সেদিন আমিও চিৎকার দিয়ে বলবো─মাই কিং ইজ ব্যাক
২ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:২৫
শাহরুখ খান আমার কাছে স্বপ্নের হিরো। দর্শককে আবেগদীপ্তভাবে সম্পৃক্ত করার ক্ষমতা খুব কম অভিনয়শিল্পীর থাকে। শাহরুখ খানের আছে। আমি সিনেমা দেখে কান্না করা মানুষ। আমি যদি এই পর্যন্ত সিনেমা দেখে ১০ বার কাঁদি তার ৬ বার কেঁদেছি শাহরুখ খানের অভিনয় দেখে। সেই অর্থে আমি শাহরুখ খানের এসি-ফ্যানেরও চেয়ে বড় হিসেবে। জোকস অ্যাপার্ট।
দুই দশক ধরে শাহরুখ খান দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছেন। সেই ‘ফৌজি’ থেকে শাহরুখ খানকে দেখে আসছি। শাহরুখ খানের স্ক্রিন প্রেজেন্স যাদুকরী। পর্দায় শুধু সে থাকলেই হয়। দর্শককে মাতোয়ারা করতে শাহরুখের কোন লার্জার দ্যান লাইফ অ্যাকশন সিন লাগতো না, খুব বড় বাজেট বাধা চকচকে সেট কিছুই লাগতো না। সর্ষে ক্ষেত আর ট্রেন স্টেশনেই অভিনয় করে পুরো উপমহাদেশের মানুষকে হাসানো-কাঁদানো-ভাবানোর ক্ষমতা ছিল তার। দিন বদলে গেল। মানুষ ক্রমশ অস্থির ও অসহিষ্ণু হতে শুরু করলো। মানুষের এখন বড় চমক-ধমক চাই। ড্রামা বা রেগুলার ফরম্যাটের অ্যাকশনের সিনেমা ফ্লপ করা শুরু করলো। পর পর চারটা সিনেমা ফ্লপের তকমা পেলেন শাহরুখ খান। তিনি বিরতি নিলেন। ফিরলেন বহুল বাজেটের সিনেমা ‘পাঠান’ নিয়ে। ব্লকব্লাস্টার হিট। হিটের নেশা চেপে গেছে তার। দক্ষিনী সিনেমার মশলা ব্যবহার করার জন্য দক্ষিণ ভারতের পরিচালক অ্যাটলিকে দিয়ে তৈরী করালেন ‘জাওয়ান’। সাথে ছিল দক্ষিনী সিনেমার পরীক্ষিত পুরনো অনুসঙ্গ-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি হওয়া অন্যায়ের রাজকীয় বদলা। এবার সফলতা আরো বেশি। অলটাইম ব্লকব্লাস্টার হিট। শাহরুখ খান এখন সফলতার জোয়ারে ভাসছেন। জন্মদিনে সবচেয়ে বেশি অভিবাদন পাবেন এবার, মান্নাতে ভীড় আরো বাড়বে। এই বছর যে তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে সফলতম।
শাহরুখ খানের পুরনো ভক্ত হিসাবে আমার হাহাকার একটাই─ বর্তমানে শাহরুখ খানকেও সুপারহিট সবার জন্য লার্জার দ্যান লাইফ মশলা ব্যবহার করতে হয়। লার্জার দ্যান লাইফ সিনেমা অনেকটা সমুদ্রে হাঙরের মত যা ছোট বড় অনেক মাছকে গিলে ফেলে। এই লার্জার দ্যান লাইফ সিনেরাম চক্করে পড়ে হলিউড তার মেধাবী পরিচালকদের সিনেমা হলে থেকে হারিয়েছে─তারা এখন নেটফ্লিক্স বা অ্যাপল টিভিতে। ভারতও হারাচ্ছে। বারেলি কি বারফি, আন্ধাধুন বা বারফির নির্মাতাদের পরের ছবি অনিশ্চিত─ওটিটিতে আসবে নাকি সিনেমা হলে আসবে? ১০টা সিনেমার বাজেট দিয়ে একটা সিনেমা তৈরী হচ্ছে। মানে বাকী ৯টা সিনেমা আর হচ্ছেই না। আর সেই বড় সিনেমাটা ফ্লপ হলে কোম্পানী বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লার্জার দ্যান সিনেমার আগ্রাসনে নতুন মেকার ওটিটির দরজায় দৌড়াচ্ছে─তাদের এত বাজেট দেবে কে? আমার হাহাকার সিনেমার বরপুত্র শাহরুখ খানকেও এই লার্জার দ্যান লাইফ সিনেমা পথে যেতে হলো। ঋত্বিক-জন-অজয় গেলে আমার খারাপ লাগতো না, সবাই তো যাচ্ছে। শাহরুখ খানেরই বা কি দোষ? তিনি তো ‘ডিয়ার জিন্দেগী’, ‘জিরো’, ‘রইস’, ‘ফ্যান’ করে দেখলেন। বুঝলেন রাজার আসন ধরে রাখতে হলে এই নতুন লার্জার দ্যান লাইফ সিনেমা পথে হাঁটতে হবে। যস্মিন দেশে যদাচার কাছা খুলে নদী পার। এই পথে শাহরুখ খান বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছেন─শাহরুখ সেটা চানও। কালজয়ী অ্যাক্টর হবার স্বপ্ন তার কখনোই ছিলনা। কিন্তু সম্ভাবনা ছিল। অন্তত ‘চাক দে ইন্ডিয়া’, ‘ডিয়ার জিন্দেগী’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘বীর জারা’, ‘স্বদেশ’ দেখার পর এটা বলতেই পারি তিনি আলি পাচিনো হতে পারতেন কিন্তু টম ক্রুজ হয়ে জীবন পার করে দিবেন।
কিন্তু আশাও আছে একটা আমার মত শাহরুখ খানের সলিড অ্যাক্টিং ফ্যানের মনে। সেটা শাহরুখের সিনেমার সংলাপ থেকেই─পিকচার আভি বাকী হ্যায় মেরে দোস্ত। হয়তো চারটা পরপর ফ্লপের পর শাহরুখ দেখাল সবাই দেখ চাইলে আমিও পারি। একটু স্রোতে গা ভাসালেই হয়। ‘ডানকি’ দিয়ে বা হয়তো নাম জানা সামনের আরো অনেক সিনেমা দিয়ে আবার সেই ম্যাজিকাল শাহরুখ ফিরে আসবে─যার চমক-গিমিক লাগেনা, শুধু অভিনয়ের ইমপ্যাক্ট আর যাদুকরী স্ক্রিন প্রেজেন্স দিয়েই আমাদের হাসায়-কাঁদায়, মাতিয়ে রাখে। সেদিন আমিও চিৎকার দিয়ে বলবো─মাই কিং ইজ ব্যাক।
শুভ জন্মদিন─প্রিয় শাহরুখ খান।
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা
সারাবাংলা/এজেডএস