সেন্সর পেলেও মুক্তি পায়নি একশ ছবি
২১ জুলাই ২০২২ ২১:৫৩
২০২০ এর জানুয়ারি থেকে এ বছরের আজকের দিন পর্যন্ত বাংলা ছবি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে ১৬০টি। এর মধ্যে ৯৫টি ছবি এখনও মুক্তির অপেক্ষায়। এর বাইরেও অনেক নির্মাণাধীন ছবি রয়েছে যেগুলো সেন্সর পেলে এ সংখ্যা হবে শতাধিক। এতগুলো ছবি কবে, কীভাবে সিনেমা হলে আসবে তা কেউ জানে না।
এত ছবি যেভাবে পাইপলাইনে
সেন্সর বোর্ডের গত তিন বছরের বাংলা ছবির ছাড়পত্রের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এ বছরের মার্চে রেকর্ড ৪৩টি বাংলা ছবি ছাড়পত্র পেয়েছে। বাংলা ছবিগুলোর সঙ্গে ৫টি ইংরেজি ছবি একই মাসে ছাড়পত্র পেয়েছে। এক মাসে কীভাবে ৪৮টি ছবি ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, তা বেশ প্রশ্ন সাপেক্ষ। এতে সঠিকভাবে ছবিগুলো না দেখে ছাড়পত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে।
এমনটা অবশ্য মানতে রাজি নন সেন্সর বোর্ডের সচিব মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিটা ছবি ভালো করে দেখেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। না দেখে ছাড়পত্র দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না।
বোর্ড সদস্য প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন ৪-৫টি করে ছবি দেখেছেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় সব সদস্য সব সময় উপস্থিত থাকতে পারেননি। বোর্ডের ১৬ জন সদস্যের মধ্যে ১০ থাকলেই তবে শো চালানো হয়েছে।
এত ছবি মুক্তির পাইপলাইনে আসার কারণ হিসেবে খসরু বলেন, ‘করোনার কারণে ২০২০ এ সাত মাস, গত বছরও কয়েক মাস সিনেমা হল বন্ধ ছিল। এছাড়া গেল দুই বছরের চার ঈদে হলে কোনো ছবি ছিল না। প্রকোপ কমার পরেও মানুষের মধ্যে করোনাভীতি থাকায় তারা সিনেমা হলে যাচ্ছিলো না। ফলে অধিকাংশ প্রযোজক ছবি মুক্তির সাহস পাচ্ছিলেন না। তাই এতগুলো ছবি জমে গেছে।’
ইতিবাচক না নেতিবাচক
‘বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। কারণ এতে করে আমাদের হল মালিকরা যে বলতেন তারা ছবি পাচ্ছেন না, সে অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। হলগুলো নিয়মিত ছবি পেলে ব্যবসা এমনিতেই হবে’,— বলেন খসরু।
পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘আপনি তালিকায় দেখবেন অনেক ওয়েব সিরিজ, টেলিফিল্মও সিনেমা হিসেবে সেন্সর ছাড়পত্র নিয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই হলে মুক্তি পাবে না। আর ছবি চলবে ছবির মেরিটে। এরপরও বলতে পারি এ ছবিগুলো মুক্তি পেলে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াবে। আর এগুলো চোখের পলকেই মুক্তি পেয়ে যাবে।’
হল মালিকরাও আশাবাদী। মধুমিতার কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের মতে, এবারের ঈদে ‘দিন দ্য ডে’ ও ‘পরাণ’ যেভাবে ব্যবসা দিয়েছে হল মালিকদের এ ছবিগুলোর মধ্য থেকে প্রতি মাসে এক-দুটা ছবিও যদি ব্যবসাসফল হয় তাহলে আর হিন্দি ছবি আমদানি করে সিনেমা হল বাঁচানো লাগবে না।
দ্রুতই মুক্তি দিতে চান প্রযোজকরা
সেন্সর পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ছবির প্রযোজক শাপলা মিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রযোজক অপূর্ব রায় জানালেন, তাদের ৩৭টি ছবি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। এর সবগুলোই তারা সিনেমা হলে মুক্তি দিবেন না। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেন্সর পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে যেগুলো সিনেমা হলে চালানোর মতো সেগুলোই শুধু হলে মুক্তি দিবো। এছাড়া বাকিগুলো বিভিন্ন ওটিটি ও টিভিতে মুক্তি দিবো। আমাদের নিজস্ব ওটিটি সিনেবাজ ও আইপি টিভি ভয়েস টিভি রয়েছে।’
‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’, ‘আশীর্বাদ’, ‘যাও পাখি বলো তারে’ নামে তিনটি ছবি ছাড়পত্র নিয়ে বসে আছেন পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। তিনি জানালেন, ইচ্ছে রয়েছে এ বছরই এ ছবিগুলো মুক্তির। এতদিন করোনাসহ নানাবিধ কারণে ছবিগুলো মুক্তি দেননি।
আবার ‘সাহস’ ছবিটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে গেল মাসে। এর পরিচালক সাজ্জাদ খান জানান, তার ছবির বর্তমান প্রযোজক চরকি। তারাই সিদ্ধান্ত নিবেন ছবিটি সিনেমা হলে মুক্তি দিবেন কিনা। এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।
মুক্তি নিয়ে জটিলতা হবে না!
এদিকে এতগুলো ছবি মুক্তির অপেক্ষা থাকায় অনেক পরিচালক-প্রযোজক মনে করছেন জটিলতা তৈরি হবে। তাদের মতে প্রতি সপ্তাহে প্রযোজক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী ২টির বেশি ছবি একসঙ্গে মুক্তি দেওয়া যায় না। তবে ঈদে এবং বিশেষ পরিস্থিতে সমিতি দুয়ের অধিক ছবি মুক্তির অনুমতি দেয়। সে হিসেবে এ ছবিগুলো মুক্তিতে লাগবে এক বছরের মতো। পাশাপাশি নতুন ছবিও যুক্ত হবে প্রতিনিয়ত। তখন অনেক ছবিকেই কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে কাঙ্খিত তারিখ পেতে।
তবে কোনো কারণে ছবি মুক্তির সাধারণ নিয়ম পরিবর্তন করা হবে না বলে জানালেন খোরশেদ আলম খসরু।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ২০ আগস্ট প্রযোজক সমিতির নির্বাচনের পরে হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। তবে যেই নির্বাচিত হোক না কেন, প্রাথমিকভাবে আমরা সপ্তাহে ২টার বেশি ছবির নিয়ম পরিবর্তন না করার পক্ষে। এমনকি ঈদে ছবি মুক্তির ক্ষেত্রে আমরা ছবি সংখ্যা নির্ধারণ করে দিবো এবং লটারির মাধ্যমে ঈদের ছবি নির্বাচন করবো।
যে ছবিগুলো মুক্তির অপেক্ষায়
২০২০ এ সেন্সর পাওয়া: আমি তোমার রাজা তুমি আমার রানী , The Grave (বাংলা চলচ্চিত্র ‘গোর’-এর ইংরেজি ভার্সন), হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী।
২০২১ এ সেন্সর পাওয়া: মায়ার জঞ্জাল, ও মাই লাভ, ডাইরেক্ট অ্যাটাক, ডেঞ্জার জোন, পরানে পরান বাধিয়া, ময়নার শেষ কথা, দ্য হিরো, আয়না, বিয়ে আমি করবো না, আজ একটি বিশেষ দিন, দুই ঘণ্টা দশ মিনিট, হৃদ মাজারে তুমি, স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা, সাহস, চরিত্র, জেদী মেয়ে, জীবন যন্ত্রণা, বাংলার দর্পণ, অমানুষ হলো মানুষ, বাসর ঘর, রোহিঙ্গা, মাফিয়া-২, মাফিয়া-৩, মাফিয়া-৪, কুড়া পক্ষীর শুন্যে উড়া, দায়মুক্তি, নদীর জলে শাপলা ভাসে, রৌদ্রছায়া, মাফিয়া-৫।
২০২২ এ সেন্সর পাওয়া: ইস্টিশন, মাফিয়া-৬, আজব কারখানা, ভাইয়ারে, অগ্নিবীণা, লাইভ, ইয়েস ম্যাডাম, সংঘাত, মাফিয়া-৭, বনলতা, যার নয়নে যারে লাগে ভালো, আশীর্বাদ, এক পশলা বৃষ্টি, অপুর বসন্ত, মাফিয়া-৮, ফেইসবুক, বিরোধ, কলিজাতে দাগ লেগেছে, আমার মন যারে চায়, কথা দিলাম, ৭১ এর একখণ্ড ইতিহাস, বুবুজান, যৌতুক, এবার তোরা মানুষ হ, বাঘবন্দী, লটারী, ঢাক বাজলো ঢাকায়, হৃদিতা, রাগী, কন্ট্রাক ম্যারেজ, স্বপ্নের রাজকন্যা, ২৪.৩ এর রাত, জ্বলছি আমি, প্রেমের কবিতা, আপন পর, শিকলবাহা, ২৪.৩ এর রাত-২, কাকু যখন কুমিল্লায়, না জেনে নারায়ণগঞ্জে, জয় হলো জয়দেবপুরে, চাঁদনী, লাভার প্রো-ম্যাক্স, বউ পাগল, বকা খেয়ে বগুড়ায়, দিনদুপুরে দিনাজপুরে, কলংক, হোলিগান, রোমান্টিক, কুস্তিগির, কুস্তিগির-২, প্রিয় সত্যজিৎ, যাও পাখি বলো তারে, পরী, চক্কর, বিউটি সার্কাস, আগুনে পোড়া কান্না, জীবন পাখি, রক্তজবা, বীরত্ব।
সারাবাংলা/এজেডএস