ডিসির আদেশে ‘গলুই’ প্রদর্শনী বন্ধের অভিযোগ, অস্বীকার প্রশাসনের
৯ মে ২০২২ ১৫:১৪
এবারের ঈদে মুক্তি পেয়েছে সরকারি অনুদানের ছবি ‘গলুই’। এস এ হক অলিক পরিচালিত ছবিটির বিকল্প প্রদর্শনী চলছিলো জামালপুরের জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়াম, ফরিদুল হক অডিটোরিয়াম, নুরুন্নাহার অডিটোরিয়মে। শাকিব খান ও পূজা চেরী অভিনীত ছবিটি বেশ সাড়া ফেলেছিল জেলাটিতে। কিন্তু জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুর্শেদা জামান ছবিটির সকল বিকল্প প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিচালক। তবে প্রদর্শনী বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
এস এ হক অলিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইসলামপুরের ফরিদুল হক অডিটোরিয়ামে তিন দিন (৫ মে থেকে) আগে প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাদারপুরের নুরুন্নাহাআর অডিটোরিয়ামে আজকে (৯ মে, রবিবার) চলবে। কালকে থেকে আর চলবে না। শিল্পকলা একাডেমি থেকে জানালো, ওটাও কালকে থেকে বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। ওনাদের যুক্তি হচ্ছে ১৯১৮ সালের আইনে নাকি আছে সিনেমা হল ব্যতীত অন্য কোন জায়গায় ছবির বাণিজ্যিক প্রদর্শনী নিষিদ্ধ এবং ডিসি চাইলে যেকোন সময় বন্ধ করে দিতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘জামালপুরে মেলান্দহ ব্যতীত কোন সিনেমা হল নেই। তাই আমরা বিকল্প প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলাম। তাছাড়া ছবিটির শুটিং হয়েছে ওখানে। দর্শকদের আলাদা একটা চাহিদা ছিল ছবিটি নিয়ে। এমনিই আমাদের দেশে হল সংকট। আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছিলাম। কিন্তু ওনারা ইসলামপুরে দুপুরের শোর বিরতির সময় ইউএনওকে পাঠিয়ে শো বন্ধ করে দেন। আমরা দর্শকদের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়। এমনকি বিকেলের শোয়ের টিকেট বিক্রি হলেও তা ফেরত দিই। আমরা বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলাম।’
অলিক আরও জানান, পূজা জামালপুরে ছবির প্রমোশনে যান ৭ মে। সেদিনও ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল প্রশাসন। তখন স্থানীয় এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে অনুরোধ করে প্রদর্শনী চালু রাখেন তারা।
এ ব্যাপারে জানতে বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামানের অফিসিয়াল মোবাইল নম্বর ও টেলিফোন নম্বরে কল ও মেসেজ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোন উত্তর দেননি। তবে এ ব্যাপারে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেসুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার।
‘গলুই’-এর প্রদর্শনী কেন এবং কোন আইনের বলে বন্ধ করা হয়েছে? এমন প্রশ্নে মোকলেসুর রহমান উল্টো প্রশ্ন করেন। ‘কীভাবে বন্ধ করে দিয়েছি। কোথায় প্রদর্শনী বন্ধ করা হয়েছে। এভাবে কোন কিছু তো আমাদের জানা নেই। চিঠিপত্র পেয়েছে আপনি? কেউ আপনার কাছে অভিযোগ করলে তা যাচাই বাছাই করেন। সিনেমা হলে কি প্রদর্শনী বন্ধ করা হয়েছে?’
সিনেমা হলে নয়, অডিটোরিয়ামে বন্ধ করেছেন। ‘অডিটোরিয়ামে কি বাণিজ্যিক প্রদর্শনী করা যায়? এ ব্যাপারে ওনাদের সঙ্গে কথা বলেন। যাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন তারা বন্ধ করেছেন কিনা, জিজ্ঞেস করেন। সরকারি অডিটোরিয়াম, ইদের বন্ধের পর অফিস আদালত খুলে দিয়েছে, নানা কারণে লাগতেও পারে।ভালো করে জানেন। উনি কোন আইনে চালাচ্ছিলেন সরকারি অডিটোরিয়াম,’— বলেন মোকলেসুর রহমান।
আইনটা তো পরিচালক প্রযোজক জানেন না। মোহাম্মদ মোকলেসুর রহমান বলেন, ‘আমরা তো জানি সিনেমা চলবে সিনেমা হলে। আমরা কোন সিনেমা হলে প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছি কি?’
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (চলচ্চিত্র-২) মো. সাইফুল ইসলাম প্রথমে সারাবাংলাকে বলেন, ‘হলের বাইরে চাইলে তো অডিটোরিয়ামে সিনেমা দেখানো যায়।’ তাহলে জামালপুরের জেলা প্রশাসন কীভাবে বন্ধ করলো? তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় ডিসি সাহেব আইনের বলেই করেছেন। এখন কোন আইনে করেছেন তা আমার ভালো জানা নেই।’
১৯১৮ সালের কোন আইন বলে এ প্রদর্শনী বন্ধ করা হয়েছে তা জানাতে পারেননি এস এ হক অলিকও। তবে সারাবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯১৮ সালের আইনটি হচ্ছে, দ্য সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট। সে আইনের ৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে লাইসেন্সকৃত স্থান ব্যতীত অন্য কোথাও সিনেমার প্রদর্শনী দিতে পারবেন না। যদি করেন তাহলে এ আইনের মাধ্যমে যেকোন কোন শর্ত ও বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে।
মোকলেসুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনারা এ ধারা বলে প্রদর্শনী বন্ধ বা নিষেধ করেছেন? তিনি বলেন, ‘আমরা কোন কিছু নিষেধ করিনি।’
এদিকে পরিচালক এস এ হক অলিক বলেন, ওনারা আমাদের কোন চিঠিপত্র দেননি। ওনাদের লোক গিয়ে প্রদর্শনী বন্ধ করেছেন। আমাদের শুধু বলেছেন ১৯১৮ সালের একটা আইনে নাকি জেলা প্রশাসক চাইলে এটা পারেন।
এর পিছনে কারও কোন ইন্ধন রয়েছে কিনা? ‘এখন গলুই ভালো চলছে দেখে হয়ত অনেকের হিংসে হচ্ছে। তাই এর যাত্রাকে থামিয়ে দিতে চাইছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সিনেমার ভালোর জন্য যা যা করা লাগে তাতে যেন সাহায্য করা হয়। সেখানে এভাবে প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া দুঃখজনক। আপনি দেখেন দেশের অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ। এভাবে প্রদর্শনী বন্ধ দিলে তো আবার জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে,’— বলেন অলিক।
পুরো ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘আমরা কালকে কথা বলেছিলাম জামালপুরের ডিসির সঙ্গে। উনি আমাদের সঙ্গে আজকে (রোববার) কথা বলার কথা রয়েছে। আমরা এ ঘটনায় নিন্দা জানাচ্ছি। যেখানে চলচ্চিত্র ধ্বংসপ্রায় সেখানে ১৯১৮ সালের আইন দেখিয়ে প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া দুঃখজনক। এ ছবি সরকারি অনুদানের ছবি। সেখানে তারা হাত দিয়েছেন। অত্যন্ত অন্যায়ভাবে এটি করেছেন তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি কাদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করা। তারা অলিকের ছবির বিরুদ্ধে নেমেছে। আমরা এর ঘোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এস এ হক অলিক জানান রোববার বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে এ নিয়ে মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। তারা আশা করছেন খুব শিগগিরই এর প্রতিকার পাবেন।
সারাবাংলা/এজেডএস
এস এ হক অলিক গলুই জামালপুর জেলা প্রশাসক ডিসি পূজা চেরী প্রদর্শনী বন্ধ শাকিব খান