সংগীতের রথী-মহারথীর বিদায়ে শোকের ভূমি কলকাতা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৪:১৯
মাত্র একটি রাতের ব্যবধানে দুই কিংবদন্তি সন্তানকে হারালো সংস্কৃতির শহর কলকাতা। এতোটুকু বললেও কিছুই বলা হবে না; যদি না বলা হয়, কলকাতা তার এমন দুই সন্তানকে হারিয়েছে- যারা কলকাতাকে মাথায় নিয়ে বিশ্বভ্রমণ করিয়েছেন। জন্মভূমিকে গৌরবে ভাসিয়েছেন। নিজ শহরকে পৌঁছে দিয়েছেন পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। সেই সন্তানদের হারিয়ে শোকে মূহ্যমান কলকাতা। আর নিজ ভাইবোনদের হারিয়ে শোকাহত শহরটির সংস্কৃতি অঙ্গনসহ আপামর জনসাধারণ।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ৯০ বছরের জীবনের ইতি টেনে পরলোকে পাড়ি জমান গীতশ্রী খ্যাত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেই শোকের মাতমে যখন ভারী হয়ে উঠেছে কলকাতার বুক, কান্নায় ভাসছে পুরো শহর। শহরের মানুষগুলো হয়তবা তখনও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সুরের জাদুতে হারিয়ে যাওয়া সুখসময়ের স্মৃতি হাতড়ে ফিরছে। ঠিক তখনই মধ্যরাতে এলো মুম্বাই থেকে আরেক দুঃসংবাদ। সন্ধ্যার পথের যাত্রী হয়েছেন সুরস্রস্টা ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী। যার হাতে নতুন মাত্রা পেয়েছিল বাংলার আধুনিক গান। যার গানে নৃত্যের তাল খুঁজে পেয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, যার গানে যাত্রা শুরু হয়েছে কিংবদন্তি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর।
এই দুই কিংবদন্তির মৃত্যুর পর একের পর এক শোকবার্তা ভেসে উঠছে দেশটির গণমাধ্যমগুলোর পাতায় পাতায়। সেখানে আছড়ে পড়ছে হাজারো স্মৃতি, হাজারো না বলা কথা। তাদের মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছেন দীর্ঘপথ চলার সহকর্মী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষজন।
জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছেন, গতরাত থেকেই এক অজানা উদ্বেগ নিয়ে শুতে গিয়েছিলাম। কিছুতেই ঘুম আসছিল না। বারবার বাপ্পিদার মুখটা মনে পড়ছিল। রেমার কাছে খবর নিলাম। জানলাম, বাপ্পিদার শরীরটা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ভোর হতে না হতেই সেই খবর, বাপ্পিদা নেই।
তিনি আরও লিখেছেন, সঙ্গীতে অসীম শূন্যতা আজ। আমার ব্যক্তি জীবনেও নিঃশব্দ হাহাকার। এগুলো লিখে বোঝানো যায় না। জন্ম থেকে উনি (বাপ্পি লাহিড়ী) আমার পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু পারিবারিক সূত্রে, কাজের সূত্রে, নিত্য যাতায়াতের মাধ্যমে যে নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়েছিল, তা ঝট করে খসে পড়ল।
এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা প্রসেনজিৎ বলেন, বাপ্পি দা যা সৃষ্টি করে গিয়েছেন, না রীতিমতো ভাণ্ডার। তিনি যা সৃষ্টি করে গিয়েছেন, সঙ্গীত এবং সিনেমা জগতের ইতিহাসে সেই অবদান অসামান্য। বাংলা-হিন্দি ছবির জগতের পাশাপাশি দেশের বাইরেও তার জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা যে, ভাবা যায় না। হিন্দি ছবিতে মানুষটা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করে গিয়েছেন। বাপ্পিদার চলে যাওয়াটা বড্ড আগে হয়ে গেল। আমি এখনও বিশ্বাস করতে চাইছি না। বাপ্পিদা যেখানেই থাকবেন, ভাল থাকবেন। আমরা তাকে মনে রাখব।’
সন্ধ্যার মৃত্যুর খবরে উত্তরবঙ্গ সফর মাঝপথে ছেড়েই কলকাতায় ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি ছিলেন কোচবিহারে। সেখান থেকে মৃত্যুর খবর পেয়েই কলকাতায় প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজের সফরসূচি কাঁটছাট করেন মমতা। জানিয়ে দেন, বুধবার সরকারি তত্ত্বাবধানেই হবে সন্ধ্যার শেষকৃত্য।
তাদের মৃত্যুর হারানোর শোক কম ছিল না বাংলাদেশেও। দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুই কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। ভক্তরা শোকের মাতম তুলেছেন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সংস্কৃতি অঙ্গনের সর্বত্র আলোচনায় এই কিংবদন্তিরা।
এ মাসের শুরুতেই ৬ ফেব্রুয়ারি চিরবিদায় নেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। ১০ দিনের ব্যবধানে চলে গেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও বাপ্পি লাহিড়ী। এই শোক ভুলতে দুই বাংলা, ভারত কিংবা উপ-মহাদেশের লেগে যেতে পারে কয়েক দশক। শূন্যস্থান পূরণ! সে তো আলোচনার উর্ধ্বে…
সারাবাংলা/এএম