Wednesday 27 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মঞ্চে নতুনমাত্রায় হাছন রাজা


২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:২৩

খ ম হারূন ।।

আবারো মঞ্চ নাটকের সুদিন ফিরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও এখন নাটক দেখতে কম যাওয়া হয়। তারপরও এর মাঝে দেখেছি জামিল আহমেদ নির্দেশিত ‘রিজওয়ান’, তার আগে উল্লেখ করার মতো নাটক শাকুর মজিদ এর ‘মহাজনের নাও’ এবং গত ২০ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে দেখলাম ‘হাছনজানের রাজা’ নাটকের প্রথম প্রদর্শনী।

প্রথমেই নাটকটির নাট্যকার শাকুর মজিদ সম্পর্কে দু একটা কথা বলি। শাকুর যখন নাটক লেখেন তখন সে লেখার মাঝে থাকে তার শতভাগ একাগ্রতা। তিনি প্রথমে বিষয়টি নিয়ে প্রচুর ঘাটাঘাটি করেন। পড়াশুনা ও গবেষণার পাশাপাশি তিনি নতুন নতুন ফর্ম নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন, তারপর লিখতে বসেন। সে লেখা চলতে থাকে দিনের পর দিন। বছরের পর বছর। তারপর সে লেখা যখন শেষ হয় তখন তা হয়ে ওঠে অনন্য এক সাহিত্য। এ বছর শাকুর যখন ভ্রমণ সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পদক পান, তখন আমার মনে হয়েছে নাট্য সাহিত্যে তার অবদানের জন্য তার আরো বেশী সম্মাননা প্রাপ্য আছে। এক্ষেত্রে সমালোচকরা বলতে পারেন, তার নাটকতো মাত্র দুটো, দুটো দিয়ে আর কতটুকু বিচার বিবেচনা করা যায়। আমি বলতে চাই, একটি, দুটি বা তিনটি নাটক লিখে পৃথিবীতে অনেক নাট্যকার অমর হয়ে আছেন। শাকুর দুটি নাটক লিখে প্রমাণ করেছে নাটকে তার অসামান্য দক্ষতার কথা। শাকুর যদিও বেশ ক’টি টিভি নাটকও লিখেছে, কিন্তু টিভি নাটককে আমি নাট্য সাহিত্যের মধ্যে ধরতে রাজী নই। নাটকে সংলাপ, বিষয়বস্তু, চরিত্র নির্মাণ, সময় ও লোকেশন (টাইম ও স্পেস) এর ভিন্নমাত্রার উপস্থাপনা শাকুরের নাটকের বৈশিষ্ট্য। সেলিম আল দীন এর পর নাটকের এই বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনা শাকুরের নাটকে খুঁজে পাই।

বিজ্ঞাপন

এরকম একটি নাটক ‘হাছনজানের রাজা’কে মঞ্চে উপস্থাপন করার সাহস দেখিয়েছে নাট্য সংগঠন ‘প্রাঙ্গণেমোর’। আমি বিস্ময়ের সাথে নাটকটির মঞ্চায়ন দেখেছি। প্রতিটি মুহুর্তকে তারা ব্যবহার করেছে দক্ষতার সাথে। মঞ্চের প্রতিটি স্পেসকে তারা নতুন মাত্রা দিয়েছে। বার বার মনে হয়েছে শাকুরের এই নাটকটিকে শতভাগেরও বেশী ধারণ করেছে প্রাঙ্গণেমোর। এই সাফল্যের পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশী তিনি হচ্ছেন নাটকের নির্দেশক অনন্ত হীরা। আমি হীরার কাজ আগেও দেখেছি। এখন তিনি দেশের প্রথম সারির একজন নির্দেশক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

এই নাটকে পোষাক পরিকল্পনায় ভিন্নতা ছিলো। একই সাথে সেই সামন্ত রাজার সময় থেকে বর্তমান যুগের স্মার্টফোন ব্যবহারকারী তরুন-তরুনী। মাঝে মাঝেই আবার সেই আধুনিক চরিত্রকে সামন্ত যুগের সময়ে নিয়ে যাওয়া। বেশ জটিল সাধ্য কাজ ছিলো পোষাক পরিকল্পনা। আর এই জটিলতাকে অত্যন্ত সহজ সরল এবং আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করেছেন নাটকের কস্টিউম ডিজাইনার নূনা আফরোজ।

নাটকের মঞ্চকে বেশী জটিল করা হয়নি। সিলেট জেলার হাওড় অন্ঞ্চলের বিশালতাকে এক সরল ও বক্র রেখায় উপস্থাপন করেছেন মঞ্চ নির্দেশক ফয়েজ জহির। আর তার এই অপূর্ব মঞ্চকে আলো আঁধারে সমৃদ্ধ করেছেন আলোক নির্দেশক তৌফিক আজিম রবিন।

হাছন রাজার নাটকে তার গানের একটা প্রভাব তো থাকবেই। মঞ্চে তাই সংলাপ আর গানের এক মেলবন্ধন ছিলো। সংগীত পরিকল্পনায় রামিজ রাজু দর্শকদের মনে সেই মেলবন্ধন রচনা করতে পেরেছেন।

আমি প্রাঙ্গণেমোর এর সকল শিল্পী ও কলাকুশলীকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাবো, এরকম একটি প্রযোজনার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য। কারণ পুরো নাটকটির মাঝে অসমান্য একটি টিমওয়ার্ক আমি লক্ষ্য করেছি। কেউ কাউকে ঠেলে এগিয়ে যেতে চায়নি। মন্ঞ্চ নাটকে যা একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। তবে হাছন রাজা চরিত্রে রামিজ রাজু নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন এক উচ্চ মাত্রায়। একই সাথে আমি অন্য অভিনয় শিল্পীদের কথাও উল্লেখ করতে চাই। আউয়াল রেজা, সানজিদা সরকার, সুজয় দাশগুপ্ত, মাইনুল তাওহীদ, নিরঞ্জন নিরু, সাগর রায়, মনোয়ারা মান্নান, শুভেচ্ছা রহমান, সুমন মল্লিক, প্রকৃতি শিকদার, বাঁধন সরকার, সবুক্তগীন শুভ, রুমা আক্তার, জুয়েল রানা সহ একঝাঁক তরুন প্রাণ, তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। এভাবেই তারা যুক্ত থাকুক আমাদের নাটকের সাথে, মঞ্চের সাথে।

এখন মঞ্চে আরো বেশকিছু ভালো নাটক আছে, যেখানে দর্শক আসছে। হলভর্তি হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকেও দর্শকরা আসছেন নাটক দেখতে। মঞ্চ নাটকের এই সফলতা অনেকদিন পর আবারো ফিরে এসেছে বলে মনে করি। টেলিভিশন থেকে দর্শকেরা যখন চোখ সরিয়ে নিচ্ছে ভালো প্রযোজনার অভাবে, তখন মঞ্চ নাটক এগিয়ে যাচ্ছে একের পর এক উন্নতমানের প্রযোজনা নিয়ে।

খ ম হারূন : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

ছবি : সৈয়দ মুনজের বাবু ।। অলংকরণ : আবু হাসান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর