কিডনি বিক্রি করতে চান সায়মন তারিক!
২৫ মে ২০২২ ১৯:৩১
হুট করে বুধবার (২৫ মে) বিকেলে চলচ্চিত্র পরিচালক সায়মন তারিকের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে সবার দৃষ্টি আটকে যায়। যেখানে তিনি কিডনি বিক্রি করতে চান বলে জানান। এর কিছুক্ষণ পর পোস্টটি সংশোধন করে দেহ ও চক্ষুদান করার কথাও যুক্ত করেন তাতে। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে সারাবাংলা কথা বলে সায়মন তারিকের সঙ্গে। জানার চেষ্টা করে কেন এ ধরনের পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
জীবন যুদ্ধে কিছুটা পরাজিত সায়মন তারিক। অনেক বেশি হতাশার সুর তার কণ্ঠে। খুব একটা কিছু বলতে চাচ্ছিলেন না। এ ধরনের স্ট্যাটাসের পিছনের কারণ না বলে অন্যভাবে উত্তর দেন। ‘দুঃখ, মান-অভিমান থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি প্রথমে আমার চক্ষু দান করবো, এরপর দেহটা দিয়ে যাবো। এগুলো যখন দিয়ে যাবো তখন কিডনি রেখে কী লাভ হবে? তাই সেটাও বিক্রি করে দিবো।’
চোখ কিংবা দেহ মানুষ তার মৃত্যুর পর দান করতে পারে। এর জন্য আগে থেকে কাগজপত্র করে যেতে হয়। অন্যদিকে কিডনি বা শরীরের কোন অঙ্গ আইনত বিক্রি করা যায় না, দান করা যায়। তাহলে নিশ্চয়ই এর পিছনে বিশাল হতাশা কাজ করেছে সায়মন তারিকের। কিছুটা উঠে আসে যখন তিনি বলেন, ‘আজকে পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, স্ত্রী-সন্তানকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করছে লোকজন। কেনো করছে? এর পিছনে কারণ হিসেবে পাওয়া যায় বিশাল ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পারা।’
শুরুর চেয়ে কিছুটা সহজ হলেন সায়মন তারিক। এবার জানালেন তিনিও বেশ বড় অংকের ঋণে পড়েছেন। সংসার চালানোর মত অর্থ হাতে নেই। নানা কারণে ব্যবসা বাণিজ্যও করতে পারছেন না। অনেক দিন যাবত চলচ্চিত্র পরিচালনাও করছেন না। সায়মন বলেন, ‘একজন প্রযোজককে দিয়ে কীভাবে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করাবো। তার বিনিয়োগ ফিরে আসার গ্যারান্টি কী? ছবি প্রদর্শনই বা কোথায় করবো। এজন্য প্রযোজকদের কাছে যেতেও ভয় লাগে।’
‘তাই কিডনি বিক্রি করে যদি কিছু অর্থ পাই, তাতে হয়তো ঋণের বোঝা কিছুটা কমতো। এটা ঠিক আইনত এটা করা যায় না। কিন্তু কী করবো? এটা ছাড়া তো উপায় দেখছি না।’
১৯৮৭ সালের ৩০ আগস্ট সায়মন নায়ক রুবেলের মাধ্যমে আহম্মেদ সাত্তারের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘এ চোখে শুধু তুমি’। তারপর একে একে পরিচালনা করেন ‘গুন্ডামী’, ‘ক্রাইম রোড’, ‘মাটির পরী’, ‘কাফেলা’সহ বেশ কিছু ছবি। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নাটকও পরিচালনা করেন। প্রথম নাটক ‘করাল থাবা’ এটিএন-এ প্রচার হয়। এরপর ‘আকবর ভাই ধরা খাইছে’, ‘সোনালী দিনের গল্প’সহ আরও বেশ কিছু নাটক নির্মাণ করেন তিনি। নির্মাণ করেন সমাজসচেতনতামুলক গল্প নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দৌড়’, ‘ব্যাখ্যা’, ‘নিরব কান্না’, ‘হিসেব নিকেশ’ এবং ‘স্যালুট’।
সায়মন তারিকের জীবনসঙ্গী জেসমিন আক্তার নদী। তিনিও একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। তাদের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। হাতে ছবি না থাকায় সংসারের প্রতিদিনে খরচ জোগাতে হচ্ছে ধার-দেনা করে। অন্য কোন কাজ করেও তো সংসার চালানো যায়। ‘কী করবো বলেন, আমি তো ছবি নির্মাণ ব্যতীত অন্য কোন কাজ শিখি নাই’,— বলেন সায়মন।
সারাবাংলা/এজেডএস