মুক্তি— শৈশবের চ্যালেঞ্জ জয়ের গল্প
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৬
সদ্য স্কুলে যেতে শুরু করা শিশু। এই বয়সে মা-বাবাসহ স্বজনদের সঙ্গে হেসে-খেলেই দিন কাটানোর কথা। কিন্তু আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এরকম শিশুদেরও মুখোমুখি হতে হয় নানা চ্যালেঞ্জের। কিন্তু সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে শিশুমনের সেসব সমস্যার কথা কাউকে বলতেও পারে না। এর প্রভাবে মানসিকভাবে চাপে পড়ে শিশুরা। তাদের মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে।
ছোট্ট শিশু ইর্নিকেও মুখোমুখি হতে হয়েছিল এমন সমস্যার। পারিবারিক কারণে সৃষ্ট সেসব সমস্যার কথা সে-ও কাউকে বলতে পারছিল না। তার হাসিখুশি ভরা শৈশব ম্লান হয়ে যেতে শুরু করে। কেমন করে ইর্নি সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এল? কেমন করে সে আবার আনন্দময় শৈশব ফিরে পেল?
এরকম গল্প নিয়েই চৈতালী সমদ্দার নির্মাণ করেছেন শিশুতোষ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুক্তি’। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছবিটি প্রদর্শিত হয়। প্রজন্ম ওয়েভ-এর ইউটিউব চ্যানেলে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় মুক্তি পাবে চলচ্চিত্রটি। এদিন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েও এটি প্রদর্শন করা হবে।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির গল্প নিয়ে নির্মাতা চৈতালী সমদ্দার বলেন, প্রতিটি মানুষকেই জীবনে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বড়রা সেসব চ্যালেঞ্জকে একভাবে মোকাবিলা করে। কিন্তু শিশুদের জন্য সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অনেক কঠিন। আমাদের গল্পের প্রধান চরিত্র শিশু ইর্নি (অভিনয় করেছে শিশুশিল্পী জায়ানা ইচ্ছেডানা) তার জীবনের এরকম সংকটের সময় পাশে পায় শিক্ষক শিহাব স্যারকে (শতাব্দী ওয়াদুদ)। বলা যায়, ইর্নির জীবনে মুক্তির দূত হয়ে আসেন শিহাব স্যার। তার ছোট্ট জীবনে মুক্তির দূত হয়ে আসেন ওই শিক্ষক। অনেকটা রবি ঠাকুরের ‘অচলায়তন’ নাটকের দাদা ঠাকুরের মতো। এ নিয়েই এগিয়ে গেছে গল্প।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অচলয়তন’ নাটক কেবল নয়, ‘সংকোচের বিহ্বলতা’ গান থেকেও অনুপ্রাণিত হয়েছেন চৈতালী সমদ্দার। এই গানে রবি ঠাকুর লিখেছেন, ‘সংকোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান।/ সংকটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ।/ মুক্ত করো ভয়, আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।’ সংকট এলে ভয় না পেয়ে সংকোচ ভুলে নিজের শক্তিতে সব সংকট জয় করার যে আহ্বান বিশ্বকবি দিয়েছিলেন, তারই বার্তা দিতে চেয়েছেন নির্মাতা চৈতালী। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে সমাজকে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে পারব।
ইর্নি চরিত্রে অভিনয় করেছে জায়ানা ইচ্ছেডানা। অন্যদিকে শিহাব স্যারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির বাকি শিল্পীরা সবাই থিয়েটারকর্মী। চৈতালী সমদ্দার বললেন, জায়ানা এই প্রথম অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে কাজ করলেও চমৎকার অভিনয় করেছে সে। শতাব্দী ওয়াদুদও বরাবরের মতোই দারুণ অভিনয় করেছেন।
ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে চৈতালী সমদ্দার চলচ্চিত্র সম্পাদনায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেছেন বিখ্যাত সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে। পেশাদার ভিডিও সম্পাদক হলেও তিনি বেশকিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তার নির্মিত ‘পেশেন্স’, ‘সি ইউ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। ‘মাগফিরাত’, ‘মরিয়ম’ নামে আরও দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য তিনি নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ফিল্ম ইনস্টিটিউটে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে আছেন।
‘মুক্তি’ মূলত প্রজন্ম ওয়েভের তৃতীয় সিজনের আটটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের একটি। ময়ূখ বারীর ‘সন্ধি’ ও জাহিদ প্রীতমের ‘ঘ্রাণ’ নামে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে। ‘মুক্তি’ স্বল্পদৈর্ঘ্যটি মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। বাকি পাঁচটি চলচ্চিত্র হলো— মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘সাধের আয়োজন’, সাদাত হোসাইনের ‘রৌদ্রছায়া’, ফুয়াদ নাসিরের ‘কয়েকটি ধ্রুবতারা’, আজাদ আবুল কালামের ‘বংশের বাতি’ এবং চৈতালী সমদ্দারেরই আরেকটি চলচ্চিত্র ‘একদিন ভাইরাল নমিতা’।
প্রজন্ম ওয়েভের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের চলচ্চিত্রগুলো মানসিক স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, বিশেষভাবে সক্ষম শিশু, ধর্মীয় সম্প্রীতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবিষয়ক সচেতনতার মতো বিষয়গুলো নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গল্প আহ্বান করা হয়েছিল। সেই আহ্বানে জমা পড়া গল্প থেকে বাছাই করা গল্পগুলো নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই আটটি চলচ্চিত্র।
সারাবাংলা/এজেডএস/টিআর