দিলীপ কুমার: হারিয়ে যাওয়ার ৩৬৫ দিন
৭ জুলাই ২০২২ ২০:০৫
দেখতে দেখতে একটা বছর অতিক্রান্ত। গত বছর ৭ই জুলাই প্রয়াত হয়েছিলেন বলিউডের ‘ট্রাডেজি কিং’ দিলীপ কুমার। সেদিনটা ছিল বুধবার- সাত সকালেই মন খারাপের খবর। না ফেরার দেশে চলে গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম আইকন দিলীপ কুমার। শেষ হয়ে গেল একটা যুগের। ছয় দশক দীর্ঘ ফিল্ম কেরিয়ারে মাত্র ৬৩ টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার। বলা হয়ে থাকে ভারতীয় ছবির ইতিহাসে কেবল একজন দিলীপকুমার-ই ছিলেন। একজনই থেকে যাবেন। স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ের সঙ্গে তার ‘পজ’ দিয়ে সংলাপ উচ্চারণের কায়দায় মুগ্ধ হয়েছিল প্রজন্মের পর প্রজন্ম। প্রায় ছয় দশকের কেরিয়ারে তাঁর অভিনীত বেশ কয়েকটি ছবি পেয়েছে ‘কালজয়ী’-র তকমা। জায়গা করে নিয়েছে ভারতীয় ছবির ইতিহাসের পাতায়। আসুন, ফিরে দেখা যাক প্রয়াত এই কিংবদন্তীর ‘দৌড়’-এর দিকে।
১৯৪৪-১৯৫০: ১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার ভাটা’ ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ দিলীপ কুমারের। কিন্তু একেবারেই চলেনি সেই ছবি। প্রথম হিট ছবি ‘জুগনু’ পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও তিন বছর। তারপরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ‘মেলা’, ‘আন্দাজ’, ‘দিদার’- একের পর এক সুপারহিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তিনি।
১৯৫১-১৯৬০: ১৯৫৫ সালে ‘দেবদাস’ সৃষ্টি করল ইতিহাস। পাঁচের দশকে রাজ কাপুর এবং দেব আনন্দের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে পাল্লা দিতে পেরেছিলেন একমাত্র দিলীপ কুমার। এরপর সালটা ১৯৬০। বক্স অফিস কাঁপিয়ে মুক্তি পেয়েছিল ‘মুঘল-এ-আজম’। এই ছবির সুবাদেই চিরকালের জন্য ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে নিজের জায়গা পাকা করে নিলেন দিলীপ কুমার। ছবিতে ‘রাজপুত্র সেলিম’-এর চরিত্রে তার তুখোড় অভিনয় আজন্মকাল মনে রেখে দেবেন দর্শকের দল। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই ছবি বলিউডের ইতিহাসে লাভের অঙ্কের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ছিল!
১৯৬১-১৯৭০: ১৯৬১ সালে নিজের প্রযোজনায় ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। নিজের প্রযোজনায় তৈরি সেটাই তার প্রথম ও শেষ ছবি। এই দশকেই একাধিক হলিউড ছবির প্রস্তাব পেলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৭ সালে পর্দায় প্রথমবার দ্বৈত চরিত্রে হাজির হলেন দিলীপ কুমার। ছবির নাম ‘রাম অওর শ্যাম’।
১৯৭১-১৯৮০: সাতের দশক মোটেই আহামরি যায়নি এই বিখ্যাত অভিনেতার। ততদিনে বয়স থাবা বসানো শুরু করেছে। রাজেশ খান্না, অমিতাভের মতো নতুন বলি-অভিনেতাদের ব্রিগেড জাঁকিয়ে বসে পড়েছে বলিউডে। ‘বৈরাগ’সহ একাধিক ছবি ফ্লপ করলে ১৯৭৬-১৯৮১ পর্যন্ত সাময়িকভাবে অভিনয় থেকে ‘ব্রেক’ নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৮১-১৯৯০: ১৯৮১ সালে রীতিমতো সাড়া জাগিয়ে ফিরে আসেন দিলীপ কুমার। সৌজন্যে, ‘ক্রান্তি’। অমিতাভ বচ্চন, বিনোদ খান্না, ঋষি কাপুরের মতো নয়া প্রজন্মের সুপারহিট তারকারা থাকলেও ‘মশাল’, ‘শক্তি’, ‘বিধাতা’, ‘কর্মা’ প্রভৃতি ব্লকব্লাস্টার ছবিতে নিজের অনবদ্য পারফরমেন্সের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দেন দর্শকদের কাছে আজও ‘দিলীপ ম্যাজিক’ অটুট।
১৯৯১-২০০০: ১৯৯১ সালে আরও এক বর্ষীয়ান অভিনেতা রাজ কুমারের সঙ্গে সুভাষ ঘাই পরিচালিত ‘সওদাগর’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। বলাই বাহুল্য সে ছবিও বক্স অফিসে সুপারহিট হয়েছিল। এরপর ১৯৯৬ সালে ‘কলিং’ ছবির মাধ্যমে নিজের পরিচালক সত্বাকে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। কিন্তু শেষমেশ তার সেই ইচ্ছেপূরণ হয়নি। বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছিল সেই ছবির কাজ। শেষবার বড়পর্দায় দিলীপ কুমার হাজির হয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। ছবির নাম ‘কিলা’। সেই শেষ। অভিনয় জীবন থেকে স্বেচ্ছাবসর ঘোষণা করেছিলেন হিন্দি ছবির কিংবদন্তী ‘দেবদাস’।
সারাবাংলা/এএসজি