‘মনোলোক’ সেন্সরে আটকে রাখার অভিযোগ
২৩ মে ২০২৩ ১৭:১৯
নির্মাতা শহীদ রায়হান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন তার পরিচালিত ‘মনোলোক’ ছবিটি প্রায় চার মাস ধরে সেন্সরে আটকে রেখেছে। এখন পর্যন্ত সেন্সর শো না হলেও ছবিটির বিষয়বস্তু নিয়ে বোর্ড থেকে বেশকিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে তার কাছে। তিনি সেগুলো জমা দিলেও এখন পর্যন্ত তার ছবিটির কোনো শো অনুষ্ঠিত হয়নি। বোর্ড থেকে তাকে শুধু ‘জানাবো’ বলা হচ্ছে।
‘এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আমি ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দিই। ১৭ এপ্রিল বোর্ডের উপ-পরিচালক মো. মঈনউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ছবিতে ব্যবহৃত সংলাপে রাজনৈতিক যে তথ্য-উপাত্তগুলোর দালিলিক প্রমাণ জমা দেওয়ার জন্য বলে। সে পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত আর্টিকেল, গবেষণা রিপোর্টসহ মোট ৬৬৪ পৃষ্ঠার ৭৪টি ডকুমেন্ট জমা দেই। কিন্তু অদ্যাবধি তারা আমাকে কোনো কিছু আনুষ্ঠানিকভাবে আর কিছু জানায়নি। শুধু দেখছি, জানাবো বলছে’,— বলেন শহীদ রায়হান।
সেন্সর বোর্ডের বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, ছবিটি বোর্ডে এখনও প্রদর্শিত হয়নি। তাহলে কীভাবে বোর্ড জানলো তার ছবিতে কী আছে, কী নেই? তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ছবি প্রদর্শনীর বোর্ড কি ওই ছবি দেখতে পারে কিনা, আমি এ প্রশ্ন করতে চাই। একই সঙ্গে জানতে চাই কেনই বা আমার ছবিটি চার মাস ধরে আটকে রাখা হয়েছে?’
শহীদ রায়হানের অভিযোগের জবাব জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয় সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহর সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা জানান। তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের জন্য বলেন। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি যেহেতু সেন্সর বোর্ডের সদস্য না তাই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে পারছি না।’
বোর্ড সদস্য প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু জানান, তিনি ছবিটির ব্যাপারে পরিচালকের কাছ থেকে শুনেছেন। তারা এখনও ছবিটি দেখেননি এটা ঠিক আছে। তবে তিনি জানান, বোর্ড আনুষ্ঠানিক সেন্সর শোয়ের আগে ছবি পরীক্ষা করে—সাউন্ড কোয়ালিটিসহ অন্যান্য টেকনিক্যাল বিষয় ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য। তিনি বলেন, ‘এধরণের পরীক্ষা করা হয়, যাতে করে সেন্সর শোয়ের দিন কোনো যান্ত্রিক সমস্যা না হয়।’
সেন্সর বোর্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছবিটিতে ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড, মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী দেশের রাজনৈতিক গতিপথ, বাকশালসহ অন্যান্য এমন অনেক কিছু বিষয় এসেছে যা ‘সেন্সেটিভ’। তার ভাষ্যে, এ ধরণের ছবি তো ঐতিহাসিক দলিল হয়ে যাবে। ন্যূনতম ভুল যাতে না থাকে তাই আমরা তাই এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রয়োজনীয় দলিল চেয়েছি। এখন উনি যেগুলো জমা দিয়েছেন সেগুলো তো যাচাই বাচাই করতে সময় লাগে। আর বোর্ড আনুষ্ঠানিক সেন্সর শোয়ের আগে পরে সার্টিফিকেট দেওয়ার আগ পর্যন্ত অনেক বার ছবি দেখে, এটা নিরপেক্ষতার জন্য করা হয়।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অচেতন মনে লুকিয়ে থাকা রাজনৈতিক প্রবাহ এবং স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণে সংঘটিত ঘটনা প্রবাহের কাল্পনিক বিশ্লেষণ ‘মনোলোক’। ছবিটির কাহিনি নিয়ে এমনটাই বলছেন পরিচালক। তিনি বলেন, ঘটনার পিছনেও ঘটনা থাকে। আমরা তা বলার চেষ্টা করেছি, ওই মুহূর্তে ব্যক্তিগুলোর মনে কী চলছে তাও কল্পনায় দেখাতে চেষ্টা করেছি।
মনোলোকে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিপুণ আক্তার। জেনারেল ওসমানীর চরিত্রে আশরাফুল আশীষ, তাজউদ্দিন আহমেদের চরিত্রে এম এ বারী, খন্দকার মোশতাকের চরিত্রে এ কে আজাদ সেতু, মেয়র হানিফের চরিত্রে মাসুদ মহিউদ্দিন এবং ‘৭৪ এর দুর্ভিক্ষের বিখ্যাত বাসন্তির চরিত্রে সঙ্গীতা চৌধুরী এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত বিখ্যাত আদা চাচা রফিকুল ইসলামের চরিত্রে সমু চৌধুরী অভিনয় করেছেন। হাব মিডিয়া ইউকের ব্যানারে ছবিটি নির্মিত হয়েছে।
সারাবাংলা/এজেডএস