আধুনিক নির্মাণে উপভোগ্য পাঠান
২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১৭
খুবই এন্টারটেইনিং লাগলো পাঠান ছবিটা। ফুল অব অ্যাকশন, শাহরুখ-জনের দুর্দান্ত অভিনয়, সালমান খানের পাওয়ারফুল ক্যামিও, ডিম্পল কাপাডিয়ার হলিউডি পারফরম্যান্স। সবকিছুকে দারুণ ব্যাক আপকরেছে অত্যাধুনিক ক্যামেরাওয়ার্ক, হলিউড লেভেলের ভিজ্যুয়াল অ্যাফেক্ট, সাউন্ড অ্যাফেক্ট।
ছবির গল্পে আহামরি কোনো অভিনবত্ব নেই। প্রায় এই রকম প্লট নিয়ে বেশ কিছু সিনেমা হয়েছে বলিউডে-হলিউডে। শুধু প্রেজেন্টেশন আর সিনেমাটোগ্রাফি ছিলো ভিন্ন এবং আধুনিক।
মূলত বিরতির পর জমে ওঠা এই সিনেমায় এক কথায় অসাধারণ অভিনয় করেছেন শাহরুখ। নিজের চিরচেনা রোমান্টিক ও প্রেমিক প্রোফাইল থেকে বেরিয়ে এসে। ‘কিং অব রোমান্স’ শাহরুখ খানকে একেবারেই ভিন্ন চেহারায় দেখলো দর্শকরা। সিক্স প্যাক বডিতে সব ধরনের ফাইট অ্যাকশনে এত সুন্দর মানিয়ে গেছেন তিনি। মনেই হচ্ছিলো না একজন বর্ষীয়ান অভিনেতা৷ তাকে লাগছিলো বডজোর মধ্য তিরিশ বয়সী এক নায়ক। সবচাইতে বেশি যা চোখে লেগেছে খুব তার চেহারায় আবেগের অভিব্যক্তি অনেক কম ছিলো এই ছবিতে যা সাধারণত তিনি করে থাকেন অন্য সব ছবিতে এবং যা তার অভিনয় শক্তিমত্তার বড় অংশ। মূলত কণ্ঠের অভিব্যক্তি, ভারি কন্ঠে (হলিউড অ্যাকশন হিরোদের মতো) অভিনয়ের মাস্টারি দেখিয়েছেন তিনি পুরো ছবিতে।
নায়িকা দীপিকা পাড়ুকন সাফল্যের আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছেন এই ছবিতে আমার বিশ্বাস। এই সিনেমায় তার পারফরম্যান্স এক বাক্যেই বলতে পারি, তাকে বিশ্বসেরা অভিনেত্রী ও তারকাদের কাতারে তুলে দিয়েছে। নেগেটিভ রোলে জন আব্রাহাম ছিলেন ফিটেস্ট অব অল।
অতিথি অভিনেতা সালমান খানের কথা কী বলবো! পর্দায় তার এন্ট্রি হতেই হল ভর্তি ইন্ডিয়ান-পাকিস্তানি দর্শকরা হাততালি দিয়ে উঠলো একসঙ্গে। উল্লাসে চিৎকার দিলো কেউ কেউ। খুব বেশি সময় না থেকেও পর্দা কাঁপিয়ে গেছেন বলিউড ‘ভাইজান’৷
সিনেমার শেষ দৃশ্যটা ছিলো আমার দেখা সেরা দৃশ্য। সেরা সংলাপও শুনে ফেলেছি মনে হলো তখন।
দৃশ্যটা এমন- দায়িত্ব শেষ করে অভিনয় শেষে বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছেন শাহরুখ-সালমান দুই বন্ধু। শাহরুখ মুচকি হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘আর কত? তিরিশ বছর তো পার করে দিলাম (অভিনয়ে/নায়ক হিসেবে)। এখন বোধহয় থামা দরকার আমাদের। সালমান বললেন, ‘কে পূরণ করবে আমাদের জায়গা?’ তারপর দুজনে মিলে ‘একজন আছে/পারবে’ টাইপ বোঝাতে চাইলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসলে কাউকেই পেলেন না! শাহরুখ হালকা মুডেই হাসতে হাসতে শেষ করলেন এমনকিছু বলে, ‘কী আর করার আছে দোস্ত! সংসার তো চালাতে হবে। ফ্যামিলি চায় অন্যরা চায় যেহেতু ছাড়া যাবে না রে (হিরোগিরি চালিয়ে যেতেই হবে, অ্যাকশন সিন করে যতই পেইনকিলার নেই না কেন!)
আরেকটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না বললেই না৷ সারাজীবন যা দেখেছি পশ্চিমা বিশ্বের থিয়েটারে হিন্দি মুভি দেখতে গিয়ে তা হুবহু দেখিনি এই ছবির দর্শকদের মধ্যে। অন্য ছবিগুলোয় শেষ দৃশ্য দেখানো হতেই সিট ছেড়ে ওঠা শুরু করে হলের প্রায় অর্ধেক দর্শক। হাটতে শুরু করে গেটের দিকে। পর্দায় মিনিট দুয়েক ধরে কলাকুশলী আর প্রডিউসারদের নাম বসে বসে দেখার ধৈর্য্য থাকে না কারোরই। অথচ পাঠান মুভি শেষে একজনও উঠলো না চেয়ার ছেড়ে। সব নাম দেখানো শেষে যখন স্ক্রিন অন্ধকার হলো তখন হাততালি দিতে দিতে সবাই উঠলেন।
শেষ কথা, সিনেমায় যারা মেসেজ খুঁজতে যান, আর্ট ফিল্মের ম্যাটেরিয়াল খুঁজতে যান, এন্টারটেইনমেন্টের চেয়ে ‘পুরষ্কার পাওয়ার মতো কি না’ এইসব আতেল চিন্তাভাবনা যাদের মাথায় তাদের জন্য এই মুভি না৷ এই শ্রেনীর বুদ্ধিজীবীরা সিনেমা হলে না যাওয়াই ভালো। আড়াই ঘন্টা বাঁচবে তাদের।
লেখক: প্রবাসী সংবাদিক
সারাবাংলা/এজেডএস