সাংবাদিককে নিষিদ্ধ করে প্রশ্নবিদ্ধ পরিচালক সমিতি
২৪ মে ২০২৩ ২০:০৭
চলচ্চিত্র সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তরকে এফডিসিতে নিজ নিজ সমিতির আঙ্গিনায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে পরিচালক সমিতি। তাদের এ সিদ্ধান্তে চলচ্চিত্র বিষয়ক বাকি ১৮ সংগঠনের সম্মতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন কাজী হায়াৎ। তবে এ ঘটনায় সমালোচনা হচ্ছে- পরিচালক সমিতি এ নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে কিনা?
যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ নিষেধাজ্ঞা তার অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিচালক রাজু চৌধুরী গেল ১০ মে রাতে অসুস্থ হয়ে কল্যাণপুর রাস্তায় পড়েছিলেন। সেখানে খবর পেয়ে সাংবাদিক আহমেদ সাব্বির রোমিও তাকে উদ্ধার করে এবং আহমেদ তেপান্তরকে বিষয়টি ম্যাসেঞ্জারে জানান। একইসঙ্গে তাকে অনুরোধ করেন পরিচালক সমিতির কাউকে একটু জানাতে। তখন তিনি সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমনকে কল দেন রাত দেড়টার দিকে। যদিও তিনি ফোনটি ধরেননি। পরবর্তীতে সমিতির উপ-মহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা রাত আড়াইটার দিকে সাড়া দেন এবং রাজু চৌধুরীর কাছে লোক পাঠিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরপর দিন তেপান্তর শাহীন সুমনকে কল করেন। তখন এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
পুরো ঘটনা ১১ মে আহমেদ তেপান্তর এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানান। এ স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে শাহীন সুমন পরিচালক সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে ১৬মে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে আহমেদ তেপান্তরকে সমিতি কর্তৃক বয়কট ও সমিতির সীমানার ভিতরে তার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। পরিচালক সমিতির এ সিদ্ধান্তে একমত প্রকাশ করেছে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ১৯ সংগঠন।
ঘটনাটি প্রসঙ্গে তেপান্তর বলেন,‘শাহীন সুমন মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এর আগে বহুবার তার সঙ্গে গভীর রাতে কথা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে আমি তাকে পরদিন ফোনে এ জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি প্রথমেই আমাকে চার্জ করেন, কেনো এত রাতে কল দিলাম? এরপর বলেন, কে কোথায় পড়ে থাকবে এটা তো সমিতির দেখার বিষয় না। এ কথার বিপরীতে আমি তাকে বলি, যেহেতু সংগঠনের সদস্য কার্ড দিয়েছেন তাই তাদের যে কোনো সমস্যায় পাশে থাকা আপনাদের সাংগঠনিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শাহীন সুমনের সঙ্গে পূর্ব পরিচয় ও সম্পর্কের হৃদতার জায়গা থেকে কথা হচ্ছিল। কিন্তু তিনি বেশ রেগে, খারাপ কিছু বাক্য বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমিও রেগে যাই। কিন্তু এটা তো পরিচালক সমিতি বা চলচ্চিত্রের অন্যদের সঙ্গে কিছু না। আমার স্ট্যাটাসেও তো এমন কিছু বলি নাই যার প্রেক্ষিতে এভাবে মিটিং করে তারা সিদ্ধান্ত নিবে।’
শাহীন সুমন অবশ্য ঘটনাটির বিস্তারিত বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘ইস্যুটা নিয়ে কথা বলার মত অবস্থায় নেই। এটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় চলে গেছে।’
‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে, না হলে আন্দোলন! ক্ষমা চাইতে হবে পরিচালক সমিতির বাচসাসের কাছে! সাংবাদিকের কাছে! তেপান্তরের কাছে!এগুলো কোনো কথা? মুর্খতা ছাড়া কিছু না এগুলো।’
সমিতির মহাসচিবের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তেপান্তরের প্রতি নিষেধাজ্ঞা বলে জানিয়েছেন পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন, ‘তেপান্তর আমাদের মহাসচিবের সঙ্গে উদ্ধত্যপূর্ণ ও খারাপ আচরণ করেছেন। তাই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাকি ১৮টি সংগঠনও আমাদের সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়ে তাকে বয়কট ও তাদের আঙ্গিনায় প্রবেশ নিষেধ করেছে।’
মহাসচিব কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি বলে স্বীকার করেন কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন, ‘তিনি অভিযোগ করেছেন। আমরা তার কথায় পূর্ণ বিশ্বাস করেছি।’
কিন্তু চাইলে তো তেপান্তরকে ডেকে বিষয়টি মিটমাট করা যেত। এমন প্রশ্নে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি সে এখন কোনো পত্রিকায় নেই। তাহলে কোন পত্রিকার সম্পাদককে তার নামে বিচার দিবো। তাছাড়া সে তো আমাদের সংগঠনের সদস্য না, তাকে কেনো ডাকবো?’
এখানে উল্লেখ আহমেদ তেপান্তর আজকালের খবরে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি বাচসাসের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে আছেন।
সহ-সাধারণ সম্পাদক রাহাত সাইফুল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাচসাস। রাহাত সাইফুল বলেন, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি আমরা একই অঙ্গনের। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। আমরা বসে এসব ভুল বোঝাবুঝির মিমাংসা করতে পারতাম৷ ব্যক্তিগত কথা কাটাকাটির বিষয়টিকে সাংগঠনিকভাবে নেয়া ঠিক হয়নি। একজন সাংবাদিকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে আমাদের সাংবাদিকদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে, পাশাপাশি পরিচালক সমিতিকেও ছোট করেছে। এই সিদ্ধান্তে আমরা বাচসাস এর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করেছি। আশা করছি সবার সুবুদ্ধির উদয় হবে। বয়কট খেলা বন্ধ করে সমাধানের পথ খোঁজার আহ্বান জানাচ্ছি। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে আমরা কঠিন সিন্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।
সংগঠনটির সভাপতি রাজু আলীম বলেন, ‘বিষয়টি এখন আর ব্যক্তি পর্যায়ে নেই। সাংগঠনিক তারা চিঠি দিয়েছে। আমরাও দিয়েছি। তেপান্তরের প্রতি দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর আমরা এ বিষয়টি তাদের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে বসবো।’
এদিকে চলচ্চিত্র সংবাদিকরা বলছেন, ১৯ সংগঠনের মধ্যে ২/১টি ব্যতীত অধিকাংশেরই স্থায়ী কোনো কার্যালয় নেই। তারা এফডিসি থেকে স্টাডি রুম হিসেবে ভাড়া নিয়ে সেটিকে স্থায়ী কার্যালয় বানিয়ে ফেলেছেন। সেক্ষেত্রে তাদের অফিসের অঙ্গিনায় অর্থাৎ এফডিসির সীমানায় কোনো সাংবাদিককে প্রবেশে তারা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে কিনা?
‘আমাদের তো ওই একটা দুর্বলতা। এটা নিয়ে সাংবাদিকদের এত মাতামাতির কী আছে? আর আমরা এখানকার স্টেক হোল্ডার। আমাদের সমিতি এখানে ছিল, আছে, থাকবে,’—বলেন কাজী হায়াৎ।
সারাবাংলা/এজেডএস