও পরিবেশক তিনি।
তার প্রযোজিত সিনেমা টানা ২৫ সপ্তাহ, ৮১ সপ্তাহ, এমনকি ১০৩ সপ্তাহ ধরে প্রদর্শিত হয়েছে। অর্থাৎ রজতজয়ন্তী, সুবর্ণজয়ন্তী, হীরকজয়ন্তী ছুঁয়ে সগৌরবে চলেছে। বাংলাদেশে প্রথম যে ছবিটি টানা ১০৩ সপ্তাহ চলার রেকর্ড গড়েছিল সেটি হলো আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমণি’। ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ছবিটি তৎকালীন সময়ে প্রায় তিন কোটি টাকার ব্যবসা করে।
২০১৬ সালে এ কে এম জাহাঙ্গীর খান তার প্রযোজনা সংস্থা আলমগীর পিকচার্সের ব্যানারে নির্মিত ৪৩টি ছবির প্রিন্ট, পোস্টার, ফটোসেট, অ্যালবাম বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভকে প্রদান করেন।
১৯৩৯ সালের ২১ এপ্রিল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম চিওড়া কাজীবাড়ি মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পুরো নাম আবুল খায়ের মো. জাহাঙ্গীর খান।
সারাবাংলা/এজেডএস