ওমর সানী-জায়েদ খান তর্কাতর্কি, চড়, পিস্তল ঠেকানো ইস্যুতে সরগরম বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। এ নিয়ে দু’জনেই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। সেটি এবার গড়াল লিখিত অভিযোগে। শিল্পী সমিতিতে জায়েদের বিরুদ্ধে সেই লিখিত অভিযোগে ওমর সানীর দাবি, তার সঙ্গে মৌসুমীর সংসার ভাঙার চেষ্টা করছেন জায়েদ খান!
শনিবার (১১ জুন) রাত থেকেই ‘টক অব দ্য ঢালিউড’ ওমর সানী-জায়েদের এই দ্বন্দ্ব। এর জের ধরে ওমর সানী যে লিখিত অভিযোগ দিতে যাচ্ছেন, রোববার (১২ জুন) বিকেলেই সে তথ্য জানিয়েছিল সারাবাংলা। রাতে সেই অভিযোগটিই দিয়েছেন ওমর সানী।
শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বরাবর দেওয়া অভিযোগপত্রে ওমর সানী বলেন, ‘আমি ওমর সানী এই সমিতির একজন সদস্য এবং সাবেক কমিটির সহসভাপতি ছিলাম। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সমিতির সদস্য জায়েদ খান গত চার মাস ধরে আমার স্ত্রী আরিফা পারভীন জামান মৌসুমীকে হয়রানি ও বিরক্ত করে আসছে। আমার সুখের সংসার ভাঙার জন্য বিভিন্ন কৌশলে তাকে হেয় করার চেষ্টা করে আসছে।’
সানী দাবি করেন, তিনি জায়েদ খানকে অনেকবার বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। মেসেজে দিয়েছেন বারবার। এর প্রমাণ তার ও তার ছেলের কাছে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুরুব্বি হিসেবে আমি ডিপজল ভাইয়ের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।’
ডিপজলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তুলে ধরে সানী বলেন, ‘ডিপজল ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে জায়েদ খানের সঙ্গে দেখা হলে এ বিষয়ে সংযত হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করি। এতে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং হঠাৎ করে তার পিস্তল বের করে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’
‘আমি মনে করি, এমন একজন পিস্তলধারী সন্ত্রাসী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য থাকতে পারে না,’— বলেন ওমর সানী।
জায়েদ কয়েকদিন আগে থেকেই মৌসুমীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন— এমন অভিযোগের কথা তুলে ধরেন ওমর সানি। এ কারণে তাকে মনে মনে খুঁজছিলেন বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছি রাত ৯টার দিকে। কথায় কথায় আমি জায়েদকে চড় দিয়েছি। আমি দেখেছি সে পিস্তল উঠিয়েছে। ওর কাছে তো লাইসেন্স করা পিস্তল আছে। ওই সময় রোজিনা, সুচরিতা, অঞ্জনা উপস্থিত ছিলেন। তারা দেখেছেন পুরো ঘটনা।’
এ বিষয়ে অবশ্য জায়েদ খানের ভাষ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, পুরোটাই মিথ্যা। সানী ভাই মাতাল ছিলেন। উনি অনুষ্ঠানে আসছিলেন। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। এরপর চলে গেছেন।
জায়েদ খানতে সানীর চড় দেওয়া এবং এর প্রতিক্রিয়ায় জায়েদের পিস্তল বের করা— দু’টি ঘটনার কোনোটিই অবশ্য স্বীকার করছেন না ডিপজল। তিনি বলেন, তাদের দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। চড় মারা বা পিস্তল বের করার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জায়েদ খান ও ডিপজলের বক্তব্যের বিপরীতে ওমর সানীর বক্তব্যের সমর্থনেই সুর মেলাচ্ছেন। তারা বলছেন, মৌসুমীর সঙ্গে জায়েদ খান খারাপ আচরণ করেছেন— এমন অভিযোগে জায়েদের ওপর ওমর সানী ভীষণ বিরক্ত ছিলেন। খারাপ ব্যবহার করার কারণে ডিপজলের কাছে বিচারও দিয়েছিলেন বলেও শুনেছেন। জবাবে ডিপজল বলেছিলেন, ‘থাক বাদ দাও। মারামারি করার দরকার নাই। সামনে জায়েদ আর মৌসুমীকে কোনো ডিস্টার্ব করবে না। মৌসুমীর কাছেও যাবে না।’— এমন কথাও বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তারা আরও জানান, ডিপজলের এমন সমাধান ওমর সানী মেনে নিতে পারেননি। ফলে তিনি নিজেই জায়েদ খানকে খুঁজছিলেন। ধরেই নিয়েছিলেন, ডিপজলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে জায়েদকে পাওয়া যাবে। তাই অনুষ্ঠানে ওমর সানী ঢুকেই জায়েদ খানকে চড় মারেন। তখন ডিপজলসহ চলচ্চিত্রের কয়েক অভিনয়শিল্পী সোফায় বসা ছিলেন।
ওমর সানী ও জায়েদের মধ্যে এমন তিক্ত সম্পর্ক অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০১৭ সালের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মৌসুমীকে নিয়ে করা জায়েদ খানের মন্তব্যে বেজায় চটেছিলেন ওমর সানী। এ নিয়ে দু’জনে পাল্টাপাল্টি নানা ধরনের বক্তব্য ও অভিযোগও করেন বিভিন্ন জায়গা। তবে কাকতালীয়ভাবে ২০২২ সালের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মৌসুমী ও জায়েদ খান একই প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন।