বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) হুট করে না ফেরার দেশে চলে যান শক্তিমান অভিনেতা আহমেদ রুবেল। তাকে শেষ বিদায় ও শ্রদ্ধা জানাতে মরদেহ আনা হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় সহকর্মীরা অশ্রুসিক্ত নয়নে তার স্মৃতিচারণ করেন।
ঢাকা থিয়েটারের উদ্যোগে লাশবাহী ফ্রিজারে করে সকাল ১১টা নাগাদ শিল্পকলা চত্বরে আনা হয় আহমেদ রুবেলের মরদেহ। গাড়ি থেকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে তার মরদেহ ঘিরে ধরেন সবাই। একে একে প্রত্যেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন অনুরাগী ও সহশিল্পীরা।
ঢাকা থিয়েটার ছাড়াও আহমেদ রুবেলকে শ্রদ্ধা নিবেদন জানাতে আসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপকমিটি, গ্রাম বাংলা থিয়েটার, অভিনয়শিল্পী সংঘ, সাংসদ ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস।
ঢাকা থিয়েটারের পক্ষে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ১৯৮৭ সালে রুবেল ঢাকা থিয়েটারের যোগ দেন। এরপর থেকে তিনি আমাদের সক্রিয় সদস্য। আজকের এই শ্রদ্ধা নিবেদন শুধু ঢাকা থিয়েটারের নয়, বরং তাকে বিদায় জানাচ্ছে দেশের সকল থিয়েটারকর্মী।
এসময় নির্মাতা মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, যতজন শেখ মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমার কাছে মনে রুবেলই পারফেক্ট ছিল। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলে কথা বলে শেষ করা যাবে না।
নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে যতজন শেখ মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছে আমার কাছে মনে হয় রুবেলই পারফেক্ট ছিল। চলচ্চিত্র নির্মাতা মতিন রহমান বলেন, রুবেলকে সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে, এমন পারফেক্ট অভিনয় কীভাবে হয়? হয়তো আমরা তাকে ভালোবাসি। কিন্তু প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসি না। হয়তো দূর থেকে রুবেলের কড়া সমালোচনা করেছি, তার কাছে গিয়ে হয়তো কেউ বলিনি রুবেল তুমি কাজ করো।
সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, আহমেদ রুবেল কখনো সস্তা জনপ্রিয়তার ধার ধারেননি। তিনি তার গুণ ও মেধা দিয়ে কাজ করেছেন। তার শিল্পী সত্তাকে কখনো বিক্রি করতে দেখিনি। এই হলো আহমেদ রুবেল। আসলে প্রকৃত শিল্পীদের আচরণ এমনই হওয়া উচিত। তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, ইন্ডাস্ট্রি মেধার জায়গা থেকে অনেক বামন। এ কারণে রুবেল ভাইয়ের মতো দরাজ কণ্ঠ এবং মেধাবী অভিনেতাকে হ্যান্ডেল করতে পারেনি। আমার সঙ্গে সর্বাধিক নাটক ও চলচ্চিত্রের তিনি অভিনয় করেছেন। প্রচুর আউটডোর শুটিং করেছি। আমি রুবেল ভাইকে কখনো দেরিতে শুটিংয়ে আসতে দেখিনি, কখনো দেখিনি তার জন্য কোনো শুটিং ইউনিট ফেঁসে গেছে। আসলে যে শুটিং ইউনিট ঠিক থাকতো না, সেখানে রুবেল ভাই ঠিক থাকতেন না। যারা বলছেন, রুবেল ভাই নিজেকে ধ্বংস করেছেন, আমি মনে করি এগুলো ভালোবাসা প্রকাশের নামে এক ধরনের অপপ্রচার। রুবেল ভাইকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল।আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যারা বেশি যোগ্য তাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হয়।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নূরুল আলম আতিকের ‘পেয়ারার সুবাস’ ছবির উদ্বোধনী শো’তে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো আহমেদ রুবেলের। শো’তে যোগ দিতে বসুন্ধরা শপিং মলের বেজমেন্টে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যান। সেখানে মাথায় পানি দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর পার্শ্ববর্তী স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে সন্ধ্যা ৫টা ৫৮ মিনিটে ডাক্তার আহমেদ রুবেলকে মৃত ঘোষণা করে জানায়, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে রুবেলের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আহমেদ রুবেলের মরদেহ রাখা হয় মোহাম্মদপুর মারকাজুলের হিম ঘরে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে তাকে মঞ্চ, নাটক ও থিয়েটার কর্মীরা তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শিল্পকলায় তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে চ্যানেল আইয়ের কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে আহমেদ রুবেলের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর চ্যানেল আই থেকে ‘বৃক্ষমানব’ খ্যাত অভিনেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুরে। সেখানে উত্তর ছায়াবীথি, জোড় পুকুরে আসর বাদ হবে অভিনেতা আহমেদ রুবেলের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা এবং দাফন।