এফডিসিতে সোহানের মরদেহ নিতে পরিবারের আপত্তি
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:১২
রীতি অনুযায়ী কোন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী, কলাকুশলী কিংবা সাংবাদিক যেই মারা যাক তার মরদেহ এফডিসিতে নেওয়া হয়। সেখানে তার সহকর্মীরা তাকে শ্রদ্ধা জানান, স্মৃতিচারণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে এফডিসিতে এ ধরনের আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সোহানুর রহমান সোহান। কিন্তু আজ তিনি না ফেরার দেশে। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঘুমের মধ্যে মারা গিয়েছেন তিনি। কিন্তু সে সোহানেরই মরদেহ এফডিসিতে নিতে দিতে রাজি নয় তার তিন কন্যা।
বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, আমরা প্রত্যেকে মিলে তার তিন কন্যাকে বুঝিয়েছি ব্যাপারটা। কিন্তু তারা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। তারা বলছে, তাদের মা নাকি মৃত্যুর আগে বলে গেছে সোহানের মৃত্যুর পরে তার মরদেহ যেন এফডিসিতে না নেওয়া হয়। তবে সোহান ভাই তার মরদেহ এফডিসিতে নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। এমনকি তারাও জানাতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, এরপরও আমরা প্রত্যকে মিলে তাদের বোঝাচ্ছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। দেখা যাক কী হয়। তারা রাতেই টাঙ্গাইল নিয়ে তাদের মায়ের পাশে সোহান ভাইকে কবর দিতে চান।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন সুমনও একই কথা জানালেন। তারা বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু পরিবার না চাইলে তো কিছু করতে পারি না। তবে আমাদের সদিচ্ছা ছিল।
শাহীন সুমন আরো বলেন, আজ (বুধবার) রাতেই তারা মরদেহ নিয়ে টাঙ্গাইল রওনা দিবেন। সেখানেই তাকে স্ত্রীর কবরের পাশে শায়িত করা হবে।
উল্লেখ্য সোহানুর রহমানের স্ত্রী মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে ১২ সেপ্টেম্বর মারা যান।
১৯৭৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আরেক বিখ্যাত পরিচালক শিবলী সাদিকের সহকারী হিসেবে। ১৯৮৮ সালে ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ দিয়ে নির্মাতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এছাড়া এজে মিন্টু, শহীদুল হক খানেরও সহকারী ছিলেন। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ তাকে পরিচালক হিসেবে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। এ ছবিতে অভিষেক হয় সুপারস্টার সালমান শাহ ও মৌসুমীর। তার হাত ধরে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছে হালের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান, ডন, শাকিল খানসহ অনেক অভিনেতা ও কলাকুশলীর।
দুডজনেরও বেশি ছবি পরিচালনা করেছিলেন সোহান। এগুলো হচ্ছে─ বিশ্বাস অবিশ্বাস, বেনাম বাদশা, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, আখেরি রাস্তা, বিদ্রোহী কন্যা, স্বজন, আমার ঘর আমার বেহেশত, আমার দেশ আমার প্রেম, মা যখন বিচারক, অনন্ত ভালবাসা, কিলার, সত্যের বিজয়, স্বামী ছিনতাই, বলো না ভালোবাসি, বৃষ্টি ভেজা আকাশ, কথা দাও সাথী হবে, আমার জান আমার প্রাণ, পরাণ যায় জ্বলিয়া রে, কোটি টাকার প্রেম, দ্যা স্পিড, সে আমার মন কেড়েছে, এক মন এক প্রাণ, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
সোহানু রহমান সোহান বেশ কয়েকবার চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে কাফন কাপড় পরে হিন্দি ছবি আমদানির বিরুদ্ধে হওয়া আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সবশেষ ২০২১-২৩ মেয়াদে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি ছিলেন তিনি। বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেডএস