বসন্তে ঝরে পড়া ফুল
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৩
২০১২ সাল, বসন্তের প্রথম দিন। বেলা তখর দুপুর হবার পথে। চারপাশ বাসন্তি রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে ততক্ষণে। প্রকৃতির সঙ্গে লাল হলুদ রঙে আগুন লেগেছে বসনেও। বসন্তের আগমনে বাগানের ফুলগুলো যেন আরও রঙিন হয়ে কুর্নিস করছিল ঋতুরাজকে। ঠিক সেই সময় অনেক ফুলের মাঝে ঝরে গেছে একটি ফুটন্ত ফুল। সেই ফুল হুমায়ুন ফরীদি। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেতার একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। ৬০ বছর বয়সে মারা যান তিনি। মঞ্চ, টেলিভিশন চলচ্চিত্রের এই জাদরেল অভিনেতার মৃত্যুদিনে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবর্তিত জয়ার পুরো লেখাটি অপরিবর্তিত তুলে দেওয়া হলো-
‘দু’দিন ধরেই ভাবছিলাম তার সম্পর্কে কিছু লিখব। মনের অখণ্ড অনুভূতিগুলো জড়ো করব। কিন্তু পারলাম না। সকাল থেকেই বার বার কিপ্যাডের ওপর অত্যাচার চলছে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল, এখনো গুছিয়ে লিখবার সাহস করতে পারলাম না। শুধু বার বার মনে হচ্ছে, হুমায়ুন ফরীদি ছয় বছর ধরে আমাদের সঙ্গে নেই?
জ্ঞানের ভাণ্ডার নিয়ে যিনি বিরাজ করতেন আমাদের চারপাশে, তার জ্ঞান ছয় বছর ধরে আমরা স্পর্শ করছি না? প্রকৃতির নিয়মে মানুষ চলে যায়। চলে যাবেই। কিন্তু অমরত্ব পান ক’জন? আমার মনে হয়, হুমায়ূন ফরীদি সেই গুটিকয়েক ক্ষণজন্মাদের একজন। তার দেহাবসান হলেও জীবনাবসান হয়নি।
তার জিয়নকাঠি ততদিন জ্বলবে, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন বাংলাদেশে মঞ্চ থাকবে, নাটক থাকবে, চলচ্চিত্র থাকবে। একজন অভিনয়শিল্পী সব মাধ্যমে দাপটের সাথে অভিনয় করতে পারেন না। সবার সে ক্ষমতা নেই। সীমাবদ্ধতা থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তবে হুমায়ুন ফরীদি পেরেছিলেন। কী মঞ্চে, কী টিভি নাটকে, কী চলচ্চিত্রে— একটা সময় ছিল তার নামে নাটক চলতো, চলচ্চিত্র চলত। এ কারণেই আমরা যারা অভিনয় করি তাদের আমি দুটি ভাগে ভাগ করতে চাই: সৌভাগ্যবান আর দুর্ভাগা।
আমার মনে হয় যারা হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে অভিনয় করবার সুযোগ পেয়েছেন, তারা সবচাইতে সৌভাগ্যবান অভিনয় শিল্পী। আমি সেই ভাগ্যবানদের একজন। এমন মহীরুহ যখন পাশে থাকতেন, নিজেকে তুচ্ছ মনে হতো। প্রতি মুহূর্তে ভাবতাম, আহা, কত কিছুই জানি না। পারি না। মানি না।
বড় শিল্পী হতে হলে যে বড় মানুষ হতে হয়, হুমায়ুন ফরীদি সম্পর্কে যত জেনেছি, তত বেশি অনুধাবন করেছি। একটা গল্প শুনেছিলাম। শীতকালে ফরীদি ভাই অনেক রাতে নিজের গাড়ি করে ফিরছিলেন। হঠাৎ বিজয় সরণি মোড়ে তিনি গাড়ি থামালেন। দেখলেন একজন অশীতিপর বৃদ্ধ ঠাণ্ডায় কাঁপছে। পরনে তার লুঙ্গি ছাড়া কিছুই নেই। ফরীদি ভাই সে সময় নিজের কোট আর শার্ট খুলে ঐ বৃদ্ধকে পড়িয়ে দিয়ে আসলেন। ফরীদি ভাই বাড়ি ফিরলেন খালি গায়ে।
এরকম আরো অসংখ্য ঘটনা আছে। স্মৃতি কথা আছে, যা এখন আমরা সবাই বলছি।
ফরীদি ভাই, আপনি কখনো নায়ক হতে চাননি। হতে চেয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু দেখুন, আজ এতদিন পরও আপনি আমাদের কাছে, সাধারণ মানুষের কাছে নায়ক হয়েই আছেন। এমন নায়ক ক’জন হতে পারে? অনেক অনেক ভালোবাসা, দোয়া আপনার জন্য। ওপারে নিশ্চয়ই ভালো আছেন। আমি অন্তত আপনার সেই ট্রেডমার্ক হাসির শব্দ শুনছি! এভাবেই ভালো থাকবেন, সবসময়।’
সারাবাংলা/এসবিডিই