‘চলচ্চিত্রে গ্রেডেশন এ মুহূর্তেই জরুরি মনে করছি না’
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:০৩
তিনি আসাদুজ্জামান নূর। অভিনয়ের ইনস্টিটিউট বলা যায় তাকে। ২০০১ সালে তার সাফল্যের পালে যোগ হয়েছে নতুন পরিচয়; হয়েছেন সংসদ সদস্য। ছিলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীও। সেই মানুষটি এবার কথা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে আলোচিত বিষয় গ্রেডেশন নিয়ে। বলেছেন, ‘গ্রেডেশনের বিষয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষরা যে কথা বলছেন, তা প্রয়োজন আছে। তবে আমি এ মুহূর্তে গ্রেডেশনকে খুব জরুরি বিষয় বলে মনে করছি না।’
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় বাংলাদেশের অভিনয় জগতের কিংবদন্তী আসাদুজ্জামান নূরকে পাওয়া গিয়েছিল দীপংকর দীপন পরিচালিত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির পোস্টার উন্মোচন অনুষ্ঠানে। সেখানে তিনি গ্রেডেশনসহ চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেন।
ওই অনুষ্ঠানে সেন্সর বোর্ড বাতিল করে গ্রেডেশন চালু করার দাবির বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চান সাংবাদিকরা। উত্তরে তিনি বলেন, ‘গ্রেডেশনের বিষয়টা আমাদের মাথায় রাখা উচিত। যেমন বোম্বের চলচ্চিত্রের দিকে যদি তাকাই, তাদের ছবিতে চুম্বন দৃশ্য এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমাদের দেশে আমাদের যে রুচিবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ—সেখানে এগুলো গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। সুতরাং, সেরকম কিছু সেনসেটিভ বিষয় তো আছেই, সেগুলোর কারণে গ্রেডেশন করা যেতে পারে। তবে বাঙালীর যে মন এবং মানস তাতে গ্রেডেশনের বিষয়টা এ মুহুর্তেই জরুরি বলে আমার মনে হচ্ছে না।’
‘হাওয়া’ ছবি নিয়ে মামলাকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন এ বর্ষীয়ান অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘শিল্পের একটা স্বাধীনতা আছে সারাপৃথিবী জুড়ে। সেটি হলো রাষ্ট্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে যেন ছবি তৈরি করা হয়। জনগণের স্বার্থবিরোধী কোনো বিষয় যেন চলচ্চিত্রে না থাকে। শিল্পীর যদি স্বাধীনতা না থাকে তাহলে সৃজনশীলতা বন্ধ হয়ে যাবে। পাখি নিয়ে যেটা করা হল সেটি আমার কাছে খুবই হাস্যকর মনে হল। শিল্পীরা স্বাভাবিকভাবেই প্রাণীর ব্যাপারে অনেক বেশি সংবেদনশীল। তারা তো প্রাণীকে নির্যাতন করতেই যাবেন না।’
সাম্প্রতিক সময়ে ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ দিয়ে দর্শক সিনেমা হলে ফিরছে। কিন্তু নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কিছু সমস্যার কারণে ইন্ডাস্ট্রি ওইভাবে দাঁড়াচ্ছে না। তাই তার কাছে জানতে যাওয়া হয়, দর্শককে সিনেমা হলে ফিরিয়ে আনার জন্য নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কিছু করার আছে কি না? তিনি উত্তরে একটা বিশ্বমানের ফিল্ম ইনস্টিটিউট করার উপর জোর দেন। তার ভাষ্যে, ‘যেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ফিল্ম সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জ্ঞান অর্জন করবে। সেখানে অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, যারা ক্যামেরায় কাজ করবেন, মেকআপশিল্পী তারা সবাই থাকবেন। অর্থাৎ সবগুলো বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।’
‘এর পাশাপাশি সিনেমা হল ও ভালো সিনেমা দরকার। আমি বলেছি সিনেমা দু’রকম হয় ভালো সিনেমা আর খারাপ সিনেমা। ভালো ছবির সংখ্যা বাড়াতে হবে।’
আমাদের দেশে বলা হচ্ছে শিল্পী সংকট। আসলেই কি সংকট? নূর বলেন, ‘শিল্পীর সংকট আছে বলে আমি মনে করি না। আমাদের সময়ে এত শিল্পী ছিল না। যতদিন যাচ্ছে শিল্পীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন যেটি দরকার সেটি হল— অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ।’
পাশ্ববর্তী দেশ ও সারাপৃথিবীজুড়েই প্রবীনশিল্পীদের প্রধান চরিত্রে রেখে ছবি নির্মিত হচ্ছে। আমাদের দেশে হচ্ছে না। এ নিয়ে অনেকটাই আক্ষেপ রয়েছে আসাদুজ্জামান নূরের। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীত্বের শেষে আমার কাছে ১৬টি স্ক্রিপ্ট আসল। যার অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধের সঙ্গে তরুণীর প্রেমের গল্প। যেগুলো হয়ত আমার রুচির সঙ্গে যায় না। অবশ্য নির্মাতা যদি গল্পে এ ধরনের সম্পর্কের জটিলতার বিষয়গুলো তুলে আনতে পারেন, তাহলে ভিন্ন কথা। আর আমার কথাই বাদ দেন, আবুল হায়াতের মতো এমন একজন অভিনেতাকে কি আমরা কাজে লাগাতে পারছি? অথচ পাশ্ববর্তী দেশে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মত অভিনেতা মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত কী অসাধারণ সব চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন।’
সারাবাংলা/এজেডএস/এসবিডিই