৮৯তম জন্মদিনে আশা ভোঁসলে
৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৪৫
‘আমার কোনও অনুশোচনা নেই। বেঁচে আছি এবং সবাই আমাকে ভালোবাসে, তাতেই আমি খুশি। আমি সৎ জীবন যাপন করেছি। ১০ বছর বয়সে প্রথম গান গাওয়ার পর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরে আমি খুশি। এই বয়সে এসেও আমি গান গাই। নিজের পায়েই দাঁড়িয়ে আছি। আর আমার পরিবারও খুব ভালো। ভক্তদের পরিবার আরও বড়। আর কী চাইতে পারি!’ গেল জন্মদিনে এমনই একটি অনুভূতি জানিয়েছিলেন ভারতীয় সংগীত জগতের কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী আশা ভোঁসলে। যার কাছে বয়স তার জীবনীশক্তিকে কাবু করতে পারেনি। তার চিরনবীন হয়ে থাকার মন্ত্র একটাই- ‘সামনের দিকে এগিয়ে চলা।’ বললেন, ‘জীবনে কোনও অনুশোচনা নেই। বেঁচে আছি, সবার ভালোবাসা পেয়েছি, এতেই খুশি।’
আজ ৮৯ বছরে পা রাখছেন এই কিংবদন্তি। ১৯৩৩ সালের এই দিনে ভারতের সঙ্গিল রাজ্যের (বর্তমান মহারাষ্ট্রে অবস্থিত) গৌড়ে এক সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আশা ভোঁসলে। তার পিতা দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি ভাষী গোমন্থক মারাঠা সমাজের সদস্য এবং মারাঠি সঙ্গীত মঞ্চের একজন অভিনেতা ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী। মাত্র নয় বছর বয়সে বাবাকে হারান আশা ভোঁসলে। বাবার মৃত্যুর পর তার পরিবার পুনে থেকে কোহলাপুর এবং পরে মুম্বাইয়ে চলে আসে। তিনি ও তার বড় বোন লতা মঙ্গেশকর তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য চলচ্চিত্রে গান গাওয়া ও অভিনয় শুরু করেন। চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার প্রথম সুযোগ পান ১৯৪৩ সালে মারাঠি ভাষায় নির্মিত ‘মাঝা বল’ ছবিতে। তার হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে অভিষেক হয় ১৯৪৮ সালে হংসরাজ বেহলের ‘চুনারিয়া’ ছবিতে ‘সাবন আয়া’ গানে কণ্ঠ প্রদানের মাধ্যমে। হিন্দি চলচ্চিত্রে প্রথম একক গান ছিল ১৯৪৯ সালে ‘রাত কী রানী’ ছবিতে।
‘এভারগ্রীন’ আশা ভোঁসলে প্রায় সাত দশক ধরে হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক গাইছেন। তিনি তার সঙ্গীত জীবনে মোট ৯২৫টিরও বেশি সিনেমায় গান গেয়েছেন। ২০টি বিভিন্ন ভাষায় ১২,০০০ এরও বেশি গান রেকর্ডিংয়ের জন্য ২০১১ সালে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার নাম। বলিউডে তার রেকর্ডের কাছে এখনো কেউ পৌঁছতে পারেননি। তবুও, জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তাকে দ্বিতীয় স্থানে মোকাবেলা করতে হয়েছিল। কারণ দীর্ঘ সময় বড় বোন ভারতীয় সংগীত জগতের আরেক কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের বিশাল ছায়ার মধ্যেই থাকতে হয়েছে তাকে।
প্রথম দিকে লতা মঙ্গেশকরের বোন হিসেবেই পরিচিতি ছিল আশা ভোঁসলে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় লতা মঙ্গেশকারের বহুজাতিক মহিমার বিপরীতে নিজের অত্যন্ত স্বতন্ত্র শৈলীকে তুলে ধরেছিলেন আশা। যার ফলে দীর্ঘদিন কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। আজ তিনি হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন শীতল ব্যক্তিত্ব হিসেবেই সর্বজন শ্রদ্ধেয়। শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি রকস্টারের মতো সঙ্গীত পরিবেশনাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। আজও তার যৌবনের প্রফুল্লতা দেখে, সহজেই ভুলে যাওয়া যায় যে ভোঁসলে আজ ৮৯ বছর বয়সে পা রাখলেন।
সারাবাংলা/এএসজি