জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। ছবিটি ১৩ অক্টোবর সারাদেশের ১৫৩টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে। দেশের ইতিহাসে কোনো ছবি প্রথম সপ্তাহে মুক্তির ক্ষেত্রে এটি একটি রেকর্ড।
তবে ঈদ ছাড়া এক সঙ্গে এতগুলো হলে ছবিটি মুক্তি পাওয়া নিয়ে অনেকের মনে নানা ধরণের আশঙ্কা ছিল। তাছাড়া এ মুহূর্তে চলবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। দেশের একটি চক্র বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নানা ধরণের কুৎসা রটিয়ে রেখেছে। কিন্তু সকল শঙ্কাকে মিথ্যে প্রমাণ করে হল মালিকরা জানাচ্ছেন ছবিটি চালিয়ে তারা খুশি। সকল শ্রেণীর দর্শকরা ছবিটি দেখছেন। তবে সবচেয়ে বেশি দেখছে তরুণ প্রজন্ম ও নারী দর্শকরা।
সিরাজগঞ্জের মিনি সিনেপ্লেক্স রুটস সিনে ক্লাবের কর্ণধার সামিনা ইসলাম নীলা। তিনি সারাবাংলাকে জানালেন, তার হলের বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পর্যন্ত অধিকাংশ শোয়ের টিকেট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তো সকল দল মতের উর্ধ্বের মানুষ। এটাকে শুধু একটা ছবি হিসেবে তো দেখা উচিত না। তরুণ প্রজন্ম যারা দেশের সঠিক ইতিহাস জানে না তাদের ছবিটি দেখা উচিত। এ ছবিতে তো বঙ্গমাতার দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু কেমন ছিলেন সেভাবে কাহিনি এগিয়েছে। আমাদের এখানে অনেক নারী দর্শক আসছেন। অধিকাংশ দর্শক একজন দেখে গিয়ে অন্যদের গিয়ে বলছে। তারা পরবর্তীতে পরিবার নিয়ে দেখতে আসছে।
অভিজাত সিনেমা হল স্টার সিনেপ্লেক্সের ৭টি শাখায় ২০টি শো চলছে ছবিটির। তবে দর্শক চাহিদার কারণে শো বাড়াচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
সিনেমা হলটির জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আজকে (১৫ অক্টোবর) থেকে ছবিটির একটি শো বাড়াচ্ছি সন্ধ্যার দিকে। মূলত দর্শকদের চাপে ছবিটির শো বাড়াচ্ছি আমরা।
আগামী সপ্তাহে শো বাড়বে কিনা? মেজবাহ বলেন, দর্শকদের চাহিদা থাকলে তো অবশ্যই বাড়াবো। ছবিটি মুক্তির আগে থেকে দর্শকরা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন কবে মুক্তি পাবে। অভিজ্ঞতা বলছে ছবিটি কমপক্ষে এক-দেড় মাস চলবে।
রাজধানীর আরেকটি সিনেপ্লেক্স ব্লকবাস্টার সিনেমাসের কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা যতটুকু আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি দর্শকরা ছবিটি দেখছে। অনেকে ভেবেছিলেন শুধু আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ছবিটি দেখবে। কিন্তু আমাদের এখানে ব্যাপারটি তেমন নয়। দলীয় নেতা কর্মীর বাইরে প্রচুর দর্শক ছবিটি দেখছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আসছে ছবিটি দেখতে। তাদের প্রত্যেকের চোখে মুখে আমরা তৃপ্তির চাপ দেখেছি। তারা আমাদেরকে বলেছে, এতদিন বই-পুস্তকে অল্প অল্প করে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনেছিলাম। ছবিটি দেখে তার অনেক কিছুই বিস্তারিত জানতে পেরেছি। তিনি যে কত বড় ও মহান নেতা ছিলেন তা এ ছবি দেখলে সবাই বুঝতে পারবেন।
তিনি জানান, তাদের হলে সন্ধ্যার দিকের শোগুলো হাউজফুল যাচ্ছে। আর সারাদিনের হিসেবেও দর্শক অনেক ভালো।
মতিঝিলে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সিনেমা মধুমিতা। হলটি কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ সারাবাংলাকে বলেন, ব্যবসায়িক দিয়ে যদি বলেন গেল ঈদের পরে যতগুলো বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে সেগুলোর তুলনায় অনেক ভালো যাচ্ছে ছবি। আমরা সন্তুষ্ট বলতে পারেন।
তিনি বলেন, আমি তো সবাইকে বলছি ছবিটি সকল শ্রেণীর মানুষদের দেখা উচিত। একজন মানুষ টুঙ্গিপাড়া থেকে এসে কীভাবে ভাষা আন্দোলনে জড়িত হলেন, কীভাবে বঙ্গবন্ধু হলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিলেন এর সব কিছু জানতে হলেও ছবিটি দেখা উচিত।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ সিনেমাটিতে দেশবিদেশের দুই শতাধিক অভিনয়শিল্পী অভিনয় করেছেন।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার পরিবেশনায় মুক্তি পেয়েছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ সিনেমাটির ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সময় জানানো হয়, এটি নির্মাণ করবেন বলিউডের নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। এর চিত্রনাট্যকার হিসেবে যুক্ত হন বলিউডের অতুল তিওয়ারি।
ঘোষণার সময়ই নিশ্চিত করা হয়েছিল যে, এই সিনেমার বেশিরভাগ শিল্পী বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হবে। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস ধরে অডিশনের মাধ্যমে বাছাই করা হয় শিল্পী। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের জন্য ১৫ জন শিল্পীর অডিশন নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচবার অডিশন শেষে আরিফিন শুভকে চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে দুবার অডিশন দিয়েছিলেন ভারতে, তিনবার বাংলাদেশে।
২০২১ সালে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এর শুটিং শুরু হয়। এতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুজন। কৈশোরের খোকা (বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলার ডাক নাম) হয়েছেন দিব্য জ্যোতি। আর তরুণ মুজিব থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে চরিত্র সেটি করেছেন আরিফিন শুভ।
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এ বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনজন। ১৩ বছরের আগ পর্যন্ত পর্দায় তার চরিত্রে দেখা যাবে একজন শিশুশিল্পীকে। কিশোরী বয়সী (১৩-১৭ বছর) চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। এরপর থেকে নুসরাত ইমরোজ তিশা।