আজিজের সঞ্চালনায় নবনীতা, রূপা ও সোহেল শোনালেন ‘মাসুদ রানা’র গল্প
৩ আগস্ট ২০২৩ ১৫:১১
জাজের আবদুল আজিজ সাধারণত তার অফিসে ডাকেন। তবে এবার ডাকলেন নিজ বাসায়। নির্ধারিত সময় বুধবার (২ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টা। উপলক্ষ্য ৮৩ কোটি টাকা ব্যায়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’ নিয়ে আড্ডা।
আধ ঘণ্টা আগে গিয়ে আড্ডাস্থলে উপস্থিত। আবদুল আজিজ ও ছবিটির অভিনেতা সাজ্জাদ হোসেন নির্ধারিত সময়ে এসে উপস্থিত। কিন্তু তখনও এলেন না আলিশা ইসলাম ও জেসিয়া ইসলাম। তবে কিছুক্ষণ পরেই এলেন আলিশা। আর জেসিয়া তখনও রাস্তায় জ্যামে আটকা। বলে রাখা ভালো আলিশা করছেন ‘নবনীতা’, জেসিয়া ‘রূপা’ এবং সাজ্জাদ ‘সোহেল’ চরিত্রটি। আপাতত ‘রূপা’-র জন্য অপেক্ষা না করে আবদুল আজিজ শুরু করলেন ‘মাসুদ রানা’-র যাত্রার গল্প। নির্মাতা আসিফ আকবর ও ‘মাসুদ রানা’ এবিএম সুমন ছবির প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় ছিলেন না আড্ডায়।
আজিজ চলে গেলেন ২০১০ এ। তখন তারা জাজ মাল্টিমিডিয়া শুরু করেন। ছোটবেলা থেকে ‘মাসুদ রানা’র পাড়ভক্ত সিরিজের এমন কোনো বই নেই যে পড়েননি। সিনেমা প্রযোজনায় যখন নামবেন তখন সিদ্ধান্ত নিলেন সিরিজের ‘স্বপ্নের ভালোবাসা’ নিয়ে একই নামে ছবি নির্মাণ করবেন। এর গল্পকে ভেঙ্গে আবদুল্লাহ জহির বাবু চিত্রনাট্য প্রস্তুত করলেন। কিন্তু মাসুদ রানার সৃষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন ‘স্বপ্নের ভালোবাসা’ নামটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেন না। পরে অবশ্য একই চিত্রনাট্যে ২০১২ সালের ৫ অক্টোবর মুক্তি দেন ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবিটি।
এরপর এলো ২০১৭ সাল। এবার আর কাজী আনোয়ার হোসেন না করলেন না। অনুমতি দিলেন সিরিজের তিনটি বই ‘ধ্বংস পাহাড়া’, ‘ভারতনাট্যম’ ও ‘স্বর্ণমৃগ’ অবলম্বন ছবি নির্মাণের। একটা সময় জাজের সঙ্গে যুক্ত হলেন নির্মাতা আসিফ আকবর। দেশীয় পরিসরে নির্মাণের ভাবনা থেকে চলে গেলেন আন্তর্জাতিক পরিসরে।
শুরুতে ছবিটির প্রধান চরিত্রে এবিএম সুমনকে নিতেই চাচ্ছিলেন না আজিজ। তখন হলিউডের কাস্টিং টিম ও প্রযোজক-পরিচালকদের অনুরোধে তিনি তাকে নেন। আজিজ বলেন, ‘বাংলাদেশের রমনীরা নতুন করে সুমনের প্রেমের পড়বে। আর সে অসাধারণ অভিনয় করেছে। সিরিজের ভক্ত হিসেবে আমি মাসুদ রানাকে যেমনটা কল্পনা করতাম তেমনটাই পেয়েছি তার অভিনয়ে।’
৮৩ কোটির ছবি বলা হচ্ছে, কিন্তু এত বড় বাজার তো বাংলাদেশে নেই। বিষয়টি খোলাসা করলেন জাজ কর্ণধার। ‘আমাদের বক্স অফিস টার্গেট ৭০০ কোটি। এর মধ্যে নেট আয় টার্গেট ৩০০ কোটি। ইতোমধ্যে আমরা আমেরিকার একটি ওটিটির সঙ্গে ১০০ কোটি টাকায় রাইটস বিক্রির কথা বলে রেখেছি। এছাড়া নানা জায়গা থেকে আমরা আয় করবো। আর বাংলাদেশ থেকে আমাদের টার্গেট ৫ কোটি টাকা নেট আয়ের।’
আড্ডা শুরুরও আধ ঘণ্টা পরে এসে যুক্ত হলেন জেসিয়া। ‘জ্যামের কারণে’ দেরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করলেন। জেসিয়া, আলিশা ও সাজ্জাদ জানালেন ছবিটির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা দেড় বছর ধরে। করোনাকালীন তাদের এ প্রস্তুতিতে প্রতিদিন তিনজনকে গ্রুমিং সেশনে নিজে ড্রাইভ করে নিয়ে গেছেন আবদুল আজিজ। তারা ছয় মাসের অভিনয়ের ক্লাশ করেছেন অভিনেতা আবুল কালাম আজাদের কাছের। ফাইট শিখেছেন খসরুর কাছে।
নিজেকে ‘সৌভাগ্যবান’ মনে করা আলিশা বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি এত বড় সুযোগকে ঠিকমত কাজে লাগাতে। আর আমার মনে হয় না আমি অভিনয় ঠিকঠাক করি নি। কথা শুনি নি।’
ছবির গল্পের পুরোটা জুড়েই ‘মাসুদ রানা’। এমন গল্পে সাধারণত নায়িকাদের খুব একটা কিছু করার থাকে না। তবে ছবিটিতে অভিনয়ের এ বিষয়টি মাথায় ছিল না আলিশার। তিনি বলেন, ‘এত বড় একটা আন্তর্জাতিক ছবিতে যদি আমাকে ১ সেকেন্ড দেখাতো তাহলেও আমি মনে করতাম অনেক বড় সুযোগ আমার জন্য। সেখানে এত ভালো একটা চরিত্র করছি। বিসিআই এজেন্ট। অ্যাকশন থ্রিলার, প্রেম ভালোবাসার বাইরের গল্প। এটা নিয়ে অনেক এক্সসাইটেড।’
রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে মিডিয়ায় আসা সাজ্জাদ হোসেন ক্যারিয়ারের শুরুতে বিগ বাজেটের ছবি পাচ্ছেন। অভিষেকের আগ মুহুর্তের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বললেন, ‘অনুভূতি বলে প্রকাশ করার মতো না। ২০১৯ এ আমার রিয়লিটি শোয়ের শেষে জাজ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন থেকে তারা আশস্থ করেছে তোমার জন্য একটা কিছু আসছে, অপেক্ষা করো আসছে। এরপর থেকে আমি আর কোনো কাজ করি নাই। এক্সপেকটেশন অনেক উঁচু। হলিউডের অনেক নামী অভিনয়শিল্পীরা কাজ করেছেন তাই ভালো লাগছে আমাকে সারা পৃথিবীর দর্শকরা চিনবে।
দেশ বিদেশের অনেক বিখ্যাত অনেকেই অভিনয় করায় কিছুটা তো চাপ অনুভব করেছেন জেসিয়া ইসলাম। ‘চাপ তো ছিলোই। একই সঙ্গে কৃতজ্ঞ এরকম একটা ছবির অংশ হতে পেরে। চেষ্টা করেছি সঙ্গে মিলে কাজটা করতে। প্রথম দিকে একটু নার্ভাস ছিলাম। তবে আমরা অনেক বেশি পরিশ্রম করেছি কাজটা করতে গিয়ে। আশা করছি দর্শকরা পছন্দ করবে।’
জেসিয়া, আলিশা ও সাজ্জাদ এক বাক্যে জানালেন পুরো শুটিংয়ের সময়টা তার বেশ উপভোগ করেছে। পুরো একটা পরিবার হয়ে গিয়েছিলেন তারা।
করোনাসহ নানাবিধ কারণে ছবিটির শুটিং শেষ করতে দেরি হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে ২৫ আগস্ট। এক সঙ্গে বাংলাদেশ, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের হলে চলবে। ইংরেজিতে নির্মিত ছবিটি এ দেশের দর্শকদের জন্য বাংলা ডাব করা হচ্ছে।
কাজী আনোয়ার হোসেন ‘ধ্বংস পাহাড়’ ১৯৬৬ সালে শুরু করেছিলেন ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ। প্রথম এ দেশীয় গোয়েন্দা সিরিজ। জেমস বন্ডের আদলে লেখা এ চরিত্রটি নিয়ে প্রথম সিনেমা নির্মাণ করেন মাসুম পারভেজ সোহেল রানা ১৯৭৪ এ। সিরিজের ‘বিস্মরণ’-এর গল্প অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি সুপারহিট হয়েছিল সে যুগে। এরপর আর কেউ সে পথে হাঁটে নি। চার দশক পর জাজ মাল্টিমিডিয়া ২০১৮ সালে সিরিজের তিনটি গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’, ‘ভারতনাট্যম’ ও ‘স্বর্ণমৃগ’-এর কপিরাইট কিনে নেয়। যার মধ্যে ‘ধ্বংস পাহাড়’ অবলম্বনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’। হলিউডের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম যৌথ প্রযোজনা।
সারাবাংলা/এজেডএস