Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতীয় গণমাধ্যমের চোখে ‘মুজিব’

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপনডেন্ট
২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:০২

বাংলাদেশের পর ভারতে মুক্তি পেয়েছে ‘মুজিব: একটি জাতির একটি জাতির রূপকার’। ছবিটি দেশটির ১২টি অঞ্চলের ৫০৩টি সিনেমা হলে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) থেকে ৬৮২টি শো চলছে। ইতোমধ্যে দেশটির সকল শীর্ষ গণমাধ্যমে ছবিটি রিভিউ ছেপেছে। বেশিরভাগই প্রশংসা করেছে ছবিটির। তবে সমালোচনা করতেও ছাড়েওনি তারা।

টাইমস অব ইন্ডিয়াতে লেখা হয়েছে, “সিনেমাতে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কীভাবে ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিতে তার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, সেই সময়ের বলিষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতিতে: মহাত্মা গান্ধী, ফজলুল হক এবং সোহরাওয়ার্দীর বিষয়টি। তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা, উর্দু আরোপের বিরুদ্ধে লড়াই, ছয় দফা কর্মসূচি প্রণয়ন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জাতিকে পুনর্গঠনের প্রেরণা তিনি কোন বিষয়গুলো অনুপ্রাণিত করেছিল তাও লেখায় তুলে ধরে নির্মাণের প্রশংসা করা হয়েছে।

সেই লেখায় আরো বলা হয়েছে,“শেখ মুজিবুর রহমানের মতো ‘লার্জার দ্যান লাইফ’, ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে একটি বায়োপিক বানানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল একটি চেনা গল্পকে আবার বলে শেষ পর্যন্ত দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখা এবং সত্যতা বজায় রাখা। অতুল তিওয়ারি এবং শামা জাইদির চিত্রনাট্যে সিনেমার গল্প স্থিতিশীল গতিতে এগিয়েছে, আবেগপ্রবণও করেছে। মুজিব হিসাবে আরিফিন শুভ প্রশংসা পাওয়ার মতো কাজ করেছেন- আচরণ থেকে শুরু করে চেহারা পর্যন্ত সবকিছুতেই। চিত্রনাট্যে মুজিবের বেশ কিছু ঐতিহাসিক বক্তৃতা রয়েছে যেগুলো আরিফিন শুভ শেখ মুজিবুর রহমানের সিগনেচার স্টাইলে নেতাসুলভভাবে দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। স্ত্রী রেনু হিসেবে নুসরাত ইমরোজ তিশার কমান্ডিং পারফরম্যান্স আরিফিন শুভর মুজিব চরিত্রের সাথে দারুণ মানিয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিভিউতে আরও বলা হয়েছে সিনেমার দৈর্ঘ্য প্রায় তিন ঘণ্টা। থিয়েটারে বসে এতক্ষণ বায়োপিক দেখার আগ্রহ নাও হতে পারে। শ্যাম বেনেগালের প্রশংসা করে ওই সমালোচক লিখেছেন, ‘এত বড় একজন ব্যক্তিকে দর্শকের কাছে এনেছেন তার সমস্ত শক্তি ও দুর্বলতা সহ। চরিত্রটি আরও এগিয়ে নেয়ার খুব বেশি জায়গা ছিল না ছবিতে, তবে নির্মাতা একটি জাতির রূপকারকে দর্শকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন একজন দারুণ পিতা এবং একজন মানবতাবাদী হিসেবে।

পাঁচের মধ্যে দুই তারকা দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ‘সিনেমার সবচেয়ে প্রান্তবন্ত অংশগুলোর একটি ছিল ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী চরিত্র নিয়ে ভারত পাকিস্তান বিভাজিত হলে ১৯৪৮ সালে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্পর্ধা সহকারে বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা শুধুমাত্র উর্দু হবে এমন বক্তব্য প্রদান করে। এতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের টনক নড়ে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমান মিলে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন। দুই পাকিস্তানের মধ্যে আগে থেকেই ভঙ্গুর সংযোগের ফাটল আরও গভীর হয়।

রেনু ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশান্তির জায়গা, সেটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পারিবারিক দৃশ্যগুলো, বিশেষ করে যেখানে তাদের প্রিয় লেখক বারট্রান্ড রাসেলের উক্তিগুলো বলা হচ্ছিল, সেটিও সুন্দর।

ফিল্ম কম্পেনিয়নে অবশ্য বলা হয়েছে ভিন্ন কথা। প্রশংসার চেয়ে এই লেখাতে ‘মুজিব’ এর নানা বিষয় নিয়ে সমালোচনা করেছেন লেখক। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে এত বড় একজন নির্মাতার এমন সিনেমা দেখাটা হতাশাজনক’।

আরও বলা অয়েছে, ‘ছবির কসপ্লে-লেভেল পারফর্মেন্স, ভিজুয়েল ইফেক্টস, বাজে পরচুলা, উইকিপিডিয়ার-লাইটের মতো কাঠামো, প্রেস-রিলিজের মতো গল্প বলার ধরন, বর্ণনার ধারাবাহিকতার অভাব, ফিল্ম মেকিং-এর বেসিক বিষয়গুলোতে সমস্যা আছে।

পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ দৈনিক আনন্দ বাজারও ‘মুজিব’-কে সিনেমা হিসেবে ১০ এর মধ্যে ৫ নম্বর দিয়ে লিখেছে, ‘মুজিবকে জানতে বরং বাংলা সাহিত্যকে জানুন’। গৌতম চক্রবর্তীর লেখা ‘মুজিব’ এর ফিল্ম সমালোচনায় যা বলা হয়েছে তার মুদ্দা কথা হলো, মুজিব এর দৃঢ়তা, তেজস্বীতা বাংলা সাহিত্যির বিভিন্ন লেখাপত্রে যতো দুর্দান্তভাবে পাওয়া যায়, তা শ্যাম বেনেগালের এই সিনেমায় ততোটা নয়।

সেই ধারাবাহিকতায় গান্ধি, আয়রন লেডি, ওপেনহেইমার এবং অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড-এর মতো বিশ্বখ্যাত বায়োপিকগুলোর তুলনা দেয়া হয়েছে। গৌতম তার লেখায় বলছেন, এসব বায়োপিকের তুলনায় ‘মুজিব’ খুব পানসে! আর সে কারণে প্রকৃত মুজিবকে জানতে এই লেখক তার পাঠকদের সাহিত্যের দিকেই মনোনীবেশ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সারাবাংলা/এজেডএস

ভারতীয় গণমাধ্যম মুজিব: একটি জাতির রূপকার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর