Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চলে গেলেন ধ্রুপদী সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ওস্তাদ রশিদ খান

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:১৮

মাত্র ৫৫ বছরেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের একজন ওস্তাদ রশিদ খান। দীর্ঘ চার বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সে লড়াইয়ে ইতি টানতে হলো তাকে।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে রশিদ খান পশ্চিমবাংলার দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্রকে রেখে প্রয়াত হলেন তিনি।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত রশিদ খানের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে। পরে তার ইচ্ছাতেই তাকে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। গত কয়েকদিন ধরেই ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছিল তাকে।

রশিদ খানকে তার প্রজন্মের ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ শিল্পী মনে করা হয়। তিনি ছিলেন সংগীতগুরু ইনায়েত হুসেন খাঁ প্রতিষ্ঠিত রামপুরা-সহসওয়ান ঘরানার শিল্পী। এই ঘরানার শেষ জীবন্ত কিংবদন্তীও তাকেই বিবেচনা করা হতো।

১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে জন্ম ওস্তাদ রশিদ খানের। নিজের ওয়েবসাইটে রশীদ খান লিখেছেন, তিনি ভারতীয় সংগীত কিংবদন্তি মিয়া তানসেনের বংশধর। উত্তর প্রদেশে জন্ম হলেও পরিবারের সঙ্গে মাত্র ১০ বছর বয়সেই রশিদ খান কলকাতা চলে আসেন। তখন থেকেই তার বসবাস কলকাতায়।

সংগীত পরিবারে বেড়ে ওঠা রশিদ খানের সংগীতে হাতেখড়ি শৈশবেই। ওই সময় থেকেই হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতি তার অনুরাগ গড়ে ওঠে। ১১ বছর বয়সে প্রথম মঞ্চে গান করেন তিনি। তার প্রথম তালিম শুরু হয় নানা ওস্তাদ নিসার হুসেন খাঁয়ের কাছে। পরে মামা গোয়ালিয়র ঘরানার ওস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁয়ের কাছেও থেকেও তালিম নিয়েছেন। উস্তাদ আমির খান ও পণ্ডিত ভিমসেন যোশির মতো কিংবদন্তি শিল্পীরাও প্রভাব ফেলেছেন তার সংগীতচর্চায়।

বিলম্বিত খেয়াল পরিবেশনে এক অনন্য সুনিপুণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন রশিদ খান। গুরু নিসার হুসেনের মতো তারানা পরিবেশনেও তিনি ছিলেন অসামান্য। শাস্ত্রীয় সংগীতের শিল্পী হলেও তিনি বিভিন্ন ধরনের গানের ফিউশনের চর্চাও করেছেন। প্রখ্যাত ভারতীয় জ্যাজ শিল্পী লুইস ব্যাংককে নিয়েপশ্চিমা যন্ত্রসংগীতের সঙ্গে নিরীক্ষা করেছেন। নিজের ঢঙে রবীন্দ্রসংগীতও গেয়েছেন তিনি। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীত ও রাগসংগীতের নিরীক্ষামূলক যুগলবন্দির অ্যালবামও করেছেন। বলিউড ও টলিউডের চলচ্চিত্রে তার গাওয়া বেশকিছু গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

বিভিন্ন দেশেই শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন রশিদ খান। বাংলাদেশেও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টের একাধিক আসরে তিনি সংগীত পরিবেশন করেছেন। এ ছাড়াও আরও কয়েকবার এসেছেন বাংলাদেশে।

২০০৬ সালে সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার ও পদ্মশ্রী সম্মাননায় ভূষিত করা হয় রশিদ খানকে। পশ্চিমবাংলা সরকারও তাকে বঙ্গবিভূষণ সম্মাননা নিয়েছে। পরে ২০২২ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসরমরিক খেতাব পদ্মবিভূষণেও ভূষিত করা হয়।

রশিদ খানের প্রয়াণে ভারতীয় সংগীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সব ধরনের সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালকসহ সংগীতপ্রেমীরা শোক জানিয়েছেন। বলিউডের চলচ্চিত্র পরিচালক হ্যানসেল মেহতা টুইট করেছেন, ‘গভীর ক্ষতি। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতে আমাদের প্রজন্মের সম্ভবত সবচেয়ে বড় শিল্পীই বিদায় নিলেন।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও শোক জানিয়েছেন তার মৃত্যুতে। রশিদ খানের প্রয়াণের খবরে তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে বলেন, ‘রশিদ খানের মৃত্যু আমাদের দেশ এবং সংগীত জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি এখনো বিশ্বিাস করতেই পারছি না যে রশিদ খান আর বেঁচে নেই।’

বুধবার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রশিদ খানের মরদেহ রবীন্দ্র সদনে নেওয়া হবে বলেও জানান মমতা।

সারাবাংলা/এএসজি

ওস্তাদ রাশিদ খান চলে গেলেন ধ্রুপদী সঙ্গীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ওস্তাদ রাশিদ খান টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর