আমার সঙ্গে যে থাকতে পারলো না, তার কপাল খারাপ: টিপু
১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ২২:২৬
খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
দেশীয় ব্যান্ড মিউজিকে আরও একটি দুর্ঘটনা। আরও একটি ভাঙ্গনের গল্প হলো তৈরি। অনেকেই এরইমধ্যে জেনে গেছেন- শিরোনামহীন ছেড়ে এসে তানযীর তুহিন নতুন ব্যান্ড গড়েছেন আভাস নামে। পাঁচজনের ওই নতুন ব্যান্ডে তিনজনই কিন্তু ‘অবসকিওর’-এর সাবেক সদস্য। ‘অবসকিওর’-এ ছিলেন রাজু (গিটার), রিংকু (ড্রাম) ও শাওন (কি-বোর্ড)। তারা ভিড়েছেন তুহিনের দলে, আভাস-এ। ফলে আশির দশকের ব্যান্ড ‘অবসকিওর’-এ এলো ভাঙ্গন। তবে এরই মধ্যে নতুন সদস্য নিয়ে লাইনআপ সাজিয়েছে ব্যান্ডটি। এ প্রসঙ্গ নিয়ে সারাবাংলার মুখোমুখি হলেন অবসকিওর-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ভোকাল সাইদ হাসান টিপু
রাজু-রিংকু-শাওন যে অবসকিওর ছাড়বে, এটা আগে থেকে জানতেন?
কিছুই জানতাম না। হঠাৎ করে দেখি ফেসবুকে পোস্ট! এদের নতুন ব্যান্ড হয়েছে!
কিন্তু ওরা অবসকিওর থেকে বেরিয়ে গেলো কেন? আপনার কী ধারণা?
আমার মনে হয় এদের যেটা হয়েছে, তুহিন শিরোনামহীনে নেই। এরা সবাই মিলে ইনকামের আরেকটা সোর্স করার হয়তো চেষ্টা করেছে। আসলে তারা (রাজু-রিংকু-শাওন) ওটাকে (আভাস) একটা খ্যাপ ব্যান্ড হিসেবে ট্রিট করতে চেয়েছে। কিন্তু সেটা একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডে থেকে হয় না। বাইরে মোটামুটি সবাই বাজায়। সলো আর্টিস্টের সঙ্গে বাজালে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডে থেকে আরেকটা ব্যান্ডে বাজাতে গেলে তো ঝামেলা হয়ে যায়। তাই না?
দল ছাড়ার পর ওদের সঙ্গে আর কথা হয়েছে?
ওই দিন (১৬ ডিসেম্বর) আমাদের শো ছিলো চিটাগং ক্লাবে। সকালের দিকে জানতে পারি বিষয়টা। তুহিনের ফেসবুক পোস্টে অবসকিওরের পেজকে ট্যাগ করেছে আমাদের এক ফ্রেন্ড। তারপর রাজু-রিংকু-শাওনকে জিজ্ঞেস করলে ওরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। আমার সামনে ওরা বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বলেছে, তুহিন ভাইয়ের সঙ্গে তো এ রকম কথা ছিলো না! তুহিনকে নাকি এরা বলেছিলো, অবসকিউওকে প্রায়োরিটি দিয়ে তাকে হেল্প আউট করে দেবে। কিন্তু তুহিন যেভাবে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে তো বোঝায় ওরা আলাদা একটা ব্যান্ড। আমি বললাম, তাহলে এখন কী সলুশন? তুহিনকে ফোন করে বলো। সেটাও বলছে না। তখন বুঝলাম, তারাও গিল্টি। বললাম, তাহলে তোমাদের তো আর ব্যান্ডে থাকার কোনো অপশন নেই। স্লামালেকুম। থ্যাঙ্কু ভেরি মাচ।
তার মানে আপনার বা অবসকিওরের বিরুদ্ধে তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই…
থাকার কথা না। এখনকার ছেলেপুলে তো! বয়স কম। এরা আসলে ব্যান্ডের মায়া-মমতাই বোঝে না। কিন্তু বোঝা উচিত ছিলো। বিকজ অবসকিওরের মেম্বর হিসেবে উই ট্রিট দেম ভেরি ডিফরেন্টলি। যাই হোক, আনফরচুনেট এরা আসলে। কিছুই বলার নেই।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এখন আপনার প্ল্যান কী তাহলে?
প্লান ভেরি সিম্পল। এ ঘটনা তো নতুন কিছু না। ইয়াং জেনারেশনের যে ছেলেপুলেকে নিয়েই চেষ্টা করেছি, সে-ই দেখি ক’দিন পরে বিগড়ে যায়। আমার সঙ্গে অলরেডি পুরনো মেম্বর বিনোদ, কি-বোর্ডে ছিলো, ও জয়েন করেছে। আসলে ওকে তো সারভাইভ করতে হয় ঢাকা শহরে। ফলে বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। এ ঘটনার পর ওর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিলো- যে বিনোদ, তুমি তো সময় দিতে পারছো না। আমরা নতুন কাউকে নিই। কারণ ব্যান্ডে অনেক সময় দিতে হয়। বিনোদ শোনামাত্র বললো, টিপু ভাই আমি তো আছি। টেনশন নেই। কি-বোর্ডিস্ট রেডি। ফলে বিনোদ ফিরলো। আর একটা ছেলে আছে দেশের বাইরে। ওর সঙ্গেও কথা হয়েছে। ও ড্রামার। ২৫-২৬ ডিসেম্বর দেশে এসে অবসকিওরে জয়েন করবে। ফয়সাল নামে আরেকটা ছেলে আছে। বেজ গিটারিস্ট। ওর সঙ্গেও আলাপ হয়েছে। এরা একটু বয়স্ক! এটলিস্ট এরা ব্যান্ডের ব্যাপারটা বোঝে।
এখন কনসার্টের মৌসুম। ভাঙ্গনের কারণে অবসকিওরের তো বেশ ক্ষতিই হয়ে গেলো!
এ ঘটনায় আমরা হয়তো একটা মাস পিছিয়ে গেলাম! ইভেনচুয়ালি এরা যখন ব্যান্ডটা করবে না বলে ভেবেছে, আলটিমেটলি এক বছর পরে হলেও ঘটনাটা ঘটতো! আসলে ব্যান্ড করতে যে স্যাক্রিফাইস দরকার হয়, এটা এদের মাথায় নেই। এরা করেনি তো কখনও। মানে একটা প্রপার ব্যান্ড রেডি করতে যে পরিমাণ এফোর্ট, যে পরিমাণ ডেডিকেশন দরকার; সেটা এদের মধ্যে কম। কিন্তু চেষ্টা তো আমি করেছি পারসোনালি।
ওরা খুব আনফরচুনেট। ওদের কপাল খুব খারাপ। কিছু করার নেই। কিন্তু আমি ওদের সাকসেস কামনা করি। ভালো করুক ভবিষ্যতে। আসলে হয়েছে কী, ফেসবুক আর রিয়েল লাইফ যে আলাদা এটা বোঝার ক্ষমতা এখনও এদের হয়নি। মানে ধরেন, হয়তো দেখেছে তুহিনের কোনো পোস্টে বিশ হাজার ত্রিশ হাজার লাইক পড়ে যায়। ওরা ভেবেছে এটা তো বিশাল ব্যাপার! এ জন্যই বলছি বাচ্চাবাচ্চা ছেলে তো! ওদের ওপর আমার কোনো রাগ নেই। আমার একটাই কথা, আমার সঙ্গে যে থাকতে পারলো না তার কপাল খারাপ।
তাহলে নতুন অবসকিওর কবে নাগাদ পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারবে?
বিনোদের পুরনো গান সবই তোলা আছে। ওকে কিছু নতুন গান তুলতে হবে। ড্রামারেরও মোটামুটি আমাদের গান সব জানা আছে। প্রস্তুতির জন্য আমি এক মাস ধরেছি। আসলে একমাস লাগবে না। আমরা যদি একটা ম্যারাথন প্র্যাকটিস দেই, তাহলে দিন পনেরোর মধ্যে রেডি হয়ে যাবো।
সারাবাংলা/কেবিএন