Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশ স্বাধীন করে ফিরেছিলেন আজম খান

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩৩

বাংলাদেশের পপসঙ্গীত জগতের ‘গুরু’ আজম খান। এ দেশে ব্যান্ডসঙ্গীত প্রবর্তকদের অন্যতম তিনি। শ্রোতাদেরকে তিনি উপহার দিয়েছেন ‘বাংলাদেশ’ (রেল লাইনের ঐ বস্তিতে), ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’র মত বিখ্যাত সব গান। তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। প্রথম দিকে তিনি আব্দুল লতিফের গাওয়া গণসঙ্গীত গাইতেন।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালে আজম খানের বাবা আফতাব উদ্দিন খান সচিবালয়ে উর্ধ্বতন কর্মকতা ছিলেন। বাবার অনুপ্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধে যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বাবার কাছে যুদ্ধে যাবার অনুমতি চাইতে গেলে বলেছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন না করে ঘরে ফিরবি না’। আজম খান বাবাকে কথা দিয়েছিলেন। তিনিও দেশ স্বাধীন করে ফিরেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, তিনি পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান। আগরতলার পথে সঙ্গী হন তার দুই বন্ধু। তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের মেলাঘরের শিবিরে। সেখানে তিনি শহিদ জননী জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাফী ইমাম রুমীর কাছে এলএমজি, রাইফেল চালানোসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ সময়ে তার লক্ষ্য ছিল সেক্টর ২ এ খালেদ মোশাররফের অধীনে যুদ্ধে যোগদান করা।

আজম খান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ২১ বছর বয়সে। তার গাওয়া গান প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যোগাতো। যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেয়া শুরু করেন। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন।

বিজ্ঞাপন

এর কিছুদিন পর তিনি পুনরায় আগরতলায় ফিরে আসেন। এরপর তাকে পাঠানো হয় ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইন-চার্জ। আর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল খালেদ মোশাররফ।

ঢাকায় তিনি সেকশান কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন। আজম খান মূলত যাত্রাবাড়ি-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পান। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তার নেতৃত্বে সংঘটিত ‘অপারেশন তিতাস’। তাদের দায়িত্ব ছিল ঢাকার কিছু গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করার মাধ্যমে বিশেষ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হোটেল পূর্বাণী’র গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো। তাদের লক্ষ্য, ঐ সকল হোটেলে অবস্থানরত বিদেশিরা যাতে বুঝতে পারে যে দেশে একটা যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে তিনি তার বাম কানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যা পরবর্তীকালে তার শ্রবণক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটায়।

আজম খান তার সঙ্গীদের নিয়ে পুরোপুরি ঢাকায় প্রবেশ করেন ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। এর আগে তারা মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনীতে সংগঠিত যুদ্ধে পাক সেনাদের পরাজিত করেন

২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫০ সালে জন্ম আজম খানের। ২০১১ সালের ৫ জুন তিনি না ফেরার দেশে চলে যান ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে।

সারাবাংলা/এজেডএস

আজম খান দেশ স্বাধীন করে ফিরেছিলেন আজম খান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর